সার্কিট হাউসের সামনে মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর গড়ুন

53

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সামনের জায়গাকে মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর ও স্মৃতিপার্ক করার জন্য আহব্বান জানিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। তিনি বলেন, নগরীর কেন্দ্রস্থলে বাণিজ্যিক পার্ক নয়, সবুজ প্রান্তর চাই। যেখানে মানুষ প্রাণভরে শ্বাস নিবে, হাঁটবে এবং সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবে। কারণ চট্টগ্রামের এ পুরানো সার্কিট হাউস এবং সামনের প্রান্তর মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের অনেক নির্যাতন, জুলুমের সাক্ষী।
গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের আব্দুল খালেক মিলনায়তনে একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম রচিত ‘আত্মকথা’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমি ও বদিউল আলম সহযোদ্ধা হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। চট্টগ্রামে একই সুইসাইড মিশনের লক্ষ্য নিয়ে আমরা আসকারদীঘির পাড়ে একটি বাড়িতে ঘাঁটি করি। কিন্তু অপারেশনের পূর্বে আমার প্রস্তুতি মিটিং এর সময় হঠাৎ করে পাক বাহিনী পুরো বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে এবং অবিরামভাবে গুলি ছুঁড়তে থাকে। ওই অবস্থায় সেখানে উপস্থিত সহযোদ্ধারা সকলে দ্রুত সরে পড়লেও আমি ও বদিউল আলম দোতলার উপর আটকা পড়ে যাই। আমি তাকে দ্রুত সরে যেতে বললেও সে প্রত্যাখ্যান করে বলে, আপনাকে ছাড়া কোথাও যাব না। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ভেন্টিলেটার এর ফাঁক দিয়ে দোতলা থেকে পার্শ্ববর্তী বড় নালায় ঝাঁপ দেই। এতে আমি পায়ে ভীষণভাবে আঘাত পাই এবং স্থানীয় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সহায়তায় সেদিন আল্লাহপাক আমাদের দুজনকে নতুন জীবন দান করেন। এ কথাগুলো ইতিহাস, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ইহা দলিল হয়ে থাকবে। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ একুশে পদকপ্রাপ্ত জাতীয় অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক। তিনি বলেন, বদিউল আলম রচিত এ বই আমি পড়েছি। তিনি খুবই সাবলীলভাবে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেছেন, কিন্তু একটি বিষয় আমাকে আন্দোলিত করেছে, তা হলো মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোতভাবে সাহায্যকারী সাতকোটি মুক্তিপাগল গণমানুষের সর্বোচ্চ সহায়তার কথা তিনি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছেন। নিজ গৌরব গাঁথা বর্ণনা না করে মুক্তিযুদ্ধকালে কোন এক পৌঢ়পিতার সর্বোচ্চ ঝুঁকি নেয়ার কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, এরা হচ্ছেন বাংলাদেশের রাজনীতির শেষ সোনালী প্রজন্ম। যারা ষাট এর দশকের অগ্নিঝরা দিনের রাজপথে ছিলেন, দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এবং ৭৫ পরবর্তী অন্ধকার সময়ে আলোর জন্য লড়াই করে এদেশে গণতন্ত্র এনেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম বলেন, চট্টল বীর মহিউদ্দিন চৌধুরীর একনিষ্ঠ সহকর্মী এই মুক্তিযোদ্ধা যেভাবে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিজ এলাকায় স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক কাজ করেছেন তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।
মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা নঈম উদ্দিন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনসুর, মুক্তিযোদ্ধা সিএনসি জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল আলম, মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ ইউনুস, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চু এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী প্রমুখ।