সুন্দরবন ‘বিপদাপন্ন ঐতিহ্য’র তালিকায়!

70

‘বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র’ বন রক্ষায় বাংলাদেশের করা কাজে সন্তুষ্ট না হওয়ায় সুন্দরবনকে ইউনেস্কোর ‘বিপদাপন্ন ঐতিহ্য’ এর তালিকাভুক্তির সুপারিশ করেছে। এর ফলে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে সুন্দরবন, এ তথ্য জানিয়েছেন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি একথা জানান। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
লিখিত বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এর আগের দু’বছরে সুন্দরবন রক্ষায় তাদের করা কাজের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন ইউনেস্কোর কাছে পেশ করেছে। প্রতিবেদনটি একটি অপ্রকাশিত ও গোপন দলিল। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটির একটি কপির জন্য আবেদন করা হলেও এখনও তা পাওয়া যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি যে, বাংলাদেশের প্রতিবেদন পাওয়ার পর ইউনেস্কো ‘বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রে’র পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সুন্দরবন বিষয়ে একটি সুপারিশ প্রস্তুত করেছে, যা ‘বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি’র সভায় পেশ করা হবে।
এ বিষয়ে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র’ বন রক্ষায় বাংলাদেশের কাজে সন্তুষ্ট না হওয়ায় সুন্দরবনকে ইউনেস্কো ‘বিপদাপন্ন ঐতিহ্য’র তালিকাভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। সুন্দরবন বিষয়ে এই সুপারিশ যদি কমিটি চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করে, তাহলে সুন্দরবন তার বর্তমান ঐতিহ্যের সম্মান হারাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার নির্বিকার হলে তার ওপর চাপ প্রয়োগের লক্ষ্যে বনকে ‘বিপদাপন্ন তালিকাভুক্ত’ করার ইউনেস্কোর একটি পদ্ধতি রয়েছে, সুন্দরবন বিষয়ে তারা সেটি গ্রহণ করার চেষ্টা করছে। সুন্দরবন ও আশপাশের এলাকায় তথা সারাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণে বৃহত্তর বিবেচনায় আমরা মনে করি যে, ইউনেস্কো কেন্দ্র সঠিকভাবেই তাদের এই প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে। সরকার যেহেতু সুন্দরবন ও পরিবেশের প্রতি যতœশীল নয়, সেক্ষেত্রে বন রক্ষায় আমরা ইউনেস্কোর এই পদক্ষেপকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছি।’
রামপালসহ সব প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, ‘রামপাল ও বন বিধ্বংসী সব বিষয়ে সরকারের সব সিদ্ধান্তই বিজ্ঞানবিরোধী ও অযৌক্তিক। রাজনৈতিক বিবেচনা থেকেই এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হচ্ছে। সরকারি এধরনের আচরণ আজ সুন্দরবন ও বাংলাদেশের জন্য লজ্জাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আমরা চাই, সরকার তার ভুল অবস্থান থেকে সরে এসে রামপাল প্রকল্প বাতিল করুক, বনবিরোধী সব স্থাপনা উৎখাত করুক এবং বনের প্রাকৃতিক চরিত্রকে সংরক্ষণ ও বন সমৃদ্ধকরণের সঠিক পদক্ষেপ নিক।’
সংবাদ সম্মেলনে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য-সচিব ড. মো. আব্দুল মতিন, সদস্য এবিএম শামসুল হুদা এবং রুহিন হোসেন প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন।

সুইস ব্যাংকে কেন বাড়ছে
বাংলাদেশিদের টাকা?

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ এখন পাঁচ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা বা ৬১৭.৭২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ। এক বছরে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ বেড়েছে এক হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। আগের বছর আমানতের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৬৯ কোটি টাকা। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন কারণে সুইস ব্যাংকে আমানত বাড়ছে এবং বাড়ার বিষয়টিকে নেতিবাচক মনে করারও কারণ নেই। বরং এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশিদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়ার বিষয়টিও নির্দেশ করে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, তার মতে চার কারণে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা বাড়ছে।
প্রথমত, দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকা ও বিনিয়োগ বৈচিত্র্য আনতে অনেকেই বিদেশে টাকা নিয়ে যান। আর সেই টাকা হয়তো রাখছেন সুইস ব্যাংকে। নাজনীন আহমেদ মনে করেন, সুইস ব্যাংকে যে টাকা জমা হয়, তা মূলত ধনিদের জমানো টাকা। বাংলাদেশের বড় রকমের ধনি যারা সেখানে তাদের টাকা জমা হচ্ছে। আর প্রয়োজন অনুযায়ী, সেখান থেকে টাকা তুলে যখন তখন বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করা যাচ্ছে।
ড. নাজনীন আহমেদের মতে সুইস ব্যাংকে টাকা জমানোর দ্বিতীয় কারণ হলো, যাদের কাছে কালো রয়েছে তারা এদেশে ঘোষণা দিয়ে বিনিয়োগ করতে চায় না। ধারণা করা হয়, যিনি কালো টাকা বিনিয়োগ করবেন তিনি চিহ্নিত হয়ে থাকবেন। এতে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি দ্বারা হয়রানি হতে পারেন। অথবা সরকার পরিবর্তন হলে হয়রানির শিকার হতে পারেন। এ কারণে সুইস ব্যাংক নিরাপদ মনে করা হয়।
সুইস ব্যাংকে টাকা জমানোর তৃতীয় কারণ হলো, বৈধ পথে আয় করা টাকাও অনেকে বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজন যেমন, ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন দেশে পড়ালেখা করানোর জন্য সুইস ব্যাংকে টাকা রাখছেন। কারণ, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে যে ঝামেলা পোহাতে হয়, তা থেকে বাঁচতে অনেকে সুইস ব্যাংকে টাকা রাখছেন।
সুইস ব্যাংকে টাকা জমানোর চতুর্থ কারণ, দেশে বিনিয়োগ করার মতো আর কোনও যায়গা না থাকার কারণেও অনেকে সুইস ব্যাংকে টাকা রাখছেন। ড. নাজনীন আহমেদ উল্লেখ করেন, ‘এখন বাংলাদেশে একটি ধনিক শ্রেণি তৈরি হয়েছে। তারা দেশের ভেতরকার সব ধরনের সুযোগ ইতোমধ্যে নিয়ে ফেলেছেন। আর কোনও সুযোগ সুযোগ নেওয়ার কিছু নেই। ফলে অনেকে বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনতেও বিদেশে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। আর সেই টাকা রাখছে সুইস ব্যাংকে।’


এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফিন্যাশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিআইএফইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন সুইস ব্যাংকে টাকা জমা হওয়া মানেই খারাপ। আসলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বাণিজ্য বাড়ার কারণেও সুইস ব্যাংকে টাকা জমার পরিমাণ বাড়ছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘এই অর্থের সবই যে অবৈধভাবে সেখানে গেছে, তাও বলা যাবে না। তবে কেউ যদি টাকা সেখানে অবৈধভাবে নিয়ে থাকে, সেটা আমরা দেখবো। যেহেতু আমরা এগমন্ট গ্রæপের সদস্য। সেহেতু আমরা প্রয়োজনে তাদের চিঠি লিখবো।’ এর আগেও তাদেও কাছে বিভিন্ন ধরনের তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, সুইজ্যারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের তথ্য সাধারণত গোপন রাখে। সুইজারল্যান্ডে ব্যাংকের সংখ্যা ২৪৮। এসএনবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ৬১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ; বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পাঁচ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা।
সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী, নাগরিকত্ব গোপন রেখেছে, এমন বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থ এই হিসাবের মধ্য রাখা হয়নি। গচ্ছিত সোনা কিংবা মূল্যবান সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমানও হিসাবের বাইরে রাখা হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা ছয় বছর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়েছে। তবে ২০১৭ সালে কিছুটা কমলেও এবার আবারও বেড়েছে।