সাবেক মেয়রের ‘অনিয়মের’ ঘানি টানছেন মেয়র নাছির

109

প্রজ্ঞাপনে ছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে ৬টি আঞ্চলিক জোনে বিভক্ত করে সব ধরনের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা। কিন্তু ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। বরং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া চারটি রাজস্ব সার্কেল থেকে বাড়িয়ে ৮টি করা হয়েছে। যাতে দল সমর্থক কর্মকর্তাদের ‘প্রমোশন’ দেওয়া য়ায়। এমনটাই করে গেছেন বিএনপি সমর্থিত সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম। শুধু তাই নয় কোন ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দলীয় লোকদের নিয়োগ দিয়ে গেছেন সাবেক এই মেয়র।
দীর্ঘ তিন দশক পর নিয়োগ নীতিমালার জটিলতার অবসান হলেও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফেরাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বর্তমান সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরকে। ফলে মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তির ঘাটতিতে পূর্ণাঙ্গ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না সেবা সংস্থাটি।
২০১২ সালের ১৩ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে ৬টি অঞ্চলকে বিভক্ত করতে হবে। যাতে সিটি করপোরেশনের প্রদত্ত নাগরিক সেবাগুলো অধিকতর নিশ্চিত করা হয়। ৪১টি ওয়ার্ডকে ৬টি অঞ্চলে বিভিক্ত করা হয়। প্রতিটি আঞ্চলিক অফিস থেকে প্রশাসনিক কাজ, হিসাবরক্ষণ, জোনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, সমাজকল্যাণ, পূর্তকাজ ও রক্ষণাবেক্ষণ, বৈদ্যুতিক কাজ ও রক্ষণাবেক্ষণ, বস্তিবাসীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, আত্ম-কর্মসংস্থানে সহায়তা প্রদান ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
প্রত্যেক আঞ্চলিক অফিসে একজন প্রধান থাকবেন এবং কেন্দ্রীয় সিটি করপোরেশনের সমন্বয় করে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ রয়েছে প্রজ্ঞাপনটিতে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন থাকলেও বাস্তবায়নে কোন ধরনের প্রদক্ষেপ নেননি তৎকালীন বিএনপি সমর্থিত মেয়র এম মনজুর আলম। তাছাড়া ২০১১ সালের ২৯ মার্চ ৭ জন উপ সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়া হয়। কোন ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সরাসরি তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। যারা প্রত্যেকে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের পদধারী ছিলেন।
তারা হলেন ফখরুল আসলাম খোকন, রূপক চন্দ্র দাশ, মো. সরওয়ার আলম, সালাহ উদ্দিন ইউসুফ মজুমদার, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, সবুজ মানিক ও মো. ফয়সাল মাহমুদ। এছাড়া সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত ১৯৮৮ সালে সাংগঠনিক কাঠামো অনুসারে, চারটি রাজস্ব সার্কেল ও একটি ট্রেড লাইসেন্স শাখার অনুমোদন রয়েছে।
সাবেক মেয়র মনজুর মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই রাজস্ব সার্কেল ৮টিতে উন্নীত করেন। এখনও পর্যন্ত সেসব সার্কেলের অনুমোদন মেলেনি। তখন নতুন সৃষ্ট চারটিতে বিএনপি সমর্থিত কর্মচারীদের পদোন্নতি দেওয়া হয়। ফলে রাজস্ব শাখায় তখন থেকে একটি সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার তৈরি হয়। যেটি কাঙ্খিত রাজস্ব আদায় না হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালে সরকার চসিককে ৩ হাজার ১৮০টি সাংগঠনিক পদের অনুমোদন দেয়। কিন্তু চাকরির প্রবিধান মালা অনুমোদন না হওয়ায় দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় কোন নিয়োগ ও পদোন্নতি দিতে পারেনি সংস্থাটি। ফলে অতিরিক্ত দায়িত্ব ও চলতি দায়িত্ব দিয়ে কাজ সেরে এসেছে সংস্থাটি। সর্বশেষ চলতি বছরের ১১ জুলাই সাংগঠনিক কাঠামোর চাকরির বিধামালার (১৯৮৮ সালের অনুমোদিত) অনুমোদন হয়। ফলে এখন নিয়োগ বা পদোন্নতিতে কোনো ধরনের আইনগত জটিলতা নেই। কিন্তু পদোন্নতি ও স্থায়ীকরণের মাধ্যমে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফেরাতে গিয়ে হিমশিত খেতে হচ্ছে সিটি মেয়র নাছিরকে। কেননা আগে থেকে যোগ্যতার বাছ-বিচার না করে দলীয় লোকদের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ ও পদোন্নতি দিয়ে রাখার ফলে তারাই কাগজে কলমে এগিয়ে রয়েছেন। এতে আইনত জটিলতা নিরসন হলেও যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক জনবলের সাজসজ্জা অনেকটা জটিলতায় পড়েছে।
বিষয়গুলো নিয়ে পূর্বদেশকে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানে সাংগঠনিকভাবে শৃঙ্খলা না থাকলে ‘টিম ওয়ার্ক’ সম্ভব না। আর টিম ওয়ার্ক না হলে পরিপূর্ণ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব না। আমার আগের মেয়র নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কাউকে পদোন্নতি আবার কিছু দলীয় লোক নিয়োগ দিয়ে গেছেন। ফলে যোগ্যতা অনুসারে মেধাবী লোকের মূল্যায়ন এই প্রতিষ্ঠানে হয়ে আসেনি। একটি হাতে লেখা টোকেন দিয়েও এখানে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি ক্ষমতায় দায়িত্ব নেওয়ার পর আপ্রাণ চেষ্টা করে তিন দশক ধরে আটকে থাকা নিয়োগ জটিলতার অবসান ঘটিয়েছি। কিন্তু তারপরও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফেরাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। কেননা প্রায় সবজায়গায় কর্মকর্তারা মামলা করে আছেন। আদালতের রায় নিয়ে আসছেন। তাহলে সেখানে প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছামত কিছু করার সুযোগ নেই। একটি অনিয়মের জন্মের কারণে সেটাকে টিকিয়ে রাখতে মামলার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এভাবে প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। কেননা সিটি করপোরেশন নগরবাসীকে সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রæতি নিয়ে কাজ করে। সেখানে যদি টিম ওয়ার্ক করা সম্ভব না হয়, তাহলে আমরা কখনও নগরবাসীর কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করতে পারবো না।’