সাদা দলের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম

110

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক সমর্থিত সাদা দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচন। আগামী ২৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চূড়ান্ত ভোট গ্রহণ। তবে এবারের নির্বাচনে সরকার সমর্থিত আওয়ামী-বামপন্থী শিক্ষকদের হলুদ দলের প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে মাঠে থাকছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। উল্লেখ, গত বছর সাদা দল থেকে বের হয়ে আসা কিএনপিপন্থী শিক্ষকদের একাংশ জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম গঠন করে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৮৬ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্ষদে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছিল আওয়ামী-বামপন্থী শিক্ষক সমর্থিত হলুদ দল এবং বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক সমর্থিত সাদা দল। শুধু ২০১৪ সালের সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন বয়কট করে অংশ নেয়নি দলটি। এছাড়া গত ৩৩ বছরে সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল দলটি। তবে গত চার বছর নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়ে আসছে হলুদ দল।
গত বছর শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের আগে সাদা দল থেকে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের একাংশ বের হয়ে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের আত্মপ্রকাশ ঘটান। সাদা দলে জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের একচ্ছত্র আধিপত্যের অভিযোগ তুলে ওই নির্বাচনে নব-গঠিত ফোরাম থেকে পৃথকভাবে পূর্ণ প্যানেল দেয়া হয়েছিল। তবে সাদা দল এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলো, স্টিয়ারিং কমিটিতে মতামতের ভিত্তিতে সকল সিদ্ধান্ত হয়। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তারা বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে না পেরেই মূলত দল থেকে বের হয়ে গেছে। সেই থেকেই মূলত বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের মধ্যে ভাঙনের শুরু। এরপর থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিবৃতিসহ আলাদাভাবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল নতুন ফোরাম।
শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গত ১৯ জানুয়ারি সকালে সাধারণ সভায় মিলিত হয়েছিল সাদা দল। ওই সভায় নির্বাচনে থেকে বিরত থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফলে ৩৩ বছর পর শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে এ দলটির প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকছে না। সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান পূর্বদেশকে জানান, ‘দেশের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাধারণ সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে নির্বাচন থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নির্বাচন বয়কট নয়, দলের যে কেউ চাইলে ভোট দিতে পারবেন’। তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন। কিন্তু শিক্ষক সমিতির প্রশাসন থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা হওয়ার কথা, শিক্ষকদের অধিকার নিয়ে কাজ করার কথা। শিক্ষক সমিতি একটি দলের বা প্রশাসনের হতে পারে না, এটি সকল শিক্ষকের। সাদা দল মনে করে, এই শিক্ষক সমিতি সাধারণ শিক্ষকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। তাই নির্বাচন থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে’।
হলুদ দলের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি আর প্রশাসন এক- এটি মোটেও সত্য নয়। শিক্ষক সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই, তাই তারা নির্বাচনে আসছে না। শুধু মুখ রক্ষার জন্য তারা এসব কথা বলছে’।
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এসএম নসরুল কাদির পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা নিজেদের সক্রিয়তা বজায় রাখতে চাচ্ছি। যদি জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার প্রয়োজন হয়, তবে দুদল ঐক্যমতে পৌঁছালেই বিষয়টি দেখা যাবে। এছাড়া আমরা আলাদা প্ল্যাটফর্ম থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাব’।
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন যারা
শিক্ষক সমিতির কার্যনিবার্হী পরিষদের ১১টি পদের বিপরীতে এবারের নির্বাচনে ২৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে হলুদ দলের ১১ জন, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের ১১ জন এবং স্বতন্ত্র আছেন দু’জন।
হলুদ দল মনোনীত প্রার্থীরা হলেন সভাপতি পদে আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক পদে জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী, সহ-সভাপতি পদে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সহিদ উল্লাহ, যুগ্ম সম্পাদক পদে প্রাণ রসায়ণ ও অনপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম এবং কোষাধ্যক্ষ পদে অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আলী আরশাদ চৌধুরী। এছাড়া ছয়টি সদস্য পদে অ্যাকাউন্টিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রনজিত কুমার চৌধুরী, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হোসাইন, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক বকুল চন্দ্র চাকমা, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইকবাল আহমেদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুলতানা সুকন্যা বাশার এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাজহারুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম মনোনীত প্রাথীরা হলেন সভাপতি পদে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পদে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, সহ-সভাপতি পদে সমুদ্রবিদ্যা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. শাহাদত হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক পদে সমুদ্রবিদ্যা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরী এবং কোষাধ্যক্ষ পদে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন। এছাড়া সদস্য পদে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু নছর মুহাম্মদ আব্দুল মাবুদ, ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল আজম খান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এজিএম নিয়াজ উদ্দিন, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মো. মেজবাউল আলম, রসায়ণ বিভাগের অধ্যাপক ড. জয়নাল আবেদীন সিদ্দিকী, সমুদ্রবিদ্যা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহ আলম এবং সদস্য পদে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোক্তার আহমেদ চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শাহ আলম সাদা দলের ও মোক্তার হলুদ দলের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এম. আবদুল গফুর পূর্বদেশকে বলেন, ‘আগামি ২৫ মার্চ অগ্রিম ভোটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যদি প্রার্থীরা চান, তবে ২৭ তারিখও রাখা হবে। ২৮ মার্চ সকাল ৯ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে চূড়ান্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে’।