সিজেকেএস-ইস্পাহানী প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ হিরোদের ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধার দাপুটে সূচনা

13

ক্রীড়া প্রতিবেদক

চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে পিএইচপি ফ্যামিলির পদচারণা অনেক বছর ধরেই। এ শতাব্দীর গোড়া থেকেই, আরো খোলাসা করে বললে- বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামে যতগুলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছে, প্রায় এ দশক সবগুলো ম্যাচের সেরা (ম্যান অব দ্য ম্যাচ) খেলোয়াড়ের পুরস্কার দেয়া হতো তৎকালীন পিএইচপি গ্রæপের সৌজন্যে। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের দুই প্রান্তের দু’টি প্রান্তের নামও ছিল ইস্পাহানি ও পিএইচপি এন্ড। পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান, দেশবরেণ্য শিল্পপতি ও সমাজহিতৈশি আলহাজ সুফি মিজানুর রহমানের বড় ছেলে, পিএইচপি ফ্যামিলির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন ছিলেন ঐীতহ্যবাহী চট্টগ্রাম মোহামেডান স্পোর্র্টিং ক্লাবের সভাপতি এবং মেজ ছেলে, পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন ছিলেন মোহামেডানের ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান। পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক, ৫ম ছেলে আমির হোসেন (সোহেল), ৬ষ্ট ছেলে জহিরুল ইসলাম রিংকু এবং কনিষ্ট ছেলে আকতার পারভেজ হিরো মাঠ কাঁপিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম ক্রিকেট অ্যাকাডেমি (সিসিএ) ও সানশাইন গ্রামার স্কুলের হয়ে। অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে গিয়ে সেখানেও নিয়মিত ক্রিকেট খেলেছেন ক্রীড়া অন্ত:প্রাণ এ তিন ভাই। পরবর্তীতে দেশে ফিরে সোহেল সিসিএ’র সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন বেশ ক’বছর। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর রিংকুর সিসিএ সতীর্থ আফতাবকেও পৃষ্ঠপোষকতা করে পিএইচপি। ব্যবসার ব্যস্ততায় মহসিন, ইকবাল ক্রীড়া সংগঠন ছাড়লেও সোহেল, রিংকু ও হিরো শৈশবের প্রিয় সংগঠন সিসিএ’র যে কোন কর্মসূচিতে সশরীরে উপস্থিত থাকেন সবসময়, প্রসারিত রাখেন সহযোগিতার হাত। মেয়র কাপ ফুটবলেও শুলকবহর ওয়ার্ডের স্পন্সর ছিল পিএইচপি।
পিএইচপি ফ্যামিলির ক্রীড়া প্রেম ও পৃষ্ঠপোষকতাকে এবার কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র। পিএইচপি অটোমোবাইলস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকতার পারভেজ হিরোকে মুক্তিযোদ্ধার ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব পেয়েই তিনি মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা মশিউর রহমান চৌধুরী ও সরওয়ার আলম চৌধুরী মনির সাথে সমন্বয় করে বেশ ক’জন ক্রিকেট পাগল তরুনকে নিয়ে ক্রিকেট কমিটি গঠন করেন। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে তারা মাঠে নামলেও ততক্ষণে চট্টগ্রামের সেরা ক্রিকেটাররা প্রায় সবাই বিভিন্ন ক্লাবের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যায়। ফলে উদ্যোগ এবং অর্থ থাকলেও কাঙ্খিত তারকাদের দলে ভেড়াতে ব্যর্থ হয় মুক্তিযোদ্ধা। তবে ‘তোমাদের যা আছে তাই নিয়ে শত্রæর মোকাবেলা করতে হবে’- বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মত মুক্তিযোদ্ধার তরুণ তুর্কিদের উজ্জীবিত করেন আকতার পারভেজ হিরো। চেয়ারম্যানের বাসভবনে কয়েক দফা মিটিং ডেকে, আপ্যায়ন করে টিম ম্যানেজার রকিসহ কমিটি মেম্বাররা সাহস যোগান খেলোয়াড়দের। ‘প্র্যাকটিস মেকস পারফেক্ট’ উল্লেখ করে অনুশীলনে জোর দেয়া হয়।
সবার সহযোগিতায় ৫ জন কোটার খেলোয়াড় নিয়ে গতকাল (২৫ জানুয়ারি) লিগে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিপক্ষ গত মওসুমের রানার্সআপ, স্টেডিয়াম পাড়ার ক্রীড়া সংগঠন ফ্রেন্ডস ক্লাব। শক্তিশালী ফ্রেন্ডসকে সহজেই হারিয়ে সিজেকেএস-ইস্পাহানী প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে শুভসূচনা করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র। এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে তারা গতকাল চার উইকেটে জয়ী হয়েছে।
টস জিতে মুক্তিযোদ্ধা লাল প্রতিপক্ষ ফ্রেন্ডস ক্লাবকে ব্যাটিংয়ে পাঠালে তারা নির্ধারিত ৫০ ওভারে নয় উইকেটে ১৮১ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। দলের হয়ে শরিফুল সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন। এছাড়া মাহফিজুল ইসলাম ২১, আইচ মোল্লা ২৭, রায়হান রাফসান ৩২, সুজন দাশ ১৯, মাজহারুল ইসলাম ১০* ও আসাদুজ্জামান ১৩* রান করেন। মুক্তিযোদ্ধা লালের হয়ে রবিউল ইসলাম ও রাশেদুল বারি উভয়ে ২টি করে এবং সাইফুল ইসলাম ও জাওয়াদ একটি উইকেট নেন। ১৮২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ছয় উইকেট হারিয়ে জয়ের দেখা পায় মুক্তিযোদ্ধা লাল দল। দলের হয়ে উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৪৭ রান। ব্যক্তিগত রানের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করে আসে ওপেনার আনিসুল ইসলাম ও সালেহীন রিফাতের ব্যাট থেকে। আর রিফাত খেলেন হার নাম মানা ৪৩ রানের ইনিংস। এছাড়া জাওয়াদ ৪২ ও জসিম উদ্দিন ১৮ রান করে।
ফ্রেন্ডসের হয়ে, নুর আলম সাদ্দাম ৩টি, রায়হান রাফসান দুটি এবং মাজহার একটি উইকেট নেন।
আজকের খেলা: ব্রাদার্স ইউনিয়ন বনাম সিটি কর্পোরেশন।