সাতকানিয়ায় ১২ বসতঘর লকডাউন

81

চট্টগ্রামে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর তার সংস্পর্শে যাওয়া লোকজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে যাওয়া ও তাদের লোকজন অবস্থান করা বসতঘরগুলোকে লকডাউনের অংশ হিসেবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি বসতঘর লকডাউন করে দিয়েছে সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসন। গত শুক্রবার গভীর রাতে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-এ আলম ও থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সফিউল কবীর সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় বসত ঘর চিহ্নিত করে ওইসব ঘর লকডাউন করে। পুরানগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ ফ ম মাহবুবুল হক সিকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে করোনা ভাইরাস আতঙ্কে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে প্রশাসন ও গ্রামীণ সড়কে স্থানীয় বাসিন্দারা বেরিকেড সৃষ্টি করে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট। সূত্রে প্রকাশ, চট্টগ্রামের দামপাড়ায় সনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর মেয়ের শ্বশুর বাড়ি সাতকানিয়ার পুরানগড় ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডে। তিনি পবিত্র ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে শাশুড়িকে নিয়ে সৌদি আরবে যান। গত ১২ মার্চ সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে দামপাড়ার শাশুড়িকে নিয়ে বাবার বাড়িতে উঠে। পরে বিমানবন্দর থেকে চড়ে আসা গাড়ি নিয়ে শাশুড়িকে পুরানগড়ে পাঠানো হয়। সেই থেকে শাশুড়ি তার নিজ বাড়িতে পুরানগড়ে অবস্থান করছেন। গত শক্রবার ঐ মেয়ের বাবার শরীরে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হওয়ার পর তার সংস্পর্শে আসা লোকজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে আনার কাজ শুরু করে প্রশাসন। পাশাপাশি দামপাড়ার ঐ বাড়িসহ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকা লোকজনের অবস্থান করা বসত ঘরগুলোও লক ডাউনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত শুক্রবার গভীর রাত আনুমানিক দেড়টার সময় সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-এ আলম ও থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সফিউল কবীর সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে পুরানগড় ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের সোলেমান মেম্বারের দ্বিতল বাড়িসহ ওই বাড়িতে যাতায়াত করা লোকজনের বসবাস করা ১১টি মিলিয়ে মোট ১২টি বাড়ি লকডাউন করা হয়। এসব বাড়ির সীমানায় লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে দিয়ে বাড়িসমূহে যেন কোন লোকজন চলাচল না করে আর ওই ঘরসমূহ থেকেও যেন কেউ বের না হয়- সেই নির্দেশ দেয় প্রশাসন। গতকাল শনিবার দুপুরে লকডাউন করে দেওয়া বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সড়কে লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে দেওয়া আছে। গ্রাম পুলিশ সদস্য মোহাম্মদ ওসমান রাস্তায় দাঁড়িয়ে ওই বাড়ির পাশ দিয়ে চলাচল না করার জন্য লোকজনকে বলে যাচ্ছে। এছাড়াও ওই বাড়িতে যাতায়াত ছিল এমন বাড়ির আরো ১১টি ঘরও একইভাবে লকডাউন করে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে পুরানগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ ফ ম মাহবুবুল হক বলেন, গভীর রাতে ইউএনও নুর-এ আলম ও ওসি সফিউল কবীর সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে এসে সোলেমান মেম্বারের বাড়ি ও নুরুল ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়িসহ আরো বেশ কয়েকটি ঘর লকডাউন করে দিয়েছে। সেখানে লাল পতাকা টাঙ্গানো হয়েছে। ওইসব ঘরের কেউ যাতে বাইরে আসতে না পারে আবার কেউ যেতেও না পারে সেজন্য বলে দেওয়া হয়েছে। পাশপাশি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। ওই এলাকায় পুলিশ ও সেনাটহল বেড়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে গতকাল রবিবার সরেজমিন পরির্দশনকালে দেখা যায়, বাজালিয়া ইউনিয়নের বুড়ির দোকানের পূর্বে অবস্থিত বাইল্যা পাড়ার প্রধান সড়কের সম্মুখভাগে বাঁশের ঘেরা দিয়ে লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে অবস্থান করা সন্তোশ দাশ জানান, পুরানগড়ে করোনা ভাইরাস আতঙ্কে বসত ঘর লকডাউন করে দেওয়ার পর পাড়ার ছেলেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওই গ্রামে অন্য গ্রামের কেউ যেন ঢুকতে না পারে তার জন্য বাঁশ দিয়ে বেষ্টনি তৈরি করা হয়েছে। আর গ্রামের লোকজনও যেন হাত ধুয়ে পাড়ায় ঢুকে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই অবস্থা দেখা গেছে কেওচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়া, সামিয়ার পাড়া ও মাদারবাড়িতে।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে করোনায় প্রথম আক্রান্ত রোগী এখন অনেকটা ভাল আছে। তার সংস্পর্শে থাকা লোকজনের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতেই প্রশাসন দামপাড়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ ও পটিয়ায় বেশ কিছু ঘর লকডাউন করে দিয়েছে। সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-এ আলম বলেন, গত শুক্রবার দিনগত রাতেই আমরা পুরানগড়ে ১২টি বসত ঘর লকডাউন করে দিয়েছি। লোকজনকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে নির্দেশনা দিয়েছি। লকডাউন করা ঘরের লোকজন যাতে বাইরে না যায় আর বাইর থেকেও কোন লোক যাতে এসব ঘরে প্রবেশ না করে তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসন সর্তক রয়েছে।
এদিকে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কেরানিহাট, সাতকানিয়া রাস্তার মাথাসহ আরো বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রশাসন বেরিকেড তৈরি করে। তবে হালকা যানবাহন ও এম্বুলেন্স চলাচল করতে দেখা গেছে।