সিএএ: বাংলাদেশি ছাত্রীকে ভারত ছাড়ার নোটিশ

140

সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে অংশ নেওয়ার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক বাংলাদেশি ছাত্রীকে ভারত ছাড়তে বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রতিবেশী দেশটিতে সহিংসতা উসকে দেওয়া নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) নিয়ে ক্যাম্পাসে এক বিক্ষোভের কয়েকটি ছবি সম্প্রতি ফেসবুকে পোস্ট করার পর তাকে এ নির্দেশ দেওয়া হয় বলে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
কুষ্টিয়ার মেয়ে আফসারা আনিকা মিম ২০১৮ সালে বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কলাভবনের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইনে পড়তে পশ্চিবঙ্গে যান।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, নাগরিকত্ব সংশোধন আইনবিরোধী ওই বিক্ষোভের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার পর থেকে ওই ছাত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ট্রলের’ শিকার হচ্ছেন। গত ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নতুন আইনটির বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
১৪ ফেব্রূয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদেশি নিবন্ধকের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে আফসারাকে চিঠি পাঠিয়ে ভারত ছাড়তে বলা হয়। নোটিসে বলা হয়, স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে ভারতে পড়তে এসে ‘সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত হয়ে’ বাংলাদেশি পাসপোটধারী আফসারা আনিকা মিম তার ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করেছেন। তাকে ১৫ দিনের মধ্যে দেশ ছাড়তে নোটিসে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে।
বিশ্বভারতীর এক ছাত্র বলেন, ‘যদি বিদেশি ছাত্ররা প্রতিবাদ করতে না পারে বা তার বন্ধুদের আন্দোলন নিয়ে মন্তব্য না করতে পারে তাহলে আমরা কি একটি গণতান্ত্রিক দেশে বাস করছি? খবর বিডিনিউজের
তবে বুধবার নোটিস হাতে পেয়ে আফসারা শিক্ষা জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ২০ বছরের এই তরুণী বলেন, ‘বিভাগ থেকে চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চরম ক্ষতির এক ঘোর অনুভূতি আমাকে গ্রাস করেছে। শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন থেকে বিশ্বভারতীতে পড়তে আমি ভারতে এসেছিলাম। আমি জানি না এখন আমার কি হবে’। তবে কি অপরাধে তাকে এমন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে তা এখনও বুঝতে পারছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কৌতুহলের বশে বন্ধুদের অংশ নেওয়া প্রতিবাদ মিছিলের কয়েকটা ছবি পোস্ট করেছিলাম। কিন্তু যখন আমি দেখলাম বিশেষ একদল লোক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাকে নিয়ে ট্রল করছে, সাথে সাথেই আমি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করেছি। সত্যিই আমি কোনো দোষ করিনি’।
আফসারার এক বন্ধু বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওই পোস্টে অন্তত আড়াইশ জন তাকে ‘অ্যান্টি ন্যাশনাল’ তকমা দিয়েছে। এক কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করে টেলিগ্রাফ বলছে, কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশন আফসারাকে ভারত ছাড়ার নোটিস দেওয়ার বিষয়ে কিছু জানে না। তবে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা জানি; তাকে নজরে রাখা হয়েছে। বিষয়টি ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এসব ক্ষেত্রে আমাদের খুব একটা কিছু করার থাকে না’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের একটি অংশের সন্দেহ, আফসারার বিষয়ে কেউ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছে। আফসারাকে কেন্দ্রীয় সরকার দু’টি ই-মেইল পাঠিয়েছে বলে এক কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করে টেলিগ্রাফ জানিয়েছে। ১৪ ফেব্রূয়ারি পাঠানো প্রথম মেইলে তাকে ১৯ ফেব্রূয়ারি তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলা হয়। পরে ২০ ফেব্রূয়ারি আরেক মেইলে তাকে ২৪ ফেব্রূয়ারি কার্যালয়ে তলব করা হয়।
আফসারা বলেন, ‘আমি নিয়মিত মেইল খুলে দেখি না। আমি চিঠি পাওয়ার পর মেইল খুলে দেখেছি’।
এক শিক্ষক বলেন, ‘ওই ছাত্রীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়নি বা এমনকি কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। নোটিসের তারিখ দেওয়া আছে ১৪ ফেব্রূয়ারি। এর অর্থ হলো মেয়েটিকে যখন দেখা করতে বলা হয়েছে তখনই সেটি প্রস্তুত করা হয়েছে’। ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাতে আফসারার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার কলকাতায় বিদেশি নিবন্ধকের আঞ্চলিক কার্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল।