সামাজিক বনায়ন ধ্বংস করে বালু তোলার বিরুদ্ধে অভিযান

14

কক্সবাজারের চকরিয়ায় সামাজিক বনায়ন ধ্বংস ও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বনবিভাগ। গত বুধবার দুপুর থেকে একটানা বিকাল পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদার নেতৃত্বে বনবিভাগের লোকজন এ অভিযান চালায়। এসময় বালু উত্তোলনকারীরা পালিয়ে গেলেও বেআইনি বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি ড্রেজার মেশিন উদ্ধার করা হয়।
তবে ওইসব ড্রেজার মেশিন রহস্যজনক কারণে জব্দ তালিকায় উল্লেখ করা হয়নি বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের অধীন খুটাখালী বনবিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাগলির বিল হারগাজা ছড়ার (খাল) মাথা নামক এলাকায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তা লুট করে নেয়ার অভিযোগ উঠে একটি প্রভাবশালী দস্যুচক্রের বিরুদ্ধে। দিবারাত্রি ২০/২৫টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রভাবশালী ওই ভূমিদস্যুচক্রটি অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের পর নির্দিষ্ট স্থানে মজুত করে, তা ডাম্পার গাড়ি দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পাচার করে দিলেও বনবিভাগ রহস্যজনকভাবে নীরব ছিল।
অভিযোগ উঠেছে, বালু তোলার স্থানটি খুটাখালী বনবিট ও ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের অংশে পড়ায় সংশ্লিষ্ট দু’পক্ষই বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ফলে বালু উত্তোলনকারীদের কবলে পড়ে একদিকে যেমন পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে তেমনি সরকারও লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত এক উপকারভোগী ও স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন বাদি হয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে বুধবার দুপুর থেকে একটানা বিকাল পর্যন্ত বালু উত্তোলনের স্পটে অভিযান চালায়। এ সময় ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
ক্ষতিগ্রস্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন বলেন, গত ২০১১-১২ সনে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের নামে খুটাখালী মৌজার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৫০ একর জায়গা বরাদ্দ নিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছ রোপণ করে বাগান সৃজন করেন তারা। কিন্তু একই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বালুরচর এলাকার মৃত বাহার উল্লাহর ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম পুতু (৩৫), একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন পাড়া এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে আয়াত উল্লাহ (৩৭), একই এলাকার আবুল খায়েরের ছেলে বেলাল উদ্দিন ড্রাইভার (৪০), হেলাল উদ্দিন (৩২), ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব নতুন পাড়া এলাকার মৃত আবুল হোসাইনের ছেলে আমিন উদ্দিন (৪০) এবং আরো অন্যান্য লোকজন সন্ত্রাসী কায়দায় উপকারভোগীদের বাগান জবর দখল করে বাগানের বৃক্ষ নিধন করে উজাড় করে ফেলে। পরবর্তীতে ওই চক্রটি বাগান ভূমিতে বালি কাটার ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের পর তা নির্দিষ্ট স্থানে স্তূপ করে একের পর ডাম্পার গাড়ি দিয়ে লুট করে নিয়ে যায়। এখনও এসব দুষ্কৃতিকারীরা সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের বাগান নিধন করে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু লুট করে যাচ্ছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আরও অভিযোগ করেন, এসব বালু উত্তোলনকারীদের এ অনৈতিক কাজের ব্যাপারে আমরা উপকারভোগীরা বাধা দিলে তারা আমাকে ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অন্যান্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে ধাওয়া করে। পরে আবার বাধা দিলে তারা গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। তাদের এই হুমকিতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি দাবি করেন, প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের বালু লুটের স্পটটি খুটাখালী বনবিট ও ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের অংশে পড়ায় সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম ও খুটাখালী বিট কর্মকর্তা রেজাউল করিম বালুদস্যুদের কাছ থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে বালু লুটের সুযোগ করে দিয়েছেন।
তবে খুটাখালী বিট কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সামাজিক বনায়নে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে ইতিপূর্বে ডিএফও স্যারের নির্দেশে সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে ঘটনাস্থলে বালুর বিশালাকার একটি স্তূপ পাওয়া গেলেও কোন ড্রেজার মেশিন ও বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি সঠিক নয় বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তা লুট করে নেয়ার অভিযোগ পেয়ে যৌথ অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগ। এসময় বালু উত্তোলনকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা যায়নি। তিনি আরও বলেন, বালু উত্তোলনের স্থানটি সাফারি পার্কের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। সুতরাং বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টিও সঠিক নয় ।
অভিযানের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদার মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও মোবাইল বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।