সিটি কর্পোরেশন‘সবুজ মেলা’ : শেষ হয়েও যেন হলো না শেষ

51

নগরীর কাজীর দেউড়ির আউটার স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজন করেছিল ‘সবুজ মেলার’। তিলোত্তমা চট্টগ্রামের সহযোগিতায় নগরবাসীকে সবুজ গাছের প্রতি উৎসাহিত করতে পনের দিনের এই মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু চাহিদার প্রেক্ষিতে মেলা গড়ায় ২৮ দিন পর্যন্ত। গতকাল মেলা শেষ হয়েছে। তারপরও যেন রেশ রয়ে গেছে মেলায় আসা দর্শনার্থী ও নগরবাসীর কাছে। যেন শেষ হয়েও হলো না শেষ। মেলায় অংশ নেয়া নার্সারির মধ্যে সবুজ বিপ্লব নার্সারি প্রথম, পুষ্প নার্সারি ও বাহাদুর নার্সারি যৌথভাবে দ্বিতীয়, নিউ কসমো নার্সারি ও বনসাই ড্রিমস্ যৌথভাবে তৃতীয় স্থান লাভ করে। এছাড়াও অংশগ্রহণকারী সকল নার্সারিকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
গত ২৫ আগস্ট পনের দিনের জন্য শুরু হয়েছিল এই সবুজ মেলা। শেষ হওয়ার কথা ছিল ৯ সেপ্টেম্বর। কিন্তু চাহিদার ভিত্তিতে মেয়রের ঘোষণায় সেই মেলা বর্ধিত করা হয় ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সেই অনুসারে গতকাল সিটি মেয়র আ জ ম নাছির মেলার সমাপ্ত ঘোষণা করেন। এই সময়ের মধ্যে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার গাছ বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ শাখা। শেষ দিনে মেয়র ঘোষণা করলেন ‘গ্রিন এন্ড ক্লিন মেয়র অ্যাওয়ার্ডের’ কথা। বাড়ির আঙ্গিনা, কর্পোরেট অফিস, সকল সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিল-ফ্যাক্টরির উন্মুক্ত ও পরিত্যক্ত জায়গায় ব্যক্তি উদ্যোগে ছাদবাগান, ফুলের বাগান ও সবুজায়নকারীদের সৌন্দর্যবর্ধনে উদ্বুদ্ধ করার জন্য চলতি বছর থেকে জুরি বোর্ডের মাধ্যমে দেওয়া হবে এই পুরস্কার। নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের ৩টিকে ‘সেরা পরিচ্ছন্ন ওয়ার্ড’, বাসার ছাদ, বারান্দা এবং আঙিনা এই তিনটি ক্ষেত্রেই সমৃদ্ধ বাসা বাড়ির মধ্যে তিন জনকে ‘সেরা বাগানি’, বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ফ্যাক্টরি এবং ফার্মসমূহের ভবন বা স্থাপনায় পরিচ্ছন্নতা, সবুজায়ন এবং সৌন্দর্যের উপর ভিত্তি করে তিন প্রষ্ঠিানকে ‘সেরা কর্পোরেট’, সরকারি বা বেসরকারি স্কুল-কলেজ এই পৃথক দুইটি বিভাগে ১টি করে মোটি দুইটি সেরা ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’, নগরীর পরিচ্ছন্নতা, সবুজায়ন এবং সৌন্দর্যবর্ধনে ভূমিকা রাখার জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘সেরা সামাজিক সংগঠন’ হিসেবে মেয়র গ্রিন এন্ড ক্লিন সিটি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে। অর্থাৎ প্রতি বছর পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ১৪ জনকে পুরস্কৃত করবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
শেষ দিনে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মেলায় পঞ্চাশের অধিক স্টল রয়েছে। তারমধ্যে অবসরে শখের বাগান, সবুজ নার্সারি, বনরূপা নার্সারি, শিমুল পারুল নার্সারি, বাঁশবন নার্সারি, চিটাগাং নার্সারি, ব্র্যাক নার্সারি, ফতেয়াবাদ নার্সারি, চন্দন নগর বনফুল নার্সারি, আরণ্যক নার্সারি, নিউ কসমো নার্সারি, কসমো নার্সারি, আরএনজে নার্সারি, তিলোত্তমা চট্টগ্রাম, অবসরে শখের বাগান, ন্যাশনাল নার্সারি, বাংলাদেশ নার্সারি, বাহাদুর নার্সারি, পুষ্প নার্সারি, এইচবিআর নার্সারি, কাঁশবন নার্সারিতে শহুরে বাড়ির ছাদবাগানের গাছসহ সবধরনের গাছের চারা বিক্রি হচ্ছে। তবে সবুজের মাঝ্যে অনন্যতা ছড়িয়েছে একটি স্টল। সেটি হল ‘বিডি ক্লিন’। গাছ বিক্রি করতে নয়, মানুষকে সচেতন করতে মেলায় স্টল করেছেন বিডি ক্লিন নামের সংগঠনটি। মেলায় আসা যেকেউ স্টলটিতে খালি প্লাস্টিকের বোতল জমা দিলে উপহার দিচ্ছেন একটি গাছের চারা। নির্ধারিত জায়গা ময়লা ফেলায় উৎসাহ সৃষ্টির লক্ষ্যে এমন অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি। গাছের স্টল ছাড়াও রয়েছে চাঁদপুর মৃৎশিল্প, পঞ্চরসের আচার সিরাজ ভাইয়ের নিজ হাতে তৈরি ও সুন্দরবনের আশ্চর্য গুণসম্পন্ন মধুর স্টল।
এছাড়াও অন্যতম আকর্ষণ ছিল মেলার ঠিক মাঝে একটি সবুজ প্রজাপতি! দেখতে অনেকটা ওইরকম হলেও বাস্তবে সবুজ দিয়ে প্রজাপতি সদৃশ ‘ফটো বুথ’ করা হয়েছে। যেখানে ছবি তুলেনি এমন দর্শনার্থীর খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। মাসব্যাপী এই মেলায় শুরু থেকে পরিবেশবিদ, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, ছাত্র-শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, আজকের এই সবুজ মেলা অত্যন্ত স্বার্থক ও সফল। বাংলাদেশের কোথাও পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন এ ধরনের মেলা করে বলে আমার জানা নাই। তিনি বলেন- বর্তমান নগর জীবন খুবই রুক্ষ ও নিরস। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী নগরে বনায়নের হাওয়া লেগেছে। বৃক্ষ না থাকলে জীবজগৎ ও মানব সমাজই থাকবে না।
সভাপতির বক্তব্যে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, সবুজায়ন কর্মসূচির আওতায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ছাদবাগান কর্মসূচি, রাস্তার পাশে গাছের চারা রোপণ, বনায়নসহ নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ লক্ষ্যে নগরের পতিত জায়গায়, বাড়ির ছাদে বনজ, ফলজ ও ঔষধিসহ বিভিন্ন জাতের গাছের চারা রোপণ করার জন্য নগরবাসীকে বিভিন্ন ভাবে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। বৃক্ষ মানুষের জীবন বাঁচায়। বৃক্ষ ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকার কোনো উপায় নেই। বৃক্ষ যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিকারক, তেমনি আবার পরিবেশ সংরক্ষণেরও সজীব প্রতীক। তাই চট্টগ্রাম নগরীকে গ্রিন, ক্লিন, বাসযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব নগরীতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর মেলার আয়োজন করে চসিক।
এতে বক্তব্য রাখেন সবুজ মেলা ২০১৯-এর ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান কাউন্সিলর মো. সাইফুদ্দিন খালেদ সাইফু ও চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চসিক প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের, সাইয়্যেদ গোলাম হায়দার মিন্টু, সলিম উল্লাহ বাচ্চু, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর আঞ্জুমান আরা বেগম, চসিক সচিব আবু শাহেদ চৌধুরী, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়–য়া, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম প্রমুখ। অনুষ্ঠান শেষে তিলোত্তমা চট্টগ্রাম এর স্মারক গ্রন্থ ‘প্রকৃতি’র মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ।