সিম জালিয়াতচক্রের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার

48

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধনের সময় একজন গ্রাহকের কাছ থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে রাখা হত। তারপর ওই গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য ও বাড়তি আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করেই নিবন্ধন করে নেয়া হত একাধিক মোবাইল সিম। যেগুলো চড়া দামে অপরাধ চক্রের লোকজনের কাছে বিক্রি করত নিবন্ধন জালিয়াত চক্রের সদস্যরা। গ্রাহক নিজেই জানতেন না তার নামে একাধিক সিম নিবন্ধনের তথ্য।
সিম নিবন্ধনে জালিয়াতির শিকার কয়েকজন গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বাকলিয়া থানা পুলিশ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জালিয়াতচক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এরা হলেন, ফেরদৌস সরোয়ার রবিন (১৮), মিনহাজুল ইসলাম (২৩), মিশু আহমেদ (৩০) ও জাবেদ ইকবাল (৩০)। তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে বাকলিয়া থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
বাকলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রবিন বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবি-আজিয়াটার পরিবেশক এ কে খান টেলিকম লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধি। নগরীর বাকলিয়ার বলিরহাট এলাকার মুদি দোকানদার মুহাম্মদ ইসমাইল গত মার্চে তার কাছ থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করে একটি সিম
নিয়েছিলেন। সিম কেনার সময় এবং পরবর্তীতে নানা অজুহাতে রবিন কয়েকদফা ইসমাইলের হাতের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে রবিনের কাছ থেকে মুদি দোকানদার ইসমাইল আরেকটি সিম কিনতে গিয়ে জানতে পারেন, তার নামে অন্তত আরও ৩০টি সিম নিবন্ধিত আছে। এরপর ইসমাইল বিষয়টি পুলিশকে জানান। ইসমাইলের অভিযোগের ভিত্তিতে রবিনকে আটক করা হয়। পুলিশ তার কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে নিবন্ধিত ১৩টি মোবাইল সিম জব্দ করে। থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এই চক্রের আরও কয়েকজন সদস্যের নাম প্রকাশ করেন তিনি। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিবন্ধন জালিয়াত চক্রের আরও তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে নিবন্ধিত ৩১টি মোবাইল সিম, সিম নিবন্ধনে ব্যবহৃত একটি নোটপ্যাড, আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার একটি ক্যাবল ও তিনটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান সংবাদিকদের বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া চারজনই একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্রের সদস্য। তারা গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া বাড়তি আঙুলের ছাপ ও ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করে। তারপর সেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে সিম নিবন্ধন করে। গ্রাহক জানতেও পারেন না তার নামে সিম নিবন্ধিত হয়েছে। ওই সিমগুলো চড়া দামে বিক্রি করে। এসব সিম হাত ঘুরে অপরাধচক্র কিংবা রোহিঙ্গাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে কি না সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের যোগসাজশেই এই জালিয়াতি হচ্ছে।