সিডিএ’র উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরলেন ছালাম

54

‘২০০৯ সালে আমাকে সিডিএ’র চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কোনো রাজনৈতিক কর্মীকে সিডিএ’র চেয়ারম্যান করা এটাই প্রথম। এর আগে কোনো রাজনৈতিক কর্মী স্বপ্নও দেখতেন না সিডিএ’র চেয়ারম্যান হওয়ার। আমার সিডিএতে যোগদান, পরিকল্পনা, উন্নয়ন সবই ইতিহাস। উন্নয়ন চলমান প্রক্রিয়া। আমার নিয়োগ ছিলো খন্ডিত। খন্ডিত সময়ে বড় পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার সুযোগ ছিলো না। খন্ডিত খন্ডিত করে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এসব খন্ডিত পরিকল্পনা আজকে দশ বছর পর এসে মহাপরিকল্পনায় রূপ পেয়েছে।’
গতকাল শনিবার দুপুরে জিইসি মোড়স্থ ওয়েল পার্ক রেসিডেন্সে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। মতবিনিময় সভায় তিনি সিডিএ’র ১০ বছরের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর নগরবাসীর আকাক্সক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে যানজট নিরসনে অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করি। ৫টি রোড নেটওয়ার্ক করেছি। ১০ বছরে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরি করেছি। পাশাপাশি একাধিক ফ্লাইওভার তৈরি করা হয়েছে। বায়েজিদ থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণ শেষের পথে। এটি চালু হলে শহরে গাড়ির চাপ ৫০ শতাংশ কমে যাবে। উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের গাড়ি শহরে না ঢুকে ওই সড়ক ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় যেতে পারবে। এ ছাড়া কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত ব্রিজ ও পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত রিং রোডের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের চেহারা পাল্টে যাবে।
আবদুচ ছালাম বলেন, জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে সময় প্রয়োজন। বর্তমানে জলাবদ্ধতা নিরসনে চারটি সংস্থা কাজ করছে। সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পসহ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। গতবছরের চেয়ে এবার নগরবাসী অধিক সুবিধা পাবে। তবে জলাবদ্ধতার দূর হওয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। চলমান চারটি প্রকল্পের কাজ অবশ্যই শেষ হতে হবে। তবেই জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি আসবে। শুধু প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে হবে না। মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন না হলে যতই উন্নয়ন হোক ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলবে না। এজন্য মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।
তিনি বলেন, আগে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে ৪০ শতাংশ যোগান দিতো চট্টগ্রাম। সেটি এখন ১০ শতাংশের কম। এখন সক্রিয় গার্মেন্টস রয়েছে ৩০টি। বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করতে সময় লাগার কথা ৩০ মিনিট। এখন লাগছে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে সিডিএ। এটির কাজ শেষ হলে শহরে আর যানজটের চিহ্ন থাকবে না। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি বাড়বে। সারা বিশ্বে ভিআইপিদের জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা থাকে। কারণ তাদের উপর অনেকের কর্মসংস্থান নির্ভর করে।
সিডিএ’র নতুন চেয়ারম্যানকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে সবাইকে অনুরোধ জানিয়ে আবদুচ ছালাম বলেন, আমাকে নিয়োগ দিয়ে যেমন নেত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তেমনি ডলফিন ভাইকেও নিয়োগ দিয়ে আমার নেত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জনগণের আস্থা যদি অর্জন করা যায়, তাহলে কোনো কিছুই বাধা হিসেবে থাকতে পারে না। আমি সিডিএকে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেছি। সিডিএ’র প্রতি জনগণের যে আস্থা সৃষ্টি হয়েছে তা যদি উনি (জহুরুল আলম ডলফিন) ধরে রাখতে পারেন তাহলে কোনো সমস্যা উনার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে ছালাম বলেন, নিজের ব্যর্থতা নিজে কখনো দেখে না। নিজের ব্যর্থতা কেউ শেয়ার করবে না। আমি প্রতিশ্রæতিতে বিশ্বাস করি না, আমি বাস্তবায়নে বিশ্বাস করি। কঠিন জীবন, করুণ জীবন পার হয়ে আজকে আমার এই অবস্থান। তাই আমি ব্যর্থতা কিছু আছে বলে স্বীকার করবো না। আমার অভিধানে ব্যর্থতা বলে কোনো শব্দ আমি পাইনি।
আবদুচ ছালাম বলেন, পতেঙ্গা সৈকতে উন্নয়ন পরিকল্পনার মাত্র ১০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এতেই চট্টগ্রামবাসী অবাক হচ্ছে। পুরোপুরি কাজ হলে সত্যিকারের পর্যটন নগর হিসেবে চট্টগ্রাম সারাবিশ্বে পরিচিতি লাভ করবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী করার কাজ করেছি। বাণিজ্যিক রাজধানী হলে সংস্থাগুলো হেড অফিস করার জন্য দৌড়াবে। এমনকি মন্ত্রণালয়ও আসতে পারে। কিন্তু তারা চিন্তা করবে শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদনের ব্যবস্থা আছে কিনা। এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে সবাই চট্টগ্রামে আসতে বাধ্য। আমি দিল্লি পাবলিক স্কুল আনার কথা বলেছি, স্বাস্থ্য সেবার জন্য এপোলো হাসপাতাল আনতে সফল হয়েছি। আমার পরিকল্পনার মাত্র দশ ভাগ বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। এতেই এতো উন্নয়ন, এখনো ৯০ ভাগ করতে পারিনি। যা পেরেছি তা চট্টল দরদী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কারণেই পেরেছি।
মতবিনিময় সভায় সিডিএ’র বোর্ড সদস্য মো. জসীম উদ্দীন শাহ, কেবিএম শাজাহান, মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, হাসান মুরাদ বিপ্লব, স্থপতি আশিক ইমরান, এম আর আজিম, রুমানা নাসরীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।