সিজেকেএসকে বাদ দিয়ে চট্টগ্রাম জেলা বয়সভিত্তিক দলগঠনে নজিরবিহীন দুর্নীতি

66

সকাল ৮ টা থেকেই বিশাল লাইন। চট্টগ্রাম জেলা অনূর্ধ্ব ১৬ ও অনূর্ধ্ব ১৮ টিমে ঢোকার জন্য শত শত ক্রিকেটার অপেক্ষমান। সিজেকেএস নেটে ঢোকার গেট বন্ধ। ভিতরে ব্যাটিং-বোলিং দেখার জন্য প্রস্তুত বিসিবির এইচপি কোচ নূরুল আবেদিন নোবেল এর নেতৃত্বে সুব্রত চৌধুরী ও মাহবুবুল করিম মিঠু। গেটম্যান এর দায়িত্বে জেলা কোচ তারেক হোসেন খান। তিনি যাদেরকে সুযোগ দিচ্ছেন তারা ঢুকে নির্বাচকদের কাছে যাচ্ছেন আর ব্যাটিং-বোলিং এর পরীক্ষায় অবতীর্ণ হচ্ছে। অপেক্ষমানদের বিশাল একটা অংশ ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকেও নির্বাচকদের সামনে যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে হতাশ। বিশাল লাইন থেকে চেহারা দেখে দেখে তাদের সামনে দিয়ে বিশেষ বিশেষদের ঢোকানো হচ্ছে আর অন্যদের সাথী হাহাকার। দুর্ভাগ্য তাদের, প্রথম দিন সিজেকেএস বয়সভিত্তিক ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ আলী আব্বাস ও ক্রিকেট সেক্রেটারি আবদুল হান্নান আকবর এবং সাংবাদিকরা থাকলেও কাল তাদের অনুপস্থিতিতে বিশাল স্বপ্ন নিয়ে আসা ক্রিকেটারদের উপর ক্রিকেট ব্যবসায়ীদের খড়গ নেমে আসে। অনেক অভিভাবক ক্ষোভের সাথেই বলেন, জেলা কোচ অত্যন্ত ধূর্ততার সাথে নানা অজুহাতে দেখে দেখে নিজের সংশ্লিষ্ট অ্যাকাডেমির খেলোয়াড়দের অগ্রাধিকার দিয়ে ঢোকানোয় অন্যরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। আমাকেও অনেক অভিভাবক ফোন করে জেলা কোচের ভয়াবহ প্রতারণার ব্যাপারে জানান। এ ব্যাপারে সিজেকেএস’র বয়সভিত্তিক ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ আলী আব্বাস এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, জাতীয় ক্রিকেট লিগের মত বয়স ভিত্তিক দলও ক্রিকেট বোর্ড জেলার উপর চাপিয়ে দিলে জেলার নিবেদিতপ্রাণ সংগঠকদের কি কাজ? জেলা দলে কারা খেলবে এটা বিসিবির বেতনভুক কর্মচারীরা ঠিক করে দিলে সৎ, নি:স্বার্থ, জেলার স্বার্থপ্রেমী সংগঠকরা কেন আসবে? আমাদের মত পাগল কিছু এখনও আছে। এভাবে চললে খেলাধুলা এক সময় সম্পূর্ণভাবেই ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাবে, ক্রীড়া সংগঠক আর ক্রীড়ামোদি থাকবে না।
ক্রীড়াঙ্গনে যারা দিতে আসে তাদের এখন দাম নাই, ক্রীড়াঙ্গনকে ব্যবহার করে ব্যবসাজীবীদের দাপট এখন- মন্তব্য করে একজন অভিভাবক বলেন, কারা এসব বাছাইয়ের কাজ করবে তাদের সম্পর্কে বোর্ডের পক্ষ থেকে আগেই যাচাই-বাছাই হওয়া উচিত। ক্রীড়াঙ্গনে তাদের অবদান কি, তাদের যোগ্যতা কি, এসব না দেখে দায়িত্ব দিলে নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে তারা নোংরামি করবেই। আর এতে সংশ্লিষ্টের লাভ হলেও ভুগবে জেলার খেলাধুলা যার প্রমাণ জাতীয় ক্রীড়াঙ্গনে চট্টগ্রামের পশ্চাদপদতা।
রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে প্রতিদিনের মত বিকেল ৩ টায় স্টেডিয়ামে এসে আমি স্বচক্ষে দেখলাম ঘটনা। একেবারে সত্যি, এক দন্ডও মিথ্যা নয়- অ্যাকাডেমি প্রীতি দেখাতে গিয়ে জেলা কোচ তারেক কিভাবে চট্টগ্রামের ক্রিকেটকে ধ্বংশ করে দিচ্ছে তা আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন কয়েকজন অভিভাবক। ছেলেরা সেই সকাল থেকে দাড়িয়ে আছে লাইনে, তাদের পেছন থেকে অনেককে ডেকে কোচ ভেতরে ডেকে নিয়ে যাচ্ছেন আর অন্যরা তীর্থের কাকের মত হা করে তাকিয়ে তাকিয়ে মর্মাহত হয়ে হতাশার সাগরে ডুবে যাচ্ছেন। তাদের ভাষায়- কোচ এমন আচরণ করছেন যেন আমরা চলে যাই তাহলে এ চক্র খালি মাঠে গোল দিয়ে নিজেদের ঘরের ছেলেদের নিয়ে টিম বানাতে পারবেন। একজন অভিভাবক বললেন, নোবেল স্যার অত্যন্ত সুন্দর ও নিরপেক্ষভাবে খেলোয়াড়দের পরখ করছেন। কিন্তু তাঁর কাছে না গেলে তিনি কাকে পরীক্ষা করবেন?
এসব অসহায় মুখগুলোর ফ্যাকাসে অবস্থা দেখে আমি এক পর্যায়ে কোচকে অনুরোধ করলাম যেন তাদের একটু সুযোগ দেয়া হয়। তিনি অনুরোধ রাখলেন, বয়সের সার্টিফিকেট না থাকার অজুহাতে বাইরে দাড় করিয়ে রাখা ছেলেদের সবার কাছেই কাগজপত্র পাওয়া গেল। এরপর আরো জঘন্য ঘটনা। বিভিন্ন টুর্নামেন্টে দারুণ পারফর্ম করা এক উইকেট কিপার-ব্যাটসম্যান জানাল, আমার কিপিং দেখে মিঠু স্যার বললেন, খুব ভাল হয়েছে, ব্যাটিং ইমপ্রæভ করতে হবে। আশ্চর্য! আমি তো ব্যাটিং এর সুযোগই পাইনি। তারেক স্যার বললেন, যাও। এভাবেই চলছে চট্টগ্রাম জেলার বয়সভিত্তিক দলগঠনের কার্যক্রম। বিষয়টি বিসিবির এইচপি কোচ নূরুল আবেদিন নোবেল এর গোচরে আনা হলে তিনি বলেন, যেহেতু এটা ওপেন ট্রায়াল, সবাইকে সুযোগ দিতে হবে। আমি নিজে ৫০ জনকে ডেকে ঢুকিয়ে ট্রায়াল নিয়েছি। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সততা দেখাতে না পারলে বোর্ডের উদ্যোগ সফল হবেনা।
এবার জেলার দলগঠন নিয়ে পাহাড়সম অভিযোগে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সিজেকেএস বয়সভিত্তিক ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ আলী আব্বাস ও ক্রিকেট সেক্রেটারি আবদুল হান্নান আকবর। বলেছেন, খেলোয়াড় বাছাই শতভাগ শুদ্ধ নাও হতে পারে। কিন্তু জেলার স্বার্থ না দেখে নিজের অ্যাকাডেমি বা স্বজনকে প্রাধান্য দিলে শুধু যে চট্টগ্রাম সাফার করবে তা নয়, বিসিবির কোটি কোটি টাকা পানিতে যাবে, দেশের ক্রিকেট ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কথিত অবিচারের শিকার ক্রিকেটারের অভিভাবকদের আশ^স্ত করে সিজেকেএস’র শীর্ষ ক্রিকেট কর্তারা বলেন, এটাই চুড়ান্ত বাছাই নয়। যাদেরকে নেয়া হয়েছে তারাই শুধু থাকবে তাও নয়। প্রয়োজনে আমরা আরেকটি বাছাইয়ের ব্যবস্থা করব। যদি কোন প্রতিষ্ঠিত পারফর্মার বাদ পড়ে আমরা যাচাই-বাছাই করে সুযোগ দেয়ার চেষ্টা করব। মিনি টুর্নামেন্ট করে বিভিন্ন অ্যাকাডেমির খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে ম্যাচ পারফর্মার বের করার অপশনও আছে।
অনূর্ধ্ব ১৮ দলের ক্রিকেটারদের বাছাইয়ের মাধ্যমে গতকাল সম্পন্ন হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা অনূর্ধ্ব ১৪, ১৬ ও ১৮ ক্রিকেট টিমের প্রাথমিক স্কোয়াড। কয়েকদিন পর বিসিবির ডাক্তার কর্তৃক বয়স বাচাইয়ের পর ৩৫/৪০ জন নিয়ে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক টিমের অনুশীলন শুরু হবে জেলার চুড়ান্ত দল গঠনের লক্ষ্যে।