সামাজিক দূরত্ব মানছে না অনেকেই

93

সামাজিক দূরত্ব মানছে না অনেকেই। গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে, দোকানে পণ্য কিনছে। বার বার সতর্ক করার পরও মানার গরজ নেই। নগরীর সর্বত্র এ ধরনের চিত্র চোখে পড়ে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সরকার ২৬ মার্চ থেকে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।
গতকাল সেই ছুটি ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব ও প্রশাসনের পাশাপাশি মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। কিন্তু তারপরও পুরোপুরি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শুধু অলি-গলিতে নয়, মূল সড়ক এলাকাগুলোতেও মানছে না সামাজিক দূরত্ব। চেরাগি পাহাড় মোড়, আন্দরকিল্লা মোড়, চকবাজার, জিইসি মোড়, নিউ মার্কেট মোড়, বহদ্দারহাট মোড়সহ নগরীর মূল সড়কগুলোতে লোকজন কম হলেও যারা বের হন তারা দূরত্ব মেনে চলছেন না। তারা একজন আরেক জনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে টং দোকানে চা পান করছেন। ৮/১০ জন গোল হয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন।
দোকানগুলোতে একই অবস্থা দেখা গেছে। ফার্মেসি, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানসহ খোলা থাকা দোকানগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছেন অনেকে। দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত আড্ডায় মশগুল থাকছেন তারা। দোকান থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করছেন।
মূল সড়ক আন্দরকিল্লা থেকে চেরাগি মোড় পর্যন্ত ভাসমান কাঁচাবাজার বসেছে ৮/১০টি স্থানে। সেসব স্থানে দেখা যায়, প্রতিটি ভ্যানের সামনেই ৫/৭ জন ক্রেতা দাঁড়িয়ে সবজি কিনতে দেখা গেছে।
মামুনুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, আমাদের চট্টগ্রামেতো কেউ আক্রান্ত হয়নি। তাই ভয় একটু কম। ২০/২৫ মিনিটে আর কি হবে।
চেরাগি মোড়ে আড্ডায় দাঁড়ানো কামাল বলেন, সবসময়তো বের হচ্ছি না। বের হলে কিছুটা সময় আড্ডা দিয়ে কাটাচ্ছি।
অলি-গলির অবস্থাতো আরো খারাপ। অলিগলিতে সামাজিক দূরত্ব মোটেই মানছেন না মানুষ। তারা একসঙ্গে ঘোরাফেরা করছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। কোনো কোনো গলিতে শিশুদের ক্রিকেট খেলতেও দেখা গেছে। চা দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছেন লোকজন। কাঁচাবাজারে গিয়েও সামাজিক দূরত্ব মানছেন না ক্রেতারা। সবজি কিনছেন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে।
কাজির দেউড়ি কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্রেতা ও বিক্রেতার মুখে মাস্ক রয়েছে। তবে ক্রেতারা গা-ঘেঁষাঘেঁষি করেই কেনাকাটা করছিলেন। বাজারে ২০/২৫ জন ক্রেতা এক কাতারে দাঁড়িয়ে বাজার করছেন।
শাহাদাত নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে এলে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা যায় না। তবে তিনি চেষ্টা করছেন দূরত্ব বজায় রেখে বাজার করতে।
সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান গতকাল মঙ্গলবার পূর্বদেশকে বলেন, বার বার বলা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্বে অবস্থান করে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে। দোকানিদেরও তা বলে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সামাজিক দূরত্ব অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিকল্প নেই। আমরা নগরবাসীকে সচেতন করছি, যাতে এটা মেনে চলেন। নিজের, পরিবারের এবং দেশের স্বার্থে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা উচিত।
সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানও (আইইডিসিআর) করোনা ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উপর জোর দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা প্রেস ব্রিফিংয়ে বার বার বলে আসছেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোন বিকল্প নেই।
আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি আগামী এক-দুই সপ্তাহে বোঝা যাবে না। এটি কয়েক মাস পর্যন্ত বিস্তার ঘটাবে। এখন ধীরে ধীরে বাড়ছে। এটি ঠেকাতে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। আর যদি আমাদের অলক্ষ্যে কোথাও কোনো মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহ বিষয়গুলো না মানেন, আমাদের দুর্বলতা থাকে, তা হলে কোনো কোনো এলাকায় এটির ব্যাপক সংক্রমণ ঘটতে পারে।
বিভিন্ন দেশে তা-ই দেখা গেছে। মানুষ যদি নির্দ্বিধায় মেলামেশা করতে থাকে, তা হলে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি যেসব মানুষের সঙ্গে মিশবেন, তারা এবং তাদের মাধ্যমে অন্য অনেকেই সংক্রমিত হবেন। এ ক্ষেত্রে হঠাৎ করে একসঙ্গে অনেক রোগী শনাক্ত হতে পারেন। তখন খুবই জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটি কখনই মনে করা যাবে না যে, আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগী কমসংখ্যক শনাক্ত হলেও এটি সংক্রমণের দিক থেকে এখন তৃতীয় স্তরে রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এ মহামারী প্রথম পর্যায়ে রয়েছে। সবাই যদি সতর্ক না হই, কোয়ারেন্টিন মেনে না চলি, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখি, অযথা মিক্সিং পরিহার না করি- তা হলে সামনের দিন খুবই কঠিন হতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এমনটিই দেখা গেছে। যদি আমরা জনস্বাস্থ্যবিষয়ক ইন্টারভেশন মেনে চলি, তা হলে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব।