সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ!

276

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে আবদুচ ছালামের ষষ্ঠবারের নিয়োগের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি মাসেই। এরই মধ্যে ছালামের নিয়োগের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে নাকি নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে কয়েকদিন ধরেই জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
তবে গতকাল বুধবার দুপুরের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাবেক কাউন্সিলর এম জহিরুল আলম দোভাষকে সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার হয়। দলীয় একাধিক নেতাও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত বলে জানানো হয়। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন গতকাল পর্যন্ত দেখা যায়নি।
এদিকে দলীয় সূত্রে জানা যায়, সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে এম জহিরুল আলম দোভাষকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বুধবার এ সংক্রান্ত আদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষর করেছেন। দুপুরে সচিবালয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিমের কাছ থেকে নিয়োগপত্র গ্রহণ করেন জহিরুল আলম দোভাষ।
এর আগে জহিরুল আরম দোভাষ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি হিসেবে একাধিকবার সিডিএ’র বোর্ড মেম্বারের দায়িত্ব পালন করেছেন। নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডে ১৯৯৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জানে আলম দোভাষের জ্যেষ্ঠ সন্তান। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ বিষয়ে জানতে গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে এম জহিরুল আলম দোভাষ পূর্বদেশকে বলেন, সিডিএ’র চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগের বিষয়ে আমাকে জানানো হয়েছে। তবে আমি এখনো নিয়োগপত্র হাতে পায়নি। সম্ভবত সেটা প্রক্রিয়াধীন।
বুধবার দুপুর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিমের সঙ্গে তোলা জহিরুল আলম দোভাষের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই শ ম রেজাউল করিমের কাছ থেকে সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে জহিরুল আলম দোভাষ নিয়োগপত্র গ্রহণ করেছেন বলে উল্লেখ করেন। ছবিটি ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি অভিনন্দনের ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এদিকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বিতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি হতে যাচ্ছেন জহিরুল আলম দোভাষ। এর আগে ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল প্রথমবারের মতো সিডিএ’র চেয়ারম্যান পদে আসেন আবদুচ ছালাম। ব্যবসায়ী আবদুচ ছালাম ২০০৬ সাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ পদে আছেন। নিয়োগের পর ছয় দফায় বাড়ানো হয় সালামের মেয়াদ। প্রথম দফায় ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল দুই বছরের জন্য আবদুচ ছালামকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। তিনি ওই বছরের ২৮ এপ্রিল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। ২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে দুই বছর, ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ তৃতীয় মেয়াদে এক বছর, ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল চতুর্থ মেয়াদে এক বছর এবং ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল পঞ্চম মেয়াদে দুই বছর এবং ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল ষষ্ঠ মেয়াদে দুই বছরের জন্য চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আবদুচ ছালামকে।
আবদুচ ছালামের মেয়াদেই সিডিএ’র তত্ত¡াবধানে নগরীতে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। ফ্লাইওভারটি নির্মাণের সময় ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর গার্ডার ধসে ১৩ জনের মৃত্যু হলে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে আবদুচ ছালাম দশবছরে বহদ্দারহাটে এম এ মান্নান ফ্লাইওভার, মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার, আউটার রিং রোডসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। এছাড়াও চলমান আছে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছেন তেমনি সমালোচনারও মুখোমুখি হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়েন ২০১২ সালে ২৪ নভেম্বর বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায়। তাছাড়া ফ্লাইওভার নির্মাণ নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
অন্যদিকে ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে আবদুচ ছালামের পুনর্নিয়োগ ও পদে থাকার বৈধতা নিয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। ১৯৬৯ সালের সিডিএ অধ্যাদেশ অনুসারে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালনে একবার পুনর্নিয়োগের সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে এক ব্যক্তির রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে আবদুচ ছালামের নিয়োগ, পুনর্নিয়োগ ও সর্বশেষ দেওয়া নিয়োগের ভিত্তিতে পদে থাকা ও কার্যক্রম পরিচালনা কেন আইনি কর্তৃত্ব বহির্ভূত হবে না- তা জানতে চেয়ে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।