সীতাকুন্ডের ফলনায়ক মঞ্জুর দৃষ্টিনন্দন ফলের বাগান মন কাড়ে আগতদের

136

সীতাকুন্ডে পাহাড় সংলগ্ন ৬ একর অনাবাদী জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির দৃষ্টি নন্দন ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন রহমত নগর এলাকার ব্যবসায়ী আবুল ফজল মোহাম্মদ মঞ্জু ভূঁইয়া। তার বাগান জুড়ে থাকা বিভিন্ন জাতের ৬’শতাধিক ফল গাছ বৈচিত্র্যময় সবুজের সমাহার সৃষ্টি করেছে। ব্যতিক্রমী এ ফলের বাগান দেখতে প্রতিনিয়ত তার খামার বাড়িতে ছুটে আসছেন বৃক্ষ প্রেমী মানুষরা।
স্থানীয় লোকজনের কাছে তিনি সফল কৃষক হিসাবে পরিচিতি লাভ করলেও আগতরা তাকে উপাধি দিয়েছেন বৃক্ষ প্রেমী হিসাবে। ইতিমধ্যে তার ফল বাগানের বৈচিত্র্যময় সবুজের সমাহার নজর করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগের। পাহাড় সংলগ্ন বির্স্তিণ এলাকায় তিনি বিভিন্ন প্রজাতির ফলের চাষ করেছেন। বাগানের কোন গাছে ধরে আছে ফুল,আর কোন গাছে ধরে আছে বিভিন্ন প্রজাতির ফল। তার বাগান জুড়ে থাকা ফলের হাসি শুধু তাকেই অনুপ্রাণিত করেনি,অনুপ্রাণিত করেছে কৃষি বিভাগকেও। তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সীতাকুন্ডের কৃষিকে একধাপ এগিয়ে দেয়ার পাশাপাশি পাহাড় সংলগ্ন জমিতে ফল চাষের এই সফলতা খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। ইতিমধ্যে তার সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন স্থানীয় ও উপজেলার অনেক বেকার যুবক।
জানা গেছে,একান্ত শখের বসে ২০০৮ সালে সিরাজ ভূঁইয়া খামার বাড়ির অনাবাদী তিন একর জায়গায় ফলের বাগান গড়ে তুলেন মঞ্জু। শুরুতে তিনি নিজ উদ্যোগে ৮০শতক জমিতে আম্রপলি,হিমসাগর,ফজলি,লেংরা,হাড়ি ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক আমের চারা রোপন করেন। এছাড়া ৭০শতক জমিতে রোপন করেন উন্নত কলম পদ্ধতির আপেল কুল,বাউকুল ও থাইকুল। প্রায় দেড় একর জমিতে রোপন করেন বারী ওয়ান ও আমেরিকান প্রজাতির মাল্টার চারা। শুরুতে বাগানের পরিচর্যার বিষয় বুঝতে কিছুটা অসুবিধা হলেও পরবর্তীতে তা অতিক্রম করে সফলতার দেখা পান মঞ্জু। পাঁচ বছরের মধ্যে তার গড়ে তোলা ফলের বাগানের প্রতিটি ফল গাছ ডালপালা ছড়িয়ে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠে। প্রথম ধাপে সফলতার দেখা পাওয়ায় অনাবাদি আশপাশের জমিতে ফলের বাগান গড়ে তোলার একান্ত ইচ্ছা পোষণ করেন মঞ্জু। এতে তিনি নিজ উদ্যোগের পাশাপাশি কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় অনাবাদি তিন একর জমিতে পাতি, এলাচি, হাইব্রিড কাগজী, লেবু, পেঁপে, পেস্তাবাদাম, কামিনী হাইব্রিড, কালো আম, কাজী পেয়ারা, কামরাঙ্গা, ডালিম, জাম্বুরা, আমলকি, ছবেদা, আলু বোখরা, ভিয়েতনামী খাটো জাতের নারিকেল গাছ, গোলাপজাম, কাট বাদাম, স্ট্রবেরী, কমলা ও চায়না-৩ লিচুসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ রোপন করেন। কর্মজীবনের সকল ব্যস্ততার ভীড়ে একটু সময় পেলে ফল বাগানের পরিচর্যায় মেতে উঠতেন উদ্যোমী মঞ্জু। তার নিবিড় পরিচর্যায় ২০১৬ সালের বাগানের প্রতিটি গাছে ফল ধরতে শুরু করে। ইতিমধ্যে মালটা,কমলা,জলপাই,কুল ও লেবুসহ বাগানের কয়েক প্রজাতির শীতকালিন ফল গাছে থোকায় থোকায় ফলে ধরে আছে। আলাপকালে সফল বৃক্ষ প্রেমী আবুল ফজল মোহাম্মদ মঞ্জু ভূঁইয়া বলেন, সম্রান্ত ভূঁইয়া পরিবারে অনেকটা আরাম আয়েশে বেড়ে উঠলে ১৯৭৯ সালে ভাগ্যর অন্বেষনে সৌদি আরব পাড়ি জমান। সেখানে দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাস জীবন শেষে ১৯৮৫ সালে দেশে ফিরে আসেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম শহরে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। ব্যবসায়িক জীবনেও সফলতার দেখা পান তিনি। কিন্তু কর্মজীবনের শত ব্যস্ততার মাঝে প্রকৃতির প্রতি ছিল অপরিসীম মমতা। তাইতো প্রকৃতির টানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন তিনি। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া অনাবাদি জমিতে গড়ে তুলেন দেশী, বিদেশী ও দুর্লভ প্রজাতির ফলের বাগান। তিনি বলেন, শুরুতে বাগানের পরিচর্যার বিষয়ে বুঝতে কিছুট অসুবিধা হলেও পরবর্তীতে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ ও স্থানীয় কৃষকদের সহযোগিতায় তা স্বাভাবিক হয়ে যায়। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বাগানের বিভিন্ন ফলের গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে মালটা, কমলা, কুল ও জলপাইসহ শীতকালিন বিভিন্ন ধরনের ফল গাছে ফলন শুরু করেছে। মুকুলে ভরে উঠছে ফজলি, আম্রপালিসহ বিভিন্ন প্রজাতির আমের গাছ। এক সময়ে শখের বশে গড়ে তোলা ফলের বাগানের বাণিজ্যিক প্রসার ঘটানোর স্বপ্নে বিভোর মঞ্জু আরো বলেন, ফলের বাগান গড়ে তুলার শুরুতে উন্নত প্রজাতির চারা সংগ্রহে চষে বেড়িয়েছি দেশের বিভিন্ন এলাকা। তবে ময়মনসিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছি উন্নত জাতের মাল্টা ও আমের চারা। এছাড়া তাদের পরামর্শে কলম পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেই কাটিং করে রোপন করি বিভিন্ন প্রজাতির কুলের চারা। তবে বাগানের মাঝামাঝি সময়ে সরকারী ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় বেশকিছু উন্নত প্রজাতির ফলের চারা সংগ্রহ করা হয়। সীতাকুন্ড কৃষি কর্মকর্তা সাফকাত রিয়াদ ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠা এ ফলের বাগান সবুজের সমাহার সৃষ্টির পাশাপাশি মিটাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফলের চাহিদা।
বৃক্ষের প্রতি তার এ ভালোবাসাই সফলতার অন্যতম নির্দশন। প্রায় ৬ একর জমিতে গড়ে তোলা তার এ ফলের বাগান সীতাকুন্ডের বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষকে মোহিত করেছে। ইতিমধ্যে অনেকে ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় ফলের বাগান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন। ব্যতিক্রমী উদ্যোক্তা মঞ্জুর গড়ে তোলা ফলের বাগান অচিরেই বাণিজ্যিক প্রসার লাভ করবে বলে দৃঢ় আশাবাদি তিনি।