সাহিত্য জগতের প্রতিভাবান আরকানুল ইসলাম

54

আরকানুল ইসলাম মূলত একজন ছড়াকার। প্রায় দুই দশক পূর্বেই ছড়া দিয়ে লেখালেখির জগতে তাঁর অভিষেক। এখনের মতো পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকা সত্তে¡ও বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিনে লিখতেন দু’হাত ভরে। সাহিত্য বিষয়ক সভা-সেমিনার মাতিয়ে তুলতেন লেখা পাঠের মধ্য দিয়ে। শুরু থেকেই তাঁর লেখালেখির মূল উপজীব্য অন্যায়, অনিয়ম, অসঙ্গতি। অসঙ্গতির প্রতিরোধে শব্দ সৈনিকের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়ে শত্রæ দলের সম্মুখে নিক্ষেপ করেন শব্দ বারুদ। অসত্যের বিপরীতে জনসম্মুখে উন্মোচন করে দেন সত্যের চেহারা। ‘কবিরা প্রতিবাদী হয়’ বলে আমাদের মাঝে যে কথাটি প্রচলিত আছে; আরকানুল ইসলাম যেন তার বাস্তব উদাহরণ। এভাবে ছড়া সাহিত্যে বিচরণের মধ্য দিয়ে অল্প সময়ে প্রতিশ্রæতিশীল এই কবি বিভিন্ন মহলে লাভ করেন ব্যাপক পরিচিতি।
আমাদের শিক্ষাঙ্গনে আজ বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্কুল পর্যন্ত সর্বত্র উদ্বেগ, উৎকন্ঠা। লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতির যাঁতাকলে আজ পৃষ্ট হচ্ছে আবরার ফাহাদের মতো মেধাবী ছাত্রের জীবন! আবরারকে যারা পিটিয়ে হত্যা করেছে তারাও মেধাবী, জিপিএ-৫ ধারী। তাদের মধ্যে শুধু মানবতা, নৈতিকতাটুকু নেই। যার কারণে তারা দিনের এক চতুর্থাংশের মতো লম্বা সময় আবরারের উপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে তাঁকে হত্যা করতে পেরেছে। আরকানুল ইসলাম শিক্ষাঙ্গনের বিষয়টিকে তাঁর ছড়ায় তুলে ধরেছেন এভাবে-
“জিপিএ ফাইভ ছড়াছড়ি হ্রাস নেই
কলেজগুলোয় মেধাবীর আবাস নেই
হাজার হাজার পরীক্ষার্থী পাস নেই”
সাহিত্যের জগতে প্রবেশের পর বেশিরভাগ সময় ছড়া-কবিতা নিয়ে কাজ করে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রকাশিত আরকানুল ইসলামের সবকটি গ্রন্থই উপন্যাস! অমর একুশে বইমেলা-’১৫ তে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কিশোর উপন্যাস “ওরা পাঁচজন”। শব্দশিল্প প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ৬৪ পৃষ্টার উপন্যাসটিতে ওঠে এসেছে ধর্মীয় কুসংস্কার, ক‚পমÐুতার কথা। এই উপন্যাসটি সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও সক্ষম হয়েছিল। এই প্রথম উপন্যাসটিই বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেওয়ায় লেখককে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।এরপর বর্ষপরম্পরায় প্রকাশিত হতে থাকে তাঁর কিশোর উপন্যাস- “কিশোরী ইমু” “তিনবন্ধুর জ্বিনবন্ধু” “ছোটমামার বড় বিপদ” “গ্যাং লিড়ার”। তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাসটি (কিশোরী ইমু) দেশপ্রেমসহ বিভিন্ন বিষয়ের চমকপ্রদ কাহিনী দ্বারা রচিত হলেও বাদ যায়নি অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করার বিষয়টি। এই উপন্যাসে তিনি কিশোর মনে দেশপ্রেম জাগানো, কাজের মূল্যায়ন, পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীলতার মনোভাব জাগ্রত হবার ম্যাসেজ দিতে চেয়েছেন। একটি মূর্তি নিয়ে মিনার গংয়ের দুঃসাহস দেখানো শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনী নিয়ে রচিত লেখকের তৃতীয় উপন্যাস “তিনবন্ধুর জ্বিনবন্ধু”।
আরকানুল ইসলামের চতুর্থ কিশোর উপন্যাস “ছোটমামার বড় বিপদ”। এই উপন্যাসে একজন ছোটমামা বাল্যবিবাহ, সাঁপুড়ের ষড়যন্ত্র বুদ্ধি দিয়ে প্রতিহত করেন। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে চেয়ারম্যান বাহিনীর ফাঁদা মৃত্যুফাঁদ থেকে উদ্ধার করার দুঃসাহসও দেখিয়েছেন উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ছোটমামা। অ্যাডভেঞ্চারপূর্ণ কাহিনী দিয়ে লেখক এসব বিষয়কে বর্নণা করেছেন নান্দনিক শব্দ চয়নে। আরকানুল ইসলামের পঞ্চম কিশোর উপন্যাস “গ্যাং লিড়ার” নামটিতেই একধরণের কৌতুহল বিরাজমান। কথিত বড় ভাইয়ের ছত্রছায়ায় উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রণিদের অপরাধের কাহিনীর মাধ্যমে উপন্যাসে বর্ণিত হয়েছে বর্তমান সমাজের বাস্তব অবস্থা। এই উপন্যাসে তরুণদের প্রলোভিত করে ইয়াবার মতো সমাজবিধ্বংসী দ্রব্যের কারবারে ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ ওঠেছে কথিত বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে।
পাঠ শেষে বর্তমান সময়ের বাস্তব চিত্র হয়ে হাজির হবে পুরো উপন্যাসের সারাংশ। অমর একুশে বইমেলা-২০২০ এ অক্ষরবৃত্ত প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হবে তাঁর লেখা ষষ্ঠ কিশোর উপন্যাস ‘বইচোরের সন্ধানে’। এখন পর্যন্ত প্রতিভাবান এই লেখকের প্রকাশিত উপন্যাস এই পাঁচটি। যা ২০১৫ সাল থেকে বর্ষপরম্পরায় প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ম্যাগাজিনে ধারাবাহিকভাবে তাঁর একাধিক উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে।
উপন্যাস রচনা করতে গিয়ে অনেকের হাত যেখানে সংকুচিত; আরকানুল ইসলামের হাত সেখানে ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। প্রতিবছর নতুন নতুন কিশোর উপন্যাস প্রকাশের ধারাবাহিকতা লেখকের সেই কৃতিত্বের পরিচয় বহন করে।
আরকানুল ইসলাম তাঁর সাহিত্যে সময়কে তুলে ধরতে পছন্দ করেন। লেখকের কাছে হয়তো এর আলাদা কোন গুরুত্বও থাকতে পারে। অন্যায়, অনিয়মকে সাহিত্যের রূপ দিয়ে এর জোরালো প্রতিবাদ জানাতে এই লেখক সিদ্ধহস্ত। উপন্যাসের ক্ষেত্রে লেখক পাঠকদের কাহিনীর ধারাবাহিকতায় ডুবিয়ে রেখে টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে নিয়ে যান পাঠ সমাপ্তির দিকে। সমকালীন বাস্তবতাকে সাহিত্যের আঙ্গিকে তুলে ধরতে পারাটা তাঁর লেখালেখির প্রধানতম বৈশিষ্ট্য। তাঁর কিশোর উপন্যাসগুলোতে কিশোর মনে স্বপ্ন জাগার পাশাপাশি সঠিক পথের দিশা পাবার মন্ত্র রয়েছে বলে আমি মনে করি।
আরকানুল ইসলামকে ছড়াকার বা ঔপন্যাসিকের গন্ডিতে আবদ্ধ না রেখে শিশুসাহিত্যিক বলাটাই যথাযথ মনে করি।
কেননা, কিশোর কবিতা, গল্পসহ সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও তিনি বেশ-কম বিচরণ করেছেন, করছেন। ‘লিমেরিক’ ভক্তদের কাছেও আরকানুল ইসলাম একটি পরিচিত পাঠ্য। যদিওবা লেখকের অতিরিক্ত ভালোবাসার জায়গাটা উপন্যাস। সাহিত্যের এই ক্ষেত্রটিকে অনেকেই এড়িয়ে কিংবা কঠিন মনে করেন। যার কারণে লেখক এই ক্ষেত্রটিতে পাল তুলেছেন। আরকানুল ইসলাম শুধুমাত্র একজন লেখকই নন, একজন সম্পাদক ও সংগঠকও। সম্পাদনা করেছেন প্রতিবাদী শব্দ কাগজ ‘ত্রৈমাসিক নক্ষত্র’ ‘বারুদ’ ‘মাসিক বাঁশখালী সংবাদ’। প্রতিশ্রæতিশীল এই কথাসাহিত্যিক বর্তমানে জাতীয় অনলাইন পত্রিকা ‘নাগরিক নিউজ ডট কম’ এর সম্পাদক ও আঞ্চলিক নিউজ পোর্টাল ‘বাঁশখালী টাইমস ডট কম’ এর নির্বাহী সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করছেন।