সিঙ্গাপুর ছাড়ছেন আতঙ্কিত বাংলাদেশিরা

54

এমনিতেই লম্বা, তার উপর মাথায় টুপি থাকায় বেশ দীর্ঘকায় দেখায় তারিকুল ইসলামকে। গোলাপি পাঞ্জাবি পরা ঘন ধূসর দাড়িওয়ালা এই দোকানদার বাংলাদেশি অভিবাসীদের কাছে সুপরিচিত। সিঙ্গাপুরের লিটল ইন্ডিয়া এলাকায় লেম্বু রোডে সড়কে দেশি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসা দোকানদারদের মধ্যে দৈহিক আকৃতির কারণে তিনি একটু বাড়তি নজর কাড়েন।
করোনাভাইরাসে কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিক আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকের দেশ ছেড়ে যাওয়া ও ভিড় এড়ানোর প্রবণতা যেমন তরিকুলের খদ্দের কমিয়েছে, তেমনি ব্যস্ত সড়কটিকে করেছে কিছুটা জনশূন্য।
৫২ বছর বয়সী এই দোকানদার বলেন, অনেক লোক চলে গেছে। যখন মানুষ নিজের জীবন ও পরিবারের চিন্তা করে, তখন তারা অর্থের পরোয়া করে না।
এশিয়াজুড়ে অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে ভাইরাসটি নিয়ে অস্বস্তি জেঁকে বসেছে। সিঙ্গাপুরে এসব শ্রমিকরা রয়েছেন ভিড়ের মধ্যে গাদাগাদি করে। ওদিকে হাজার হাজার মাইল দূরে পরিবারের সদস্যরা আছেন তাদের ঘরে ফেরার অপেক্ষায়।
সিঙ্গাপুরে ৯০ জনকে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একই নির্মাণস্থলে কর্মরত ৫ বাংলাদেশি শ্রমিকও আছেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’ বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছে।
সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে ফিলিপিনো ও ইন্দোনেশীয় গৃহকর্মীদের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক বাংলাদেশি গৃহকর্মীরও এ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। খবর বিডিনিউজের
দক্ষিণ এশিয়া থেকে সিঙ্গাপুরের আসা নির্মাণশ্রমিকরা সাধারণত ১২ শয্যার ডরমিটরিতে থাকেন, যেখানে তাদের সবার জন্য একটাই বাথরুম থাকে। কারাগার ও ক্রুজ শিপের মতো মানুষের ভিড়েই এই ভাইরাস ছড়ায় বেশি।
এসব নির্মাণ শ্রমিকদের মধ্যে অন্যতম ২৪ বছর বয়সী কাকন মিয়া বলেন, তার অনেক বন্ধু দেশে ফিরে গেছেন, কারণ সেখানে ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কোনো ঘটনা নেই। সিঙ্গাপুরকে বিপদমুক্ত ঘোষণার পরই তারা ফিরবেন।
কয়েকজন সহকর্মীর পাশে দাঁড়িয়ে মাতৃভাষায় এই তরুণ বলেন, আমরা এখন আছি। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হলেই দেশে ফিরে যেতে পারি।
সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাই কমিশন বলছে, তারা অনলাইনে শ্রমিকদের দেশে ফিরে যেতে বারণ করছেন। একইসঙ্গে সশরীরে ডরমিটরিতে গিয়ে তাদের মধ্যে মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ ও বাংলায় লেখা সতর্কতামূলক প্রচারপত্র বিলি করছেন।
হাই কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের দেশে ফেরা ঠেকাতে আমরা বেশ সক্রিয় রয়েছি। খামোখা অযৌক্তিক ভয় যাতে তারা না পান সে বিষয়ে আশ্বস্ত করছি।
সিঙ্গাপুরে আসা-যাওয়ায় বাংলাদেশ সরকার কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। হাই কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, এই নগররাষ্ট্রে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি কাজ করে।
সিঙ্গাপুরের উন্নত চিকিৎসা সেবা এবং দিনে দুই বার তাপমাত্রা মাপা ও সন্দেহভাজনদের আলাদা করে রাখার মতো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ তাদের থেকে যাওয়ার আস্থা যুগিয়েছে বলে বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান।
রউফ নওশার্দ লেম্বু রোডে একটি ট্রাভেল এজেন্সি চালান, যেখানে সাধারণ বাংলাদেশি শ্রমিকরাই সেবা নিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, গত ১৪ দিনে বুকিং ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এর মধ্যে অনেকেই একদিনের নোটিসে ঢাকায় ফিরতে চাচ্ছেন। আগে কখনোই এমন হয়নি। তারা সবসময় পরিকল্পনা করে দেশি ফিরতো। এখন তারা তাৎক্ষণিকভাবে সিঙ্গাপুর ছাড়তে চায়।
ঢাকার সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইটে জায়গা না থাকায় অনেককে ব্যাংকক বা কুয়ালালামপুর হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।