সাধারণ মানুষকে ঋণ দেওয়া ছেড়ে দিচ্ছে ব্যাংক!

10

সাধারণ মানুষকে ঋণ দেওয়া ছেড়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। কোনো কোনো ব্যাংক এরই মধ্যে ঋণ বিতরণের পদ্ধতিও ভুলে যাচ্ছে! ঋণ বিতরণে ব্যাংকের এতটাই অনীহা যে, তারা সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণেও গড়িমসি করছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের মাঝেও প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ যে কমিয়ে দিয়েছে, তার প্রমাণ মেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনেও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ প্রায় এক শতাংশ কমে গেছে। অক্টোবরে বেসরকারি খাতে ঋণের যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, ব্যাংক কর্মকর্তারা সেটাকে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি বলছেন।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ব্যবসায়ী মা মনি এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুস সালাম বলেন, ‘আমরা ব্যাংক থেকে ঋণ পাই না। ব্যাংকে গেলে বলা হয়, ঋণ দেওয়া বন্ধ’। তিনি বলেন, ‘সাধারণ ও ছোট উদ্যোক্তাদেরকে ব্যাংকগুলো আগেও পাত্তা দেয়নি, এখন তো বলে ঋণ দেওয়ার মতো নাকি টাকা নেই’।নাম প্রকাশ না করে একটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ প্রসঙ্গে বলেন, টাকা ফেরত আসবে এমন গ্রাহককে বাছাই করেই আমরা ঋণ দেই। কিন্তু যে গ্রাহক টাকা ফেরত দেবে না, তাকে কে ঋণ দেবে? এখন তো ঋণ নিয়ে ফেরত না দিলেও খেলাপি বলা যাচ্ছে না। ফলে ঋণের টাকা ফেরত আসার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। আগের নেওয়া ঋণের টাকা ফেরত আসছে না। ফলে নতুন করে ঋণ দেওয়ার মতো ঝুঁকি অনেক ব্যাংকই আর নিতে চাইছে না। এ কারণে নতুন করে নতুন গ্রাহককে ঋণ দেওয়া ছেড়ে দিয়েছে অনেক ব্যাংক।
অবশ্য প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ বিতরণ করার ফলে করোনা ভাইরাস মহামারির মাঝে অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোর সঙ্গে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহেও গতি ফিরছিল। কিন্তু তিন মাস ধরে বেসরকারি ঋণের পালে যে হাওয়া বইছিল, হঠাৎ তার ছন্দপতন হয়েছে। ফের বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্নে এসে ঠেকেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় ব্যাংকগুলোর এই অক্টোবরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। যদিও এক মাস আগে অর্থাৎ গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে এই বছরের সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণ করেছিল ব্যাংকগুলো। আর আগস্টে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ২০ শতাংশ। জুনে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবর শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ১৪ হাজার ৩২ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যা গত বছরের অক্টোরের চেয়ে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। সেপ্টেম্বরের শেষে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ১৩ হাজার ৮২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত এক মাসে এক হাজার কোটি টাকাও বিতরণ করেনি ব্যাংকগুলো।
অবশ্য গত এক বছরে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংক। অর্থাৎ অক্টোবরের শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ১৪ হাজার ৩২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ২০১৯ সালের অক্টোবরের শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২৫ হাজার ৯৫৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। খবর বাংলা ট্রিবিউনের