সীতাকুন্ডে চেয়ারম্যান পদে দলীয় টিকিট পেতে মরিয়া প্রার্থীরা

55

অনেকটা দিনক্ষণ ঠিক হওয়ায় সীতাকুন্ড উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এলাকায় সর্বত্র বইছে নির্বাচনের হাওয়া। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনের প্রস্ততি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এরই অংশ হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তফশীল ঘোষনা ও মার্চে ধাপে ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এবারই প্রথম স্ব স্ব দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবেনা বলে দলের পক্ষ হতে বিভিন্ন সভা মঞ্চে বলে বেড়ালেও এখনো তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, তাই বিএনপি‘র সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় নির্দেশনার দিকে। এদিকে চায়ের আড্ডায় কিংবা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিশেষ করে (আওয়ামী লীগের) চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা জানান দিচ্ছে। এছাড়া দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগ সম্ভাব্য প্রার্থীরা শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের সস্তুষ্টি লাভের জন্যও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এলাকায় তাদের প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়ে দিচ্ছে। দিনে গরম ও রাতে শীত উপেক্ষা করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। শীত ও নির্বাচনকে সামনে রেখে চলছে শীতবস্ত্র তথা কম্বল বিতরণও। অপরদিকে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে কারো না শুনা না গেলেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় চেয়ারম্যান পদে যারা দলীয় মনোনয়ন পাবেনা তাদের মধ্যে কোন একজনকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তারা হলেন সীতাকুন্ড উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা শাহিনুর আক্তার বিউটি যিনি গত দুই বারেও প্রার্থী হয়ে বিএনপি‘র প্রার্থীর কাছে হেরেছিলেন। এছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভানেত্রী দেলোয়ারা বেগম ও সীতাকুন্ড যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী জয়নব বিবি জুলির নাম ও সম্ভাব্য তালিকায় অন্তুর্ভুক্ত বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ সমর্থিত সম্ভাব্য উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা জানান, প্রার্থী নির্বাচনে দলীয় নির্দেশনা মেনে নেবেন, দল থেকে যাকে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে দলের স্বার্থে তার হয়ে মাঠে কাজ করবেন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, সীতাকুন্ড উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ২,৯১,৫৪৪জন, পুরুষ ভোটার-১.৫৪,৪৭৫জন, নারী-১,৩৭.০৬৯জন। ভোট কেন্দ্র ৮২টি। আওয়ামী লীগ থেকে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য আটজন প্রার্থী। তাদের অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকের পাশাপাশি বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়েও নিজেদের মত করে জনসংযোগ চালাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলীয় সমর্থন নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রভাবশালী ও শীর্ষ নেতাদের মন জোগানোর চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছেন তারা। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি আলহাজ এস.এম.আল মামুন, উপজেলা আ.লীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ইসহাক, সাবেক উত্তরজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উত্তরজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মহিউদ্দিন বাবলু, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সৈয়দপুর ইউপি তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ.লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আলাউদ্দিন সাবেরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ.লীগের সদস্য মোহাম্মদ ইদ্রিস, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ.লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক পিপি এডভোকেট ভবতোষ নাথ ও বারৈয়াঢালা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব রেহান উদ্দিন রেহান। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্ভাব্য প্রার্থীরা সবাই জানিয়েছেন, দলীয় নির্দেশনা মোতাবেক তারা প্রার্থিতার সিদ্ধান্ত নেবেন।
দল থেকে যাকে প্রার্থী ঘোষণা করবেন তার পক্ষেই একযোগে কাজ করবেন। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি পুত্র এস এম আল মামুন বলেন, আমি গত উপজেলা নির্বাচনে মনোনোয়ন পাওয়ার পর সীতাকুন্ডবাসীকে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। সরকারি অনুদানের বাহিরে নিজের টাকা খরচ করে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছি। যা আপনারা (সাংবাদিকরা) এসব প্রতিবেদন পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভিতরে বাহিরের কেউ প্রবেশ করলে বুঝবে গত পাঁচ বছরের উপজেলা পরিষদ আর ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ অনেক ভিন্ন।
গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। এরপর গত পাঁচ বছর সীতাকুন্ডের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছি। উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ইসহাক বলেন, সাবেক এমপি আবুল কাসেম সাহেবের মৃত্যুর পর থেকে আমি দলের খুব অসময়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছি। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি থেকে ২০১৪ সালের অগ্নি সন্ত্রাসের মধ্যেও বর্তমান এমপি আলহাজ্ব দিদারুল আলম সাহেবকে নির্বাচিত করার কাজে সহযোগিতা করি। একইভাবে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও দলের স্বিদান্ত মোতাবেক আওয়ামীলীগের একক দলীয় প্রার্থী দিদারুল আলমকে নির্বাচিত করার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করি। আমি আশাবাদি দল আমাকে মনোনয়ন দিয়ে দলের অসময়-সুসময় সব সময় পাশে রাখবে। চট্টগ্রাম উত্তরজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মহিউদ্দিন বাবলু বলেন, ছাত্রজীবন থেকে আমি রাজনীতি করে আসছি।
সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিবে বলে আমার বিশ্বাস করছি। চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী আ.লীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, আমি ১৭ বছর একটানা সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছি। ২০০৮ সালে উপজেলা নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করি। সে সময় এলাকায় আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্বেও দলের স্বার্থে আমি আ.লীগের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছি এবং দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে কাজ করেছি। মনোনয়ন পেলে তিনি নিরক্ষর, বেকারমুক্ত এবং একটি পর্যটন নগরী হিসেবে আধুনিক সীতাকুন্ড গড়ার লক্ষ্যে কাজ করবো। চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন সাবেরী বলেন, আমি ছাত্ররাজনীতি থেকে দলের জন্য কাজ করেছি। গত পাঁচ বছর এলাকায় উন্নয়ন কাজে সস্পৃক্ত ছিলাম। এলাকার জনগনের সাথে আমার যোগাযোগ ছিল। তাই দলের কাছে এবার চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন চাইবো। তবে দলের সিন্ধান্তর উপর নির্ভর করে চেয়ারম্যান পদ পরিবর্তন করে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবো। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ.লীগের সদস্য মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধু‘র আদর্শকে বুকে ধারন করে আ.লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছি। বর্তমান সাংসদ আলহাজ্ব দিদারুল আলম সাহেবের সাথে থেকে গত ৫ বছর এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছি। তাই আমি দলের একজন নিবেদিত অসময়ের যোদ্ধা হিসেবে মনোনয়ন চাইবো। দল আমাকে যোগ্য মনে করলে অবশ্যই আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিবে বলে আশি আশাবাদি।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ.লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক পিপি এডভোকেট ভবতোষ নাথ বলেন, আমি দলের সাংগঠনিক কাজে সব সময় ছিলাম। চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন চাইবো, তবে দলের সিদ্ধান্তের উপর আমি নির্ভর করবো। দলের অসময়ের ত্যাগি নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী বারৈয়াঢালা ইউপি চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিন রেহান বলেন,‘আমি এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করার কারণে এলাকার জনগণ আমাকে পরপর তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করতে সব সময় আন্দোলন-সংগ্রামে দলের পাশে ছিলাম। আমিও মনোনয়ন প্রত্যাশি। দল যদি আমাকে মূল্যায়ন করে তাহলে নির্বাচন করতে প্রস্তুত।
তবে দল থেকে যাকেই একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেবে তাঁকে জয়ী করতে নিরলস কাজ করে যাবো। আসন্ন উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পিপি এ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, এবারের উপজেলা নির্বাচন আগের নির্বাচন থেকে আলাদা, বিশেষ করে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় নির্বাচনে ভিন্ন মাত্রা যোগ হবে। তাই প্রার্থী নির্বাচনে আমাদের উত্তর জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত হলো সৎ চরিত্রবান, যোগ্য, নিষ্ঠাবান, দলের প্রতি আনুগত্যশীল, সচ্ছল, সিনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হতে হবে। প্রার্থী নির্বাচনে দল সংসদ নির্বাচনের মত সঠিক সিদ্ধান্তেই উপনিত হবে এবং উপযুক্ত প্রার্থীকে মনোনয়ন দিবেন।