সাগর-মহাসাগরে জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা জরুরি

62

দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের কারণে সাগর-মহাসাগরে অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। সমুদ্রের জলজ প্রাণিসহ জীব-বৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণজনিত কারণে। যা পৃথিবীর ভারসাম্য স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করে দেবে অচিরেই। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য পাহাড়ের গাছপালার যেমন অপরিহার্যতা রয়েছে তেমনি, বনাঞ্চলের জীব-জন্তুর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত হওয়াও জরুরি। তার সাথে পৃথিবীর আয়তনের তিনভাগ জলজ-রাজত্বে সামুদ্রিক প্রাণির বৈচিত্র্য রক্ষাও একটি অপরিহার্য বিষয়। পাহাড়, সমুদ্র, স্থলভাগে যে সব উদ্ভিদ ও প্রাণি রয়েছে তাদের স্বাভাবিক বৈচিত্র্য রক্ষিত হলেই পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ু স্বাভাবিক থাকবে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সবুজ বনাঞ্চল, গাছপালার ভূমিকার পাশাপাশি সমুদ্র ও স্থলভাগের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
বাণিজ্যিক সভ্যতার লাগামহীন শোভাযাত্রা, শিল্পায়ন, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং বনাঞ্চল ধ্বংসের যে উৎসব বিশ্বে চলছে তার ফলে গ্রীন হাউজ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। বিশ্বায়নের টাট্টোঘোড়ার দৌড়ে বিশ্ব যেভাবে শিল্পায়নের দিকে এগোচ্ছে তাতে বায়ু দুষণ হচ্ছে অতিরিক্ত মাত্রায়। কলকারখানার ধোঁয়ায় বায়ুদূষণের ফলে বাতাসে সিসার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে শিল্পকারখানার বর্জ্য ও কাঁচামালের দোষিত জলরাশি প্রতিনিয়ত নদী সাগর-মহা সাগরের পানিতে মিশে যাচ্ছে। যার ফলে নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস জলধারায় মেশার কারণে সমুদ্রের প্রাণিকূলের পুষ্টি দূষণ হচ্ছে।
বিজ্ঞানিরা ধারণা করছেন ১৯৬০ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে কৃষিখামার ও শিল্পকারখানার নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের প্রভাবে সমুদ্রের পানিতে ২ শতাংশ অক্সিজেন হারিয়ে গেছে। সারা বিশ্বের বিবেচনায় এর পরিমাণ খুব বেশি মনে না হলেও কার্যত সাগর-মহাসাগরে তার প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে।
এ কারণে মারাত্মক হুমকিতে পড়ছে সমুদ্রের অসংখ্য মাছের প্রজাতি ও সামুদ্রিক প্রাণি। সমুদ্রের চরে মরে থাকতে দেখা যাচ্ছে নানা প্রজাতির কাছিম। মরে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সাগর মহাসাগরে অক্সিজেনের পরিমাণ আরো অধিক হারে কমতে শুরু করলে পানি দূষণের প্রভাব সামুদ্রিক প্রাণিকূলে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিবে। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দের এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
বিশ্ব উষ্ণায়ন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা রোধে বিশ্ব বিজ্ঞানিদের বিকল্প চিন্তা করার সময় এসেছে। জল-স্থলে জীববৈচিত্র্য রক্ষা, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে নতুন প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও বিজ্ঞানিদের দায়িত্ব এ বিশ্বকে আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ রাখা। এর জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমাদের সমুদ্রের অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক রাখার ব্যবস্থা করতে এগিয়ে আসতে হবে। সমুদ্র তার ভারসাম্য হারালে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সুনামি ইত্যাদি বেড়ে যাবে বিশ্বে। প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারালে ভূ-কম্পনসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। পৃথিবী রক্ষার দায়িত্ব পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের। সুতরাং পৃথিবী রক্ষায় দেশ জাতি নির্বিশেষে সমগ্র বিশ্ব মানবকে এগিয়ে আসতে হবে।