সাঙ্গ হচ্ছে লেখক প্রকাশক ও পাঠকদের মিলনমেলা

67

ক্যালেন্ডারের পাতায় ফেব্রুয়ারি মাসের ঠাঁই হয়েছে আঠাশে। চট্টগ্রামে আয়োজিত প্রথম সম্মিলিত বইমেলাও পৌঁছেছে শেষ প্রান্তে। আজ শেষ হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। বইমেলার পর্দা নামার মাধ্যমে ভাঙছে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের মিলনমেলা। লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের এ মিলনমেলার জন্য আবার অপেক্ষা করতে হবে আগামী বছরের জন্য।
টানা ১৯ দিনব্যাপী বইমেলায় মুখরিত ছিলো জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গণ। লেখক-পাঠক ও প্রকাশকদের পদচারণায় মুখর ছিলো জিমনেশিয়াম এলাকা। শুরু থেকেই প্রাণের উচ্ছাস ছিলো মেলায়। তবে শেষের দিকে এসে সোমবার বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রাকৃতিক বৈরীতার কারণে সোম-মঙ্গলবার মেলা প্রাঙ্গণ ছিলো অনেকটা ফাঁকা। তবে গতকাল বুধবার আবারও মেলামুখি হয়েছেন পাঠক-দর্শনার্থীরা। আজ শেষ দিনে মেলায় প্রচুর দর্শক আশা করছেন আয়োজকরা।
অমর একুশে বইমেলার যুগ্ম সচিব জামাল উদ্দিন বলেন, শুরু থেকে বইমেলা প্রাণচঞ্চল ছিলো। বইপ্রেমীদের আনাগোনায় মুখরিত ছিলো পুরোটা সময়। চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছিলো বইমেলা। আশা করি আগামীতে বইমেলা আরো বৃহৎ আকারে হবে।
এদিকে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এবার অন্তত ১২ কোটি টাকার বই বিক্রি হবে মেলায়। গত রোববার পর্যন্ত মেলায় প্রায় ৯ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে আরো তিন কোটি টাকার বই বিক্রি হবে বলে ধারণা আয়োজক কমিটি। বৃষ্টি বাধা হয়ে না দাঁড়ালে গত দুইদিন মেলায় বিক্রি আরো বাড়তো বলে জানায় আয়োজক কমিটি। আগামীতে বইমেলায় আরো ভালো বিক্রির আশা করছেন তারা।
জামাল উদ্দিন বলেন, মেলায় ক্রমান্বয়ে বই বিক্রির পরিমাণ বাড়ছে। তবে শেষের দিকে এসে বৃষ্টি সামান্য প্রতিবদ্ধকতা তৈরি করেছিল। ঢাকায় সেখানে স্টলে পানি উঠেছে। আমাদের তেমন ক্ষতি হয়নি। আমাদের প্রায় ৯ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। শেষ সময়ে এসে আরো দুইতিন কোটি টাকার ব্যবসা হবে। সবমিলিয়ে ১২ কোটি টাকার মতো ব্যবসা হবে।
সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের সহায়তায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ১৯ দিনব্যাপী এ বইমেলার আয়োজন করেছে। মেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১১০টি প্রকাশকের স্টল রয়েছে। আশি হাজার বর্গফুটেরও বেশি জায়গাজুড়ে আয়োজিত বইমেলায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো। যার কারণে কোনো ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বইমেলার শেষ দিনে আজ থাকছে চিত্রাংকন ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ, মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশকদের মাঝে স্মারক প্রদান, শ্রেষ্ঠ প্রকাশক ও স্টলকে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। সমাপনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
লেখকের মুখোমুখি
লেখক-পাঠকের
মিলনমেলায় পরিণত
হয়েছে বইমেলা

শামসুদ্দীন শিশির

চট্টগ্রাম সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুদ্দীন শিশির বলেন, বই হলো সই। সই মানে বন্ধু। বইয়ের সাথে বন্ধুত্ব করার সুযোগ আসে বিশেষ কোনো আয়োজনের মাধ্যমে। বইমেলা অনন্য উদ্যোগ। চট্টগ্রামে একীভূত বইমেলা লেখক পাঠকের প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নামকরা সব প্রকাশক বইমেলায় উপস্থিত হয়েছেন। অনেক লেখকের নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।
তিনি বলেন, এ মেলায় আমার লেখা বেশ কয়েকটি বই এসেছে। বইগুলো ‘আপন আলো’ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ছোটদের জন্য একটি সিরিজ বই প্রকাশ করেছি। এরমধ্যে রয়েছে, ছোটদের ড. অনুপম সেন, ড. জামাল নজরুল ইসলাম, ড. মাহবুবুল হক, বেগম রোকেয়া, এপিজি আবদুল কালাম ও অ্যধাপক মোহাম্মদ খালেদ। শিক্ষকদের জন্য লেখা বই শিক্ষকতা মহান পেশা, শিক্ষা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, শিক্ষক অভিভাবক সমীপে, একীভূত শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা এবং সৃজনশীল প্রশ্নপত্র ও অন্যান্য প্রসঙ্গ। শেষ বইটিতে সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের খুঁটিনাটি দিকগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এছাড়াও সৃজনশীল প্রশ্নপত্র সম্পর্কে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এবং ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের কথাগুলো তুলে ধরেছি। আশা করি এটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের উপকারে আসবে।
অধ্যাপক শামসুদ্দীন শিশির বলেন, শিক্ষকতা মহান পেশা বইটিতে শিক্ষকদের অক্সিজেন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে শিক্ষকতা একটি ব্রত। শিক্ষকতা কী, কেন, কেমন, কিভাবে নেশায় পরিণত করা যায় এবং সফল শিক্ষক হওয়ার পথ নির্দেশ করা হয়েছে। ছোটদের জন্য লেখা বইগুলো ছোটদের খ্যাতিমান মানুষদের পথ-মত-ধর্মকে অনুকরণ করে কীভাবে সফল মানুষ হওয়া যায় তা উপস্থাপন করা হয়েছে।

এবার অনন্য এক
বইমেলা দেখল
চট্টগ্রামবাসী

এস এম রানা
‘অতীতে চট্টগ্রামে একাধিক বইমেলা হতো। ছোট পরিসরের এসব বইমেলা পাঠক-লেখকদের প্রাণ জুড়াতে পারত না। একটি বইমেলার জন্য পাঠক-লেখক ও প্রকাশকদের ছিল আকুলিবিকুলি। আহারে, ঢাকার মতো যদি একটি বড় পরিসরের বইমেলা হতো চট্টগ্রামে! এমন আকুলিবিকুলির অবসান ঘটিয়ে এবার চট্টগ্রামের বইমেলা পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের প্রাণ জুড়িয়ে দিয়েছে। যেন মরুদ্যানে উপচে পড়েছে কলকল-ছলছল পানির ঢেউ। এই ঢেউয়ের টানেই ভেসে গেছে পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা আকুলিবিকুলি।’ বলেছেন, সাংবাদিক এসএম রানা।
প্রধানমন্ত্রীকে উৎসর্গ করে লেখা ‘রোহিঙ্গা : নিপীড়িত ভ‚মিপুত্র’ এর লেখক সাংবাদিক এসএম রানা বলেন, সত্যিই, এবার অনন্য এক বইমেলা দেখল চট্টগ্রামবাসী। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৯ দিনের বইমেলার মূল আকর্ষণ অতীতের একাধিক মেলা বাদ দিয়ে সম্মিলিত বইমেলার আয়োজন। এই জন্য সিটি করপোরেশন এবং মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সেই সঙ্গে সম্মিলিত বইমেলা আয়োজনের নেপথ্য কারিগরদের জানাই কৃতজ্ঞতা। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সম্মিলন না ঘটলে সত্যিই অসম্ভব হতো সম্মিলিত বইমেলার আয়োজন।
তিনি বলেন, এই বইমেলায় সারাদেশের প্রবীণ লেখকদের পাশাপাশি নবীন লেখকদের অনেক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তবে চট্টগ্রামের লেখকদের বিশেষভাবে সুবিধা হয়েছে সম্মিলিত বইমেলায়। কারণ, নিকট অতীতে এতোবড় পরিসরে চট্টগ্রামের লেখকরা বই প্রকাশের সুযোগ পাননি বললেই চলে। এবার সেই ক্ষুধা মিঠেছে চট্টগ্রামের নবীন লেখকদের। অবশ্য, প্রবীণ লেখকরা আগে থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রামে সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে এবার নবীনরা বেশি সুযোগ পেলেন। এই সুযোগ ভবিষ্যতেও অবারিত থাকবে, ভবিষ্যতে বইমেলার পরিসর আরো বৃহৎ আকার পাবে এবং এবারের মেলার ছোটখাটো ত্রুটিগুলো আগামীতে সংশোধন করে একটি পরিপূর্ণ প্রাণের মেলা হবে চট্টগ্রামে। সেই প্রত্যাশাই করি।
‘রোহিঙ্গা : নিপীড়িত ভূমিপুত্র’ সম্পর্কে এসএম রানা বলেন, জাতিসংঘের ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে ক্রমবর্ধমান শরণার্থী সংকট ছিল রোহিঙ্গা সংকট। এই সংকট মোকাবেলা খুব বলিষ্ঠভাবেই করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের অন্য দেশের নেতারা যখন তাদের দেশে শরণার্থী প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছিলেন, তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের বরণ করে নিয়েছেন তাঁর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে। এই কারণেই গ্রন্থটি প্রধানমন্ত্রীকে উৎসর্গ করা হয়েছে।