সাধারণের চিকিৎসা নিশ্চিত করার দায় কর্তৃপক্ষের

43

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা নতুন নয়। পিলে চমকে উঠার মত হরেকরকম অনিয়মের ব্যাধিতে আক্রান্ত এ হাসপাতালটি নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে সংবাদ মাধ্যমে। কিন্তু আলোর সন্ধান মিলছেনা এ হাসপাতালটিতে। কারণ অনিয়মের গোড়ায় রয়েছে হাসপাতালের কিছু সংখ্যক নেতৃস্থানীয় চিকিৎসক, প্রভাবশালী কর্মচারী সর্বোপরি বিটের পুলিশ পরিদর্শক। মাঝেমধ্যে এ হাসপাতালের ভালো খবর চট্টগ্রামবাসীকে আশাবাদী করলেও কয়েকদিনের ব্যবধানে সেই আশায় ধূলো পড়ে। বৃহস্পতিবার দৈনিক পূর্বদেশে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হাসপাতালে কর্মরত কিছু চিকিৎসক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে পদে পদে অনৈতিক উপায়ে অর্থ আয় করে চলেছেন। এ অসাধুচক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে পুরো চমেক হাসপাতাল। এতে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসার জন্য ভরসার জায়গাটি রোগী ও স্বজনদের কাছে ‘শোষণ-হয়রানির’ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন অনুসন্ধান চালিয়ে হাসপাতালের আসা রোগী ও স্বজনদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। অনুসন্ধানী এ প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, চারজনের একটি সিন্ডিকেট চমেক হাসপাতালে আউট সোর্সিং নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি ওষুধ অবৈধভাবে বিক্রি ও মেডিকেলের জন্য কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতিতে সরাসরি জড়িত। এই সিন্ডিকেট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পূর্ব গেইটে সব ওষুধের দোকান থেকে প্রতিমাসে ১১ হাজার ২০০ টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে। সেখানে ৩০ থেকে ৩৫টি ওষুধের দোকান রয়েছে। বেশিরভাগ দোকানেই সরকারি বিনামূল্যের ওষুধ রাতে কেনা-বেচা চলে সিন্ডিকেটের ইশারায়। আর সে ওষুধগুলো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের কাছে বিক্রি হয় ন্যায্য দামের থেকেও দিগুণ বেশি দামে। আমাদের বিশ্বাস প্রতিবেদনের প্রতিটি শব্দ ও বাক্যের সাথে একমত পোষণ করবেন পাঠক। যারা এ হাসপাতালে একবার চিকিৎসা নেয়ার জন্য গেছেন বিশেষ করে হাসপাতালে রোগীর যদি পরিচিত কেউ না থাকে অথবা সুদূর গ্রাম থেকে আসা শহরের সাথে অপরিচিত রোগী ও তার অ্যাটেন্ডেন্সকে সর্বস্বান্ত হয়ে ফিরতে হয়। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা অনেকটা দায়সারা উত্তর দিলেও এ অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন-এমন কোন দৃষ্টান্ত আমাদের জ্ঞাতে নেই। আমরা প্রতিবেদন সূত্রে জানতে পারি, সরকার বিগত দশ বছর ধরে স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নয়ন ও সংস্কার আনার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। স্বাস্থ্যনীতিসহ যুগান্তকারী বেশকিছু পদক্ষেপের ফলে দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নতি হয়েছে। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গত ১০ বছরে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট ৭ গুণ বেড়েছে। নামমাত্র খরচে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় সরকারি হাসপাতালে। সিসিইউ, আইসিইউ, অপারেশন ও ডায়ালাইসিস সেবার ক্ষেত্রে নামমাত্র মূল্য নেওয়া হয়। সব সরকারি হাসপাতালে ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু হাসপাতালের দায়িত্বরত অতি মুনাফা লোভী এক শ্রেণির চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সিন্ডিকেটের কারণে স্বাস্থ্যখাতে সরকারের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
আমরা মনে করি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে যারা এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত তারা মূলত সরকার ও হাসপাতালের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন। তারা মানবসেবার এ আঙিনায় বসে মানব বিধ্বংসী কার্যক্রমে লিপ্ত। যারাই এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত তাদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া যায় না। তাদের দ্রæত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ না দেখার ভান করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করে পার পাবে -তা আমাদের মনে হয় না। রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করার আগে হাসপাতালটির উত্তম চিকিৎসা করা এখন খুবই জরুরি। আমরা আশা করি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে জনগণের এ চিকিৎসাকেন্দ্রকে অপরাধীদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হবে।