সীমান্ত করিডোরে করোনা শনাক্তকরণ হচ্ছে না!

55

গতকাল বৃহস্পতিবার; সময় তখন বেলা পৌনে ১২টা। সীমান্ত উপজেলা কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে ঢুকলে চোখে পড়ে মানুষের ভিড়। কয়েক’শ শ্রমিক মিয়ানমার থেকে আসা নোঙরে অর্ধশতাধিক কার্গো ও ছোট-বড় ট্রলার থেকে বাণিজ্যিক মালামাল খালাস করে দ্রুত গতিতে সরাসরি ট্রাকে লোড করছেন। এই বন্দরে সব মিলিয়ে সাতটি জেটি রয়েছে। এসব জেটিতে কাঠ, পেঁয়াজ, আচার ও শূটকিসহ বিভিন্ন পণ্য খালাসের ব্যস্ত ছিল শ্রমিকরা। সেখানকার অধিকাংশ শ্রমিক আবার রোহিঙ্গা। তবে মিয়ানমার থেকে কার্গো ও ছোট-বড় ট্রলারে করে আসা মাঝিমাল্লারা আগের মতো বের হতে, দেখা যায়নি।
গত ২৯ জানুয়ারি থেকে স্থলবন্দরে ডা. শুভ্র দেবের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণে কাজ করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এই মেডিকেল টিম এর তিন সদস্যরা পণ্য নিয়ে আসা মিয়ানমারের নাগরিক রাখাইন ও বার্মিজদের পল্টনে দাঁড় করিয়ে থার্মাল প্লাস দিয়ে পরীক্ষা করছিল। তবে বন্দরের নিরাপত্তা কর্মী, কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের গ্লাভস ও মাস্ক পড়তে দেখা যায়নি।
চিকিৎসক শুভ্র দেব বলেন, ‘গত ৪২ দিনে ১৬৩ জন মিয়ানমার নাগরিককে পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সন্দেহজনক কোনো রোগী শনাক্ত করা হয়নি। মূলত প্রথমে আমরা জানতে চাই, তারা কোনো ট্রাভেল করছে কিনা? পরে থার্মাল প্লাস দিয়ে পরীক্ষা করি। তারপর জ্বর-সর্দি, কাশি ও শরীরে বেশি তাপমাত্রা আছে কিনা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তিনি বলেন, সরাসরি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা জানার জন্য কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। তবে যে ব্যবস্থায় আমরা করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, এতে নিজেরাও ঝুঁকিতে রয়েছি’।
স্থলবন্দর ও কাস্টম সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় তিন বাংলাদেশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে সীমান্ত এলাকা কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে। সীমান্ত বাণিজ্যের আওতায় মিয়ানমারের সাথে টেকনাফ স্থলবন্দর ও করিডোরে বিভিন্ন পণ্য ও পশু বোঝাই জাহাজ ও ট্রলারের যাতায়াত রয়েছে। কিন্তু করিডোরের চেয়ে স্থলবন্দরে মিয়ানমারের মংডু, আকিয়াব ও ইয়াংঙ্গুন থেকে মালামাল বেশি আসে। তাই স্থলবন্দরেই কাজ করছে বাংলাদেশি মেডিকেল টিম। কিন্তু শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত শনাক্তকরণে কোনো কার্যক্রম নেই। এই করিডোরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে ছোট-বড় ৮টি ট্রলারে ৭’শর বেশি গরু-মহিষ এসেছে। এসব ট্রলারে প্রায় শতাধিক মিয়ানমারের নাগরিক রয়েছে। তবে তাদের কারো করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শনাক্তকরণের পরীক্ষা করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে গবাদি পশু আমদানী করিডোরের সভাপতি আবদুল্লাহ মনির বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আসা গবাদিপশু ট্রলারের মাঝিমাল্লাদের কূলে উঠতে দেওয়া হয় না। তারা গবাদিপশু নামিয়ে দেওয়ার পর পরই ফিরে যান। তারা এখানে রাত্রী যাপন করে না’।
স্থানীয়দের দাবি, করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রবেশ করেছে বাংলাদেশেও। ফলে সীমান্ত এলাকা হওয়ায় স্থলবন্দর ও করিডোরে সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা আরও জোরদার অত্যন্ত জরুরি। কারণ চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। ওই সীমান্ত দিয়ে চীনের পণ্য সরাসরি মিয়ানমারে আসে। এসব পণ্য ট্রলারে করে আনা হচ্ছে বাংলাদেশে।
জানতে চাইলে টেকনাফ স্থল বন্দর ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘করোনা ভাইরাস নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তাই আগের মতো মিয়ানমার থেকে আসা ট্রলারের মাঝিমাল্লাদের চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। এই পোর্টে প্রতিদিন একটি মেডিকেল টিম দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। তাছাড়া আগের তুলনায় মিয়ানমার থেকে মালামাল আসা কমে গেছে’।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীল বলেন, ‘স্থলবন্দরে করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণে মেডিকেল টিম প্রতিদিন মিয়ানমার থেকে আসা ট্রলারের মাঝিমাল্লাদের থার্মাল প্লাস দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। খুব দ্রুত শাহপরীর দ্বীপ করিডোরেও মেডিকেল টিম কাজ শুরু করবে। পাশপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি আইসুলেশন খোলা হয়েছে। তাছাড়া এই ভাইরাস সম্পর্কে জন সচেতনতা তৈরিতে কাজ করা হচ্ছে।