ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সুন্দরবনের সাড়ে চার হাজার গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নিরূপণ করেছে বাংলাদেশের বন অধিদপ্তর। গত ১০ নভেম্বর ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিবেগে প্রথমে ভারতে, পরে বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় আঘাত করে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। সুন্দরবনে আঘাত করার কারণে ঝড়টির গতি কমে যায় এবং লোকালয়ের ক্ষতির পরিমাণ কম হয়। ঝড়ের পরে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করার কাজ শুরু করে বন বিভাগ।
বন অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মঈনুদ্দিন খান বলেন, আমরা দেখতে পেয়েছি, ঝড়ে ৪৫৮৯টি গাছ উপড়ে পড়েছে। সুন্দরবনের দুইটি বিভাগের মধ্যে সবচেয় বেশি ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগে। তবে কোন বন্য প্রাণী মারা যাওয়ার তথ্য আমরা পাইনি।
তিনি জানান, পশ্চিম অংশে ক্ষতিগ্রস্ত গাছের মধ্যে রয়েছে গেওয়া, গড়ান, কেওড়া ইত্যাদি গাছ, যেগুলো নদী বা খালের পাড়ে হয়ে থাকে। আর পূর্ব অংশের ক্ষতিগ্রস্ত গাছের মধ্যে আছে রেইনট্রি, বাবলা, মেহগনি, অর্জুন ইত্যাদি গাছ।
পশ্চিম অংশের মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরা ও খুলনার বন আর পূর্ব অংশের মধ্যে রয়েছে বাগেরহাট ও বরিশালের বন।
কর্মকর্তারা বলছেন, আড়পাঙ্গাশিয়া ও শিবসা নদীর দুই পাড়ের গাছ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বড় জলোচ্ছ¡াস না হওয়ায় বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হয়নি বলে তারা মনে করছেন।
মঈনুদ্দিন খান বলেন, এসব স্থানে ছোট ছোট যেসব গাছ আছে, তা কয়েক বছরের মধ্যে বড় হয়ে যাবে। সুন্দরবনের যে ক্ষতি, তা প্রাকৃতিকভাবেই ঠিক হয়ে যাবে। এখানে আমাদের বাইরে থেকে কিছু করতে হবে না।
ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছ বনের ভেতরেই রেখে দেয়ার কথা ভাবছে বন বিভাগ। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত গাছের আর্থিক মূল্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এছাড়া বিভিন্ন ফাঁড়ি ও স্টেশনের জেটি, ওয়াচ টাওয়ারসহ অবকাঠামোর অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন কর্মকর্তারা।
সুন্দরবনের বিভিন্ন ফাঁড়ি ও স্টেশন তাদের আওতাধীন বনের জরিপ করেছে। সেসব তথ্য নিয়ে ক্ষয়ক্ষতির এই প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মঈনুদ্দিন খান বলছেন, অবকাঠামোগত ক্ষতি হওয়ায় আপাতত পর্যটকরা ভূমিতে নামতে পারছে না। তবে অনেকেই জাহাজে বা লঞ্চে করে বনে ঘুরছেন। অবকাঠামো ঠিক করতে সময় লাগায় পর্যটন ব্যবস্থা আপাতত সীমিত আকারে থাকবে।
তবে সীমিতভাবে এখন পর্যটকরা জাহাজে করে বনে যাতায়াত করতে পারছেন। তবে কটকা বা কচিখালির মতো পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় তারা এখন যেতে পারছেন না।