সীতাকুন্ডে পুলিশ-ডাকাত দেড় ঘণ্টাব্যাপী বন্দুকযুদ্ধ

76

সীতাকুন্ডে সশস্ত্র ডাকাতদলের সঙ্গে পুলিশের মুখোমুখি ‘বন্দুকযুদ্ধ’র ঘটনা ঘটেছে। এতে সীতাকুন্ড মডেল থানার অফিসার ইনচার্জসহ ৪ ওসি আহত হয়েছেন। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৬ পুলিশ সদস্য। এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপী চলা এই ‘বন্দুকযুদ্ধ’র এক পর্যায়ে বিপুল অস্ত্রসস্ত্রসহ ৪ ডাকাতকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সীতাকুন্ডের সলিমপুর এলাকায় এঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. দেলওয়ার হোসেন, ওসি (তদন্ত) মো. আফজল হোসেন, ওসি (অপারেশন) মো. জাব্বারুল ইসলাম, ওসি (ইন্টেলিজেন্ট) সুমন চন্দ্র বণিকসহ ১০ পুলিশ সদস্য। আহত পুলিশ কর্মকর্তা-সদস্যরা হাতে ও মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তবে ওসি মো. দেলওয়ার হোসেনের মাথার আঘাত গুরুতর বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুন্ড সার্কেল) শম্পা রানী সাহার উপস্থিতিতে আহত মো. দেলওয়ার হোসেন জানান, ‘আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় একটি দল অস্ত্রশস্ত্রসহ ফকির হাট দরবেশ ইউসুফ আলীর বাড়িতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অবস্থান নেয়ার সংবাদ পাই। তারা ডাকাতির জন্য সেখানে জড়ো হয়েছিল বলে আমরা জানতে পারি। খবরের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে আমরা (পুলিশ) তাদেরকে ঘেড়াও করে ফেলি। এসময় ডাকাত দল পুলিশের উপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। আমরা আত্মরক্ষায় গুলি করি। প্রায় দেড় ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে ৪ ডাকাতকে আটকসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ডাকাত দলের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে আমিসহ ১০ পুলিশ আহত হয়েছে।
আটক ডাকাতরা হলেন স›দ্বীপের মুছাপুর ইউপির ৪নং ওয়ার্ডের আবুল কাশেমের ছেলে মো. সোহাগ (৩৪), সলিমপুল ইউপির ৬নং ওয়ার্ডের কাজিপাড়া এলাকার ফকির আহমেদের ছেলে সালাউদ্দিন (৩১), একই এলাকার ফকির আহম্মদের ছেলে মো. কামরুল হাসান (২৬) এবং কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার তুলাগাঁও গ্রামের নুরুল হকের ছেলে রবিউল হাসান জুয়েল (২২)। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আটক ডাকাতদের কাছ থেকে ১টি বিদেশি রকেট লাঞ্চার, ১টি বিদেশি ১ নালা বন্দুক, ১টি বিদেশি টু টু বার রাইফেল, ১টি দেশীয় তৈরি এলজি,
৮টি রকেট লাঞ্চার সেল, ১৪টি কার্তুজ ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সলিমপুর ইউনিয়নের ফকিরহাটের কাজিরপাড়ায় দেওয়ানজি মসজিদের পাশে অবস্থিত দরবেশ ইউছুপ আলীর বাড়ির একটি আধাপাকা ঘরে অস্ত্রশস্ত্রসহ অবস্থান নেয় একদল ডাকাত- এমন সংবাদের ভিত্তিতে সীতাকুন্ড মডেল থানা পুলিশের একটি দল সেখানে হানা দেয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতদল গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও গুলি চালায়। এক পর্যায়ে পুলিশ ডাকাতদের আশ্রয় নেয়া ঘরটি ঘিরে ফেলতে সক্ষম হয়। ঘরটির ভেন্টিলেটর কেটে কয়েকজন পুলিশ সেখানে প্রবেশ করতেই ডাকাত দলের সদস্যরা পুলিশের উপর হামলা করে। পুলিশও পাল্টা জবাব দেয়। দেড়ঘন্টার এই শ্বাসরুদ্ধকর মুখোমুখি ‘বন্দুকযুদ্ধ’ চলাকালীন সময়ে মডেল থানার ওসি মো. দেলওয়ার হোসেনসহ ১০ পুলিশ আহত হন। সংঘর্ষে ডাকাতদের মধ্যে মো. সোহাগ ও রবিউল হোসেন নামে দুই ডাকাত আহত হয়। সংঘর্ষের মধ্যেই বেশ কয়েকজন ডাকাত পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও ৪ ডাকাতকে পুলিশ ধরে ফেলে।
সীতাকুন্ড মডেল থানার ওসি দেলওয়ার হোসেন জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আজকের ঘটনায়ও থানায় অস্ত্র, ডাকাতি এবং পুলিশের উপর হামলার দায়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে সীতাকুন্ডের বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল বাদামতলা এলাকায় গুলিবিদ্ধ একটি অজ্ঞাত লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে স্থানীয়দের তথ্য মতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী লাশটি উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্টের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ লাশটি ডাকাতদলের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করলেও পুলিশ এ ব্যাপারে কিছু জানে না বলে জানিয়েছে।
সীতাকুন্ড মডেল থানার ওসি (অপারেশন) জাবারুল ইসলাম জানান, ‘আমরা গুলিবিদ্ধ অজ্ঞাত লাশটি উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেছি। সুরতহাল রিপোর্ট পরবর্তী সঠিক তথ্য জানাতে পারবো’।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরপ্রান্তের সিটি গেইট থেকে সীতাকুন্ডের বড় দারোগারহাট এলাকার মহাসড়ক ও বিভিন্ন গ্রামে প্রতিনিয়ত ডাকাতির ঘটনা বেড়ে চলেছে। রাত হলেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মানুষ রাত জেগে ডাকাত পাহারা দিয়েও ডাকাতদলের থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। একই রাতে তিন থেকে পাঁচ ঘরেও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। উপজেলার মানুষ রাত হলে ডাকাত আতঙ্ক নিয়ে রাত্রিযাপন করার পাশাপাশি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও দীর্ঘ সময় ধরে ডাকাতদলের সদস্যদের ধরতে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। গতকালের এই ঘটনার পর এলাকাবাসী কিছুটা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললেও আতঙ্ক কাটেনি এখনো।