সামাজিক অবক্ষয় ও অস্থিরতা

28

বরগুনায় নারী ঘটিত ব্যাপার নিয়ে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে খুনী নয়নবন্ড ক্রসফায়ারে নিহত হয়। বগুড়ায় শিশু শাহিনের আয়ের একমাত্র সম্বল রিক্শা কেড়ে নিয়ে তাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে দুবৃত্তরা। চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর বিশ্ব কলোনীতে দলীয় কোন্দলে মো.মহসিনকে সাপের মত পিটিয়ে মৃত ভেবে ফেলে যায়। সম্প্রতি ফেনীতে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ও তার সহযোগী ওসি মোয়াজ্জেম কর্তৃক মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা একটি ঘটনা আলোচিত। নুসরাতের জবানবন্দী, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা, মহসিকে সাপের মত পিটানো, বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা, খদিজাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। কি বীভৎস, হিংস্রতার নিষ্ঠুরতা। একজন মানুষ প্রাণে বাঁচতে এদিক সেদিক ছুটছে ,আকুতি করছে আর মানুষরুপী পশুরা তাকে সাপের মত পিটিয়ে মারছে। আলোচিত বিশ্বজিত হত্যার ভিডিও থাকা সত্তে¡ও অনেকে জামিন পেয়ে যায়। এসব অপরাধ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এর পেছনে রাজনীতি, নারী, মাদক সংশ্লিষ্ট। একাধিক মামলার আসামী হয়েও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নয়ন জেমসবন্ড আদলে নয়নবন্ড হয়ে উঠে ০০৭ গ্রুপ গঠন করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। সন্ত্রাস, মাদক, স্কুল, কলেজের মেয়েদের ইভটিজিং করে। তখন তাদের ভয়ে স্কুল, কলেজে মেয়েরা আসতে ভয় পায়। অশ্লীল বাক্য ছুড়ে দেওয়া, প্রেমের প্রস্তাব, ওড়না টান দেওয়ার মত ঘটনার সাথে মানিয়ে চলতে শিখে। নতুবা নুসরাতের মত পরিণতি কিংবা মানসম্মানের দিকে তাকিয়ে চুপ থাকে। সাধারণ মানুষও তাদের কাছ থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলেন। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় একজন মানুষ যখন অপরাধ করেও পার পেয়ে যায় তখন সে বেপরোয়া হয়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অতীতে অনেক আলোচিত খুনের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার ফলে অপরাধীরা নিজেদের অপ্রতিরোধ্য মনে করে। সামান্য কথাকাটাকাটি কিংবা নারী ঘটিত বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে খুন করতে দ্বিধা করছেনা। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা,খুন বৃদ্ধি ,মানবিক মূল্যবোধ হ্রাস পেয়েছে।
আমরা এক অদ্ভুত, অস্থির ও কঠিন সময়ের মধ্যে যাচ্ছি। শিশু কিশোরেরা মাদক ও রাজনৈতিক কারণে বখাটে, উশৃঙ্খল হয়ে হিংস্র হয়ে উঠছে। বদরুল, সিরাজউদ্দৌলা, ওসি মোয়াজ্জেম,নয়ন,রাজিব এদের ত্রাস হয়ে উঠার কারণ বিচারহীনতা, রাজনৈতিক প্রভাব, সামাজিক ও পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা, নৈতিক অধঃপতন। নয়নদের যারা নয়নবন্ড করেছে তাদের কখনো ধরা হয়না। তারা বরাবরই পর্দার অন্তরালে থেকে যায়। যারা এলাকায় সন্ত্রাস, মাদক, চাঁদাবাজ,টেন্ডারবাজি করার জন্য নয়নদের অস্ত্র,মাদক দিয়ে এদের নিজের দলে ভিড়িয়ে আধিপত্য বিস্তার করেছে। আমরা আশ্বস্ত হতাম যদি নয়নবন্ডদের যারা সৃষ্টি করেছে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখী করা হত। তাহলে অন্য গডফাদারেরাও সতর্ক হয়ে যেত। গডফাদার যদি অধরা রয়ে যায় তাহলে সমাজে নয়ন সৃষ্টি, নগ্ন উল্লাস থামবেনা। হয়ত কিছুদিন পর আবার কেউ এসে নয়নের জায়গায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করবে।
কিশোরেরা সোনালী ভবিষ্যত স্বপ্ন দেখার বদলে মাদকে বুদ হয়ে গ্যাং খুলে চুরি, ছিনতাই, অরাজকতা, ইভটিজিং প্রকাশ্যে মানুষ খুন করছে যা মোটেও সুখকর নয়। এখই তা বন্ধ করতে হবে। না হলে সমাজ অন্ধকারের অতলে ডুবে যাওয়া রোধ সম্ভব নয়। একসময় সমাজে মানবতা, শান্তি, সমৃদ্ধি, নৈতিকতা । ছোটরা বড়দের সম্মানবোধ ছিল। এখন বড়রা নিজেদের সম্মান রক্ষায় ছোটদের এড়িয়ে চলেন। মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র , মানবতা,শান্তি, সমৃদ্ধির জন্য আমাদের নৈতিকতার চর্চা বড়ই প্রয়োজন। নৈতিকতা, মানবতার চরম সংকটের কারণে সমাজে এত অস্থিরতা। আমাদের সমাজ, দেশকে বাঁচাতে হবে। বাচাঁতে হবে ভবিষ্যত প্রজম্মকে । সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে সবার এগিয়ে আসার বিকল্প নেই।

লেখক : প্রাবন্ধিক