সাধারণ মানুষকে লাঞ্ছিত করে আনন্দ পান তিনি!

68

কুড়িগ্রামে বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে আটক এবং পরে নির্মম নির্যাতনকারী আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দিন ইতোপূর্বে কক্সবাজারে এসিল্যাল্ড ছিলেন। অপকর্মে জড়িত থাকার কারণে সেখান থেকে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, সাধারণ মানুষের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং এক বৃদ্ধকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। সাংবাদিক নির্যাতনকারী নাজিম এক বছর আগে কক্সবাজার সদরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, নাজিম উদ্দিন গত ২০১৭ সালে কক্সবাজার সদর উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগ দেন। যোগ দেওয়ার পর থেকেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কারণে-অকারণে সাধারণ মানুষকে লাঞ্ছিত করে মজা পাওয়া তার স্বভাব। তিনি নিজেকে ‘বড় কিছু’ মনে করতেন। নানা অনিয়ম, সাধারণ মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে তাকে ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর রাঙামাটি জেলার লংগদুতে শাস্তিমূলকভাবে বদলি করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, নাজিম উদ্দিন কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী (ভূমি) হিসেবে যোগ দেওয়ার পরপরই তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেসব অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে রাঙামাটির লংগদুর মতো দূর্গম উপজেলায় বদলি করা হয়। এটি শাস্তিমূলক বদলি। প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলেও তার বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। সর্বশেষ তার ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার মোহাম্মদ আলী ওরফে নফু মাঝি (৬২) নামে এক বৃদ্ধকে কানে ধরে টানা-হেঁচড়া করে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে শুধু কক্সবাজার জেলা প্রশাসন নয়, চট্টগ্রামসহ পুরো দেশে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তারা বিব্রতবোধ করেন।
নাজিম সম্পর্কে কক্সবাজারের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রণমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী ও সাংবাদিক রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘কক্সবাজার সদর উপজেলার সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজিম উদ্দিন ভীষণ দুর্নীতিবাজ একজন কর্মকর্তা। তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। সে সময়ে আমি হাজির হলেও দুর্নীতিবাজ নাজিম উপস্থিত হননি। আমার লিখিত আবেদনের পর তাকে শাস্তিমূলকভাবে রাঙামাটির লংগদুতে বদলি করা হয়। পরে নাজিমের এক বয়স্ক বৃদ্ধকে কানে ধরে টেনে-হেঁচড়ে আনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। পরে সেটি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টিগোচর করা হলে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন আমাকে বলেন, এজন্য তিনি বিব্রত’।
রাশেদুল মজিদ আরও বলেন, ‘কক্সবাজারের সাবেক এই এসিল্যান্ড দায়িত্ব পালন করার সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে নানাভাবে অপকর্ম করে গেছেন। খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়ার আশ্বাসে ঘুষ-দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। সাধারণ মানুষদের নানাভাবে নাজেহাল করতেন’। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে আরডিসি নাজিম উদ্দিনসহ অন্যরা মারধর করে তুলে নিয়ে যায় সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে। তার বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ আনা হয়। এরপর গভীর রাতে তাকে ভয়াবহ নির্যাতন করে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের কারাদন্ড দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সাংবাদিক আরিফকে কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে রাখা হয়।