সীতাকুন্ড রেলগেটে স্থাপিত হর্ণ যেন নরক যন্ত্রণা

65

সীতাকুন্ড পৌরসভার কলেজ রোডে রেলগেইট সংলগ্ন রেলওয়ে স্থাপিত ২টি হর্ণের শব্দ দুষণে এলাকাবাসী অতিণ্ঠ হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে হর্ণের বিকট শব্দে গত ১৫দিনে প্রায় অর্ধ শতাধিক শিশু ও বৃদ্ধ হৃদরোগ সহ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এব্যাপারে এলাকাবাসীর পক্ষে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানালেও এটি বন্ধে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। এতে এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টি হতে পারে। জানা যায়, সম্প্রতি সময়ে সীতাকুন্ড স্টেশনের সংলগ্ন রেল গেইটে পাশে রেলওয়ে কর্তৃক ২টি হর্ণ পোস্ট লাগানো হয়েছে। যা আশ-পাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার জুড়ে হর্ণের বিকট শব্দ ছড়িয়ে পড়েছে। রেলওয়ে তথ্য মতে, প্রতিদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে এই লাইনে প্রায় ৩৫টির বেশি আন্তঃনগর. মেইল, লোকাল ও মালবাহী গাড়ি চলাচল করে। প্রতিদিন প্রায় ১৮ ঘন্টা হর্ন বাজে। অথচ রেল গেইট সংলগ্ন আশেপাশে এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক বসতঘর, বিভিন্ন সরকারি ও রেসরকারি অফিস, ১টি সরকারি হাই স্কুল, ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি কিন্ডার গার্ডেন কেজি স্কুল রয়েছে। রয়েছে দুটি মসজিদ। বিকট শব্দের কারনে এলাকার মুসল্লীদের নামাজ পড়তে সমস্যা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জুনিয়র শিক্ষা সমাপনি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া দিনভর শব্দ দূষণের ফলে এ এলাকায় জনসাধারণের শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া, উচ্চরক্ত চাপ, মাথাধরা ও অনিদ্রা সমস্যাসহ নানা রকম সমস্যার পড়তে হচ্ছে। এমনকি খুব কাছে থেকে হাইড্রোলিক হর্ন বাজলে আশপাশে মানুষের বধির হয়ে যাওয়ার জোরালো আশঙ্কা থাকে। হর্ণের বিকট শব্দে প্রতিনিয়তই শিশু, বৃদ্ধ, নারীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হর্ণের উচ্চ শব্দের কারণে এলাকার জনসাধারণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আবাসিকের বাসিন্দা মো. সাইফুল ক্ষোভের সহিত বলেন, হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার পিতা পৌরসদরে চিকিৎসা নিতে এসে মাথায় যন্ত্রণা নিয়ে ফিরছি। হর্নের শব্দ যেন মগজে ঢুকে আছে। স্বাস্থ্যে শব্দের প্রভাব শীর্ষক এ প্রবন্ধে বলা হয়, আচমকা শব্দে (ইমপালস সাউন্ড) ও দীর্ঘ মেয়াদে উচ্চ শব্দের (৭৫ থেকে ৮৫ ডেসিবেল) মধ্যে থাকলে মানুষ শ্রবণক্ষমতা হারাতে পারে। কারণ, এতে কানের কোষ (সেল) মারা যায়। কানের কোষ মারা গেলে তা মনোযোগের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এই কোষ নতুন করে আর তৈরি হয় না। জানা যায়, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালায় আবাসিক এলাকাগুলোর শব্দের সহনীয় মানমাত্রা দিনের বেলায় সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ ডেসিবেল নির্ধারণ করা হয়েছে। রাতের বেলায় তা আরও ৫ একক কম। ল্যানসেট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৩ ডেসিবেল শব্দে মানুষের ঘুম ভেঙে যায়। শব্দের কারণে অনিয়মিত ঘুমে মানুষের বিরক্তিসহ দীর্ঘ মেয়াদে শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। সীতাকুন্ড স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মো. নুর উদ্দিন জানান, উচ্চমাত্রার শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তি ও স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। কানে শোনার ক্ষমতা কমে যায়, ঘুম কম হয়, বিরক্তির মাত্রা বেড়ে যায়। শব্দের কারণে শিশুদের শেখার ক্ষমতা কমে যায়। হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদিও হয় দীর্ঘ মেয়াদে। শব্দ দূষণের কথা স্বীকার করে সীতাকুন্ড রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মতিলাল বড়ুয়া জানান, এলাকাবাসীর আবেদনের দরখাস্তটি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করেছি।