সাম্প্রদায়িক মন্ত্রে আবারও দিল্লি দখল করতে চায় মোদি

79

ভারতে লোকসভা নির্বাচন চলছে। এ নির্বাচনকে ঘিরে ভারতের রাজনীতি অতীতের যেকোন সময় থেকে উত্তপ্ত বেশি। ২০১৪ সালের মতোই হিন্দুত্ববাদের শ্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি সরকার। ভারতের উত্তর প্রদেশের বিজেপি নেতা রঞ্জিত বাহাদুর শ্রীবাস্তব বলেছেন, মুসলিমদের এ দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভোট দিন। উত্তর প্রদেশের বারাবাঁকিতে এক নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দেয়ার সময় তিনি ওই মন্তব্য করেন। বর্ণবাদী ও কট্টর হিন্দু মৌলবাদী এ নেতা আরও বলেন, গত পাঁচ বছরে মুসলিম স¤প্রদায়ের মনোবল ভেঙে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেজন্য আপনারা যদি মুসলিমদের ধ্বংস করতে চান তাহলে নরেন্দ্র মোদিকে ভোট দিন। দেশভাগের পর থেকে ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা দ্রæতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং তাদের ভাষায় এখনই না আটকানো গেলে ভারত একদিন মুসলমানদের দখলে যাবে। বিজেপি’র ওই নেতা বলেন, লোকসভা নির্বাচনের পরে চীন থেকে দাড়ি কাটার মেশিন নিয়ে আসা হবে। সেই মেশিন দিয়ে ১০/১২ হাজার মুসলিমের দাড়ি শেভ করা হবে। এরপর তাদেরকে জোর করে হিন্দুধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হবে। নরেন্দ্র মোদি বা বিজেপিকে ভোট না দিলে এর বিপরীতটাও হতে পারে। সেজন্য ওই ধরনের অবস্থা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এবং মুসলিমদের ধ্বংস করতে মোদি ও বিজেপিকে ভোট দিন। বিজেপি নেতার ওই মন্তব্য প্রসঙ্গে শনিবার পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতার ঐতিহ্যবাহী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মাতিন বলেন, গোলওয়ালকর, হেডগেওয়ারের বইগুলো পড়লে বোঝা যাবে তাতে স্পষ্ট লেখা আছে যে মুসলিম, কমিউনিস্ট, খ্রিস্টান তারা জাতির অংশ নয় এবং তাদের ধ্বংসের কথা অনেক আগেই বলা হয়েছে। এটা হয়তো তারা এখন নতুন ভাষায় বলছে। চীন থেকে বেøড নিয়ে এসে দাড়ি কাটা হবে, ধর্মান্তরিত করা হবে, এগুলো হচ্ছে নতুন ভাষা। যদি ধর্মান্তরিত করাই হয় তাহলে তাদেরকে হিন্দু ধর্মের কোথায় ঠাই দেয়া হবে? ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ, শূদ্র না অতি শূদ্র কোন স্তরে তাদেরকে স্থান দেয়া হবে?’ বিজেপি নেতা যা বলেছেন তার স্বচিত্র প্রতিবেদন দেখেছে বিশ্ববাসী গত ৫ বছরে। ক্ষমতায় বসার পর থেকেই একনীতিতে চলছে দলটি। ভারতজুড়ে হিন্দুত্ববাদের বিস্তার, জাতীয়তা রক্ষার নামে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা, মুসলিম, খ্রিস্টান ও সংখ্যালঘু সব গোষ্ঠীর ওপর নানাবিধ নির্যাতন, গো-রক্ষার নামে মানুষ হত্যা, ঘর ওয়াপেসির নামে জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণ, লাভ জিহাদের নামে মিথ্যা মামলা ও হয়রানি এগুলো বিজেপি সরকারের হিন্দুত্ববাদী প্রজেক্টের কিছু নমুনামাত্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর তার দল বিজেপি তথা সংঘ পরিবারের মূল দর্শন হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার প্রয়াস নিয়ে দেশজুড়ে তুলকালাম অবস্থা সৃষ্টি হয়। গোমাংস খাওয়া বা নিছক গো-মাংস খেয়েছে এই ধারণার উপর ভিত্তি করে মানুষ এমনকি শিশুদের পর্যন্ত হত্যা করা হয়। ইউনিভার্সিটি-কলেজগুলোতে ছাত্ররা নিগৃহীত হয়। সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে কাজ করতে এবং কুসংস্কার দূর করতে গিয়ে বুদ্ধিজীবীরা হত্যা ও গণ-গ্রেফতারের শিকার হন। হিন্দুত্ববাদের নয়া উত্থান হিন্দুধর্ম আর হিন্দুত্ববাদ এক নয়। যে হিন্দুত্ববাদের নীতি নিয়ে মোদি সরকার দেশ চালাচ্ছে, এর তাত্তি¡ক গুরু হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা ও হিন্দু স্বার্থের প্রবক্তা বিনায়ক দামোদার সাভারকার। ১৯২৩ সালে তিনি তার এই তত্ত¡ প্রকাশ করেন। তার ‘হিন্দুত্ববাদ’ শব্দটা ভারতের সর্ববৃহৎ হিন্দু জাতীয়তাবাদী জোট ‘সংঘ পরিবার’ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো বেশ জনপ্রিয় করে তোলে। আর এর বাস্তবিক প্রয়োগ হচ্ছে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর। যে হিন্দু নয় বা হিন্দুদের আধিপত্য মেনে নেয় না, তার কোন স্থান হিন্দুত্ববাদে নেই। হিন্দুধর্ম চরিত্রগতভাবে গণতান্ত্রিক এবং এমন এক বহুদলীয় ও বৈচিত্র্যময় সমাজের সমার্থক, যা অন্যান্য গোষ্ঠীর মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদ মনোলিথিক সমাজে বিশ্বাসী, যেখানে হিন্দু ধর্মীয় রীতিনীতি, আচার, প্রথা ও ঐতিহ্যের বাইরে অন্য কিছু থাকবে না। ভারতে প্রায় ৮২ শতাংশ মানুষ হিন্দুধর্মের অনুসারী। তবে তারা সবাই হিন্দুত্ববাদের সমর্থক নয়। জনগোষ্ঠীর ক্ষুদ্র একটি অংশই মাত্র হিন্দুত্ববাদের সমর্থক। মোটকথা হিন্দুধর্ম এক অরাজনৈতিক জীবনধারা। এর কোন সংগঠন নেই, কাঠামো নেই, প্রাতিষ্ঠানিক গঠনতন্ত্র নেই। অন্যদিকে, হিন্দুত্ববাদ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের এক জটিল মিশ্রণ থেকে সৃষ্ট একটি রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী মতবাদ। এটা ধর্মও নয়, আবার জীবনধারাও নয়। এটা একটা সাম্প্রদায়িক ও আগ্রাসী রাজনৈতিক দর্শন, যার মধ্যে জিঙ্গোইজম বা উগ্র স্ব দেশপ্রেম, উৎকট জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় সত্তা জটিলভাবে মিশে আছে। হিন্দুত্ববাদ জাতীয়তাবাদকে একটা নির্দিষ্ট ধর্মীয় বিশ্বাস ও আনুগত্যের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার বিপক্ষে দাঁড়ায়। আর এসব সবকিছুরই প্রমাণ দিয়েছে মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। ২০১৪ সালে ক্ষমতার আসার পর থেকে বিজেপি একের পর এক সা¤প্রাদায়িক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। ফলে মোদির যুগকে ভারতে হিন্দুত্ববাদের নব উত্থানই বলা যেতে পারে। কী কী ঘটেছে মোদির আমলে? ভারত রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হলেও মোদির আমলে এর প্রমাণ পায়নি বিশ্ব। হিন্দু ধর্ম ছাড়া সকল ধর্মের মানুষই মোদির আমলে নিষ্পেষিত ও নির্যাতিত হয়েছে, হচ্ছে। বিশেষ করে মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের নতুন নতুন রূপ বিশ্ব দেখেছে এই সরকারের আমলে। সুকৌশলে, সুচিন্তিত পরিকল্পনা করে মুসলিমদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে তার দল। শুধুমাত্র গোমাংস খাওয়ার দোহাই দিয়ে মানবতার ইতিহাসের জঘন্যতম কাজটি করেছে সংঘ পরিবার। একটা শিশুর জীবনও রক্ষা পায়নি এই তথাকথিত গো-রক্ষকদের হাত থেকে। উত্তপ্র দেশ বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপির বিপুল সাফল্যের পর যোগী আদিত্যনাথকে যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করা হলো, তখনই স্পষ্ট বোঝা গেলো যে, ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি আরও আগ্রাসী হয়ে উঠছে। প্র দেশটিতে অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটছে নানাভাবে। কেন্দ্রে মোদী আর উত্তর প্রদেশে যোগী— এই দুইজনের নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদী সংঘ পরিবার ঝাঁপিয়ে পড়েছে গোটা দেশে। গো-রক্ষার নামে কট্টর মনোভাব, গরু পরিবহণকারীদের গণপিটুনি। তাতে মারাও গেছে চার পাঁচজন। তাঁদের অপরাধ, তাঁরা গরু বিক্রির জন্য লরিতে গরু নিয়ে যাচ্ছিলেন। রাস্তা ঘাটে নজর রাখছে ‘অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াড’। হিন্দুত্ববাদের পাহাড়াদার ‘অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াড’ হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় মোদির আমলে আত্মপ্রকাশ করে ‘অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াড’। নারীর সুরক্ষার লক্ষ্যে যোগী গঠন করেছেন ‘অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড’। পার্ক, স্কুল-কলেজের গেট, রাস্তা-ঘাটে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে দেখলেই চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। এ সংগঠনটি গোটা দেশটাকে হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভারতজুড়ে নৈরাজ্য চালিয়েছে। উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি খ্রিষ্টান পাদ্রী ও চার্চগুলিও। কেরালা, মধ্যপ্র দেশ, উত্তরপ্র দেশ, গুজরাট, ছত্তিশগড় রাজ্যের চার্চগুলিতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন লাগায় সংঘ পরিবারের সদস্যরা। মারধর করে চার্চের পাদ্রী এবং নানদের। অভিযোগ, খ্রিষ্টানরা জোর করে বা লোভ দেখিয়ে নাকি হিন্দুদের, বিশেষ করে উপজাতি স¤প্রদায়ের লোকদের খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করছিলো।

তাই দেশে মুসলিমদের মতো খ্রিষ্টান জনসংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। একটি চার্চে গৈরিক পতাকা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে গির্জার পুরুষ ও মহিলা সদস্যদের দৈহিক হেনস্থা করা হয়। বাদ যায়নি বিদেশিরাও। আফ্রিকানদের ওপর হামলার ঘটনা জাতিবিদ্বেষের নগ্ন নজির। স¤প্রতি দিল্লির উপকণ্ঠে নয়ডায় নাইজেরীয় এক শিক্ষার্থী এবং কেনিয়ার এক তরুণীকে নিগ্রহের ঘটনায় নতুন দিল্লির আফ্রিকান দেশগুলির রাষ্ট্রদূতরা উত্তর প্রদেশের যোগী সরকার এবং কেন্দ্রের মোদী সরকারকেই মূলত দায়ী করেছেন। এই প্রসঙ্গে উঠে আসছে, গত দু’বছরে রুয়ান্ডা, উগান্ডা ও কংগ্রেসসহ অনেক আফ্রিকান দেশের নাগরিকদের উপর হিংসাত্মক বর্ণবাদী ঘটনার প্রসঙ্গ। ২০১৫ অসহিষ্ণুতার বছর, লজ্জার বছর ২০১৫ সাল ভারতের ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে অসহিষ্ণুতার বছর হিসেবে। ধর্মীয় এবং সা¤প্রদায়িক অসহিষ্ণুতা, আর তার থেকেও বিপজ্জনক এক রাষ্ট্রীয়, প্রশাসনিক অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটেছে বছরজুড়ে। আমির, শাহরুখ এবং সালমান খান। সারা দেশে অসম্ভব জনপ্রিয়তা তাদের। কিন্তু যেই তাঁরা দেশের অসহিষ্ণুতার পরিবেশ নিয়ে মুখ খুললেন, সঙ্গে সঙ্গে আসমুদ্রহিমাচল তাঁদের শত্রু হয়ে গেল। তাঁদের মুসলিম পরিচয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কটাক্ষ শুরু হয়ে গেল, ভারত যখন এতই খারাপ দেশ বলে মনে হচ্ছে, তাঁরা যেন এ দেশ ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তানে গিয়ে থাকেন। ফেসবুক-টুইটারে, হোয়াটসঅ্যাপে ফরোয়ার্ড করা রসিকতায় ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপ থেকে শুরু করে অশালীন আক্রমণ শুরু হয়ে গেল তাঁদের বিরুদ্ধে। এতটাই, যে শাহরুখ খান তাঁর সর্বশেষ সিনেমার প্রচারে বেরিয়ে নিজের মন্তব্যের জন্য দুঃপ্রকাশ করে বলতে বাধ্য হলেন যে, না, সবকিছু ঠিক চলছে ভারতে! অথচ এমন কী বলেছিলেন তাঁরা? উত্তরপ্রদেশের দাদরি নামের এক অখ্যাত গ্রামে একজন বর্ষীয়ান মানুষকে ক্ষিপ্ত জনতা পিটিয়ে মেরে ফেলেছিলো গ্রেফ এই সন্দেহে যে তিনি নিজের বাড়িতে গোমাংস খাচ্ছেন। এই যে সা¤প্রদায়িক জনরোষ, এর প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিল কিন্তু ভারতের মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা এবং এমনকি জম্মু-কাশ্মীরের মতো মুসলিম ধান রাজ্যে গোমাংসের ওপর জারি করা সরকারি নিষেধাজ্ঞা। তার পরেই কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থনে গো-হত্যা বন্ধ করতে তৎপর হয়ে উঠেছিল হিন্দুত্ববাদীরা। ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শ, তার সংবিধানে স্বীকৃত ব্যক্তিমানুষের অধিকার, কোনো কিছুরই তারা তোয়াক্কা করেনি। সেই প্রেক্ষিতেই শাহরুখ খান বলেছিলেন, ‘ দেশ যেভাবে এক অন্ধকার সময়ের দিকে এগোচ্ছে, তা আরও পিছিয়ে দেবে ভারতকে।’ তার প্রতিক্রিয়ায় তাঁকে শুনতে হল, তিনি ভারতে থাকলেও তাঁর হৃদয় রয়েছে পাকিস্তানে! আরেক তারকা আমির খান তাঁর স্ত্রী কিরণ রাওয়ের একটি মন্তব্য উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ক্রমশ এমন পরিস্থিতি হচ্ছে যে ভবিষ্যতে ভারতে থাকা যাবে কিনা, ওদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী হবে, সে নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা হয়। সহজ সমাধান হিসেবে আমির খানকেও সারা দেশ পরামর্শ দিল, সপরিবার গিয়ে পাকিস্তানে থাকতে। এর বিপরীত অবস্থানে সুস্থ, যুক্তিবাদী, সহনশীল কণ্ঠ অবশ্যই ছিল, কিন্তু তা এতই ক্ষীণ যে তার কোনো প্রভাবই পড়ল না। অবশ্য অসহিষ্ণুতা সেই বিরুদ্ধবাদ নিয়েও। হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য কর্ণাটকে খুন হয়ে গেলেন যুক্তিবাদী লেখক অধ্যাপক এম এম কালবুর্গি, মহারাষ্ট্রে খুন হলেন নরেন্দ্র দাভোলকার, সমাজকর্মী গোবিন্দ পানসারে। প্রতিটি খুনেরই মূল সন্দেহভাজনের তালিকায় হিন্দুত্ববাদীরা, তবু তদন্তে চিরাচরিত দায়সারা গড়িমসির পরিচয় দিল প্রশাসন। প্রতিবাদে দেশের বিশিষ্ট, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী-সাহিত্যিক-চলচ্চিত্রকারেরা তাঁদের সরকারি খেতাব ফিরিয়ে দিতে শুরু করলেন। মোদির ইসলামবিদ্বেষের ভায়াবহ চিত্র: তিন তালাক-বিরোধী আইন চলতি বছরেই ভারত মুসিলমদের তিন তালাকের বিধান নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট মুসলিম সমাজে প্রচলিত তিন তালাক নিষিদ্ধ করার পর চারমাস পর বিজেপি নিয়ন্ত্রিত লোকসভা এ প্রথাকে অপরাধ আখ্যায়িত করে একটি বিল পাস করে। এ বিলটি এখন আইনে পরিণত হয়েছে। ভারতের উত্তরপ্র দেশ রাজ্যে অবস্থিত এলাহাবাদ শহরের নাম পাল্টে প্রয়াগরাজ করার পর এখন সেই তালিকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক শহরের নাম, যেগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে মুসলিম ঐতিহ্য। ‘গুজরাটের কসাই’ খ্যাত মোদির ভারত শাসন। ২০১৯ সালে আবারও ক্ষমতায় আসতে একই পথে হাঁটছে বিজেপি। বিজেপি বিজয়ী হলে ভারতের এই পরিস্থিতি বাড়তেই থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। ভারতের শান্তিপ্রিয় অহিংস মানুষেরা কি পারবে ভারতকে ইতিহাসের এই কালিমালিপ্ত শাসনের হাত থেকে মুক্তি দিতে? বিহারের বলরামপুরে একটি জনসভায় সিধু বলেন, ‘সমস্ত মুসলিম একজোট হোন। বিজেপিকে একটি ভোটও নয়। ভোট দিন কংগ্রেসকে। তাহলেই বিজেপিকে বিদায় ঘণ্টা বেজে যাবে। তারা দেশ ছেড়েই পালাবে। মুসলিমরা একজোট হলে কংগ্রেসকে হারাতে পারবে না বিজেপি।’ তাঁর কথায়, এখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। শতকরা ৬২ শতাংশ মুসলিম ভোটার। তাহলে ভাবনা কেন। আপনারা সবাই এক হলেই বিজেপির হার কে আটকায়। বিশ্বের কোনও শক্তিও বিজেপিকে জেতাতে পারবে না। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায বলেন, ইসলাম ধর্ম পবিত্র ধর্ম এটা মাথায় রাখতে হবে। ধর্মের নামে কোনো ভাগাভাগি চলবে না। হিন্দু, ইসলাম, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ধর্ম থাকবে, তবেই তো দেশ। বিজেপি দলিত, কৃষকসহ সবার ওপর অত্যাচার করছে উল্লেখ করে মমতা বলেন, এই সরকারের আর প্রয়োজন নেই। ২০১৯ সালেই ফিনিশ হবে বিজেপি ফিনিশ। পরিশেষে বলতে চাই, ২০১৯ সালের সরকারের কাছে মুসলিমসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কতটুকু নিরাপদ হবে?
লেখক : প্রাবন্ধিক