সাহ্রি বরকত পূর্ণ খাবার

58

রমজান মাস আল্লাহর ইবাদত এবং হুকুম পালনের ব্যাপারে দৃঢ়তা প্রকাশের মাস। রমজান মাসের চাঁদ উদয় হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর বান্দাদের খানা পিনা ও ঘুমের সময় সব কিছুতে পরিবর্তন হয়ে যায়। অন্যান্য মাসে যখন পৃথিবির মানুষজন ঘুমে মগ্ন,রমজান মাসে ওই সময়ে প্রত্যেক মুসলমানের ঘরে খাবার দাবারের আয়োজন চলে। এটা কোন আশ্চর্যের বিষয় নয়, প্রকৃত কথা হলো সত্যিকার মুসলমান তারাই যারা আল্লাহর আদেশ নিষেধ যথাযথ মেনে চলে। এভাবে একটি মাস আল্লাহর হুকুম পালনের পুরোপুরি অনুশীলনের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর খঁটি বান্দা হিসেবে পরিণত হয়। সারা দিন রোজা রেখে রাতে তারাবিহ আদায়ের পর শেষ রাতে জাগ্রত হয়ে আবার রোজা আদায়ের প্রস্তুতি স্বরূপ সাহরি গ্রহণ,এসব সিয়াম সাধনার প্রকৃত শিক্ষা।
‘সাহ্রি’ শব্দটি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ হল ফজর তথা সুবেহ সাদিকের পূর্বে দিনের বেলায় রোজা পালনে শক্তি অর্জনের লক্ষে খাবার গ্রহণ করা। ইসলামি শরীয়তের পরিভাষায়, রোজার উদ্দেশ্যে রাতের শেষভাগে যে পানাহার করা হয়, তা হল সাহ্রি। রোজা আদায়ের জন্য শেষ রাতে সাহ্রি গ্রহণ করা সুন্নাত। সাহ্রি গ্রহণের দ্বারা রোজাদার শারীরিকভাবে সবল থাকে, দৈনন্দিন কার্যাদি সম্পাদনে অসুবিধা হয় না এবং রোজা পালনে সক্ষমতা বহাল থাকে। ইসলামি শরীয়তে সাহ্রির অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। যেমন হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে, হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীয়ে আকরাম সালাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা সাহ্রি গ্রহণ কর, কেননা সাহ্রি খাওয়াতে বরকত নিহিত রয়েছে। রমজান মাসে রোজা উপলক্ষে সাহ্রি গ্রহণ, রাব্বুল আলামীনের রেযামন্দি ও ফিরিশতাগণের দোয়া অর্জনের কারণ হিসেবে সাব্যস্ত। হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে, হুযূর আকরাম রাসূলে পাক সালাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসালাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফিরিশ্তারা সাহ্রি গ্রহণকারীদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন।
শেষরাতে সাহ্রি গ্রহণ উম্মতে মুহাম্মদী ও অন্যান্য উম্মতের মধ্যে পার্থক্যের নিদর্শন। হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে, হযরত আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সরকারে দু’আলম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমাদের ও আহ্লে কিতাব তথা ইহুদী-নাসারাগণের রোজার মধ্যে পার্থক্য হল সাহ্রি গ্রহণ। (অর্থাৎ আমরা সাহ্রি গ্রহণ করি আর তারা সাহ্রি গ্রহণ করতো না।) নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজে সাহ্রি গ্রহণ করতেন এবং তার সাহাবীগণও সাহ্রি খেয়ে রোজা পালন করতেন। সুতরাং প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর উচিত নবী করীম ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাত অনুসারে সাহ্রি খেয়ে রোজা পালন করা। তদুপরি শেষরাত সাহ্রি গ্রহণের সময় নামাযে তাহাজ্জুদ আদায় করার এক দুর্লভ সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায়। শেষরাত হল আল্লাহ তা’আলার বিশেষ তাজাল ও খাস রহমত লাভ করার বিশেষ মুহূর্ত। সুতরাং শেষরাতে সাহ্রি গ্রহণের ওসিলায় পবিত্র রমজান মাসে ফজরের নামাজ সুবহে সাদিকে অর্থাৎ সময়মত আদায় করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। পূর্ণ একমাস সময়মতো জামাত সহকারে ফযরের নামাজ আদায়ের অভ্যাস রপ্ত হয়। আল্লাহর দরবারে অশেষ শোকর, রমযান মাসে প্রতিটি মসজিদে ফজরের নামাজ সহ প্রত্যেক নামাজের সময় মুসল্লিতে ভরপুর দেখা যায়। মহিলাগণও আপন আপন গৃহে নামাজ আদায় করে থাকেন। এ অভ্যাস অনেকেরই রপ্ত হয়ে যায় রোজার সাহরির কারণে।
সাহ্রি খাওয়ার পর রোজার নিয়ত করে নিতে হবে। যদিও সাহ্রি খাওয়াও নিয়তের অন্তর্ভুক্ত তবে মুস্তাহাব হলো নিয়ত করা ।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সাহ্রি গ্রহণ করে জামাতসহকারে ফজরের নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।