সাওলের ১০ বছর

163

আজ ৯ জানুয়ারি সাওল হার্ট সেন্টার বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবায় ১০ বছর পূর্ণ করল। মহাকালের বিচারে ১০ বছর খুব কম সময়। তবে সাওলের জন্য অনেক সময়। কেননা, যে কোনো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যুদ্ধকালীন বা লড়াই-সংগ্রামের সময় অনেক দীর্ঘ মনে হয়। কারণ সেই মুহূর্তগুলো, দিন এবং রাত্রিগুলো যেন কিছুতেই কাটতে চায় না। একেকটা দিন, একেকটা রাত শেষ হয়ে নতুন দিন আর আসবে কিনা, নতুন ভোর আর জাগবে কিনা সেই দুঃসহ দুর্ভাবনা ভয়াবহ যন্ত্রণাময় একেকটা দিন একেকটা শতাব্দীর মতো দীর্ঘ মনে হয়।
হ্যাঁ, সত্যি বলতে কি সাওল (Science And Art Of Living-SAAOL)-এর মতন নতুন একটি চিকিৎসাপদ্ধতি প্রচলিত ধ্যান-ধারণা-পদ্ধতির বিপরীতে প্রতিষ্ঠা করা চারটে খানি কথা নয়। কোনো নতুনকেই সহজে মেনে নিতে চায় না পুরাতন। সাওলের বেলায়ও তাই হয়েছে। একদিকে জনগণের অসীম চাহিদা অন্যদিকে প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতির ধারক-বাহকদের প্রচন্ড বিরোধিতার পাহাড়সমান বাধা। প্রবল স্রোতের বিপরীতে উজান ঠেলে ঠেলে সাওলের ১০ বছরের পথচলা।
২০০৮ সালে কোলকাতা বাইপাস অ্যাপোলোতে হার্টের বøকেজের দুঃসংবাদ যেমন মুষড়ে দিয়েছিল তেমনি আবার ডাঃ বিমল ছাজেড়ের ‘হৃদরোগ মুক্তির সহজ ৫ পদক্ষেপ’ বইটি আশার আলো প্রজ্বলিত করেছিল বন্ধ-হৃদয়ে। ডাঃ বিমল ছাজেড়ের লেখায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাওল পদ্ধতি অনুসরণ করে বিগত ১০ বছর রিং না পরে কিংবা অপারেশন না করে বেঁচে আছি! সুস্থ আছি। ভালো আছি। নিজের জীবন দিয়ে অর্জন করা শিক্ষা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও প্রমাণের চেয়ে বড় আর কোনো প্রমাণ বা গবেষণা কি প্রয়োজন আছে? আমার স্বজন-বন্ধুরাই ভালো দিতে পারবেন ২০০৮-এ আমার ভগ্নস্বাস্থ্য, আর আতংকিত চেহারার বর্ণনা। অনেক বন্ধুরা বলেন, মৃত্যুপথযাত্রী মোহন কী করে আবার ফিরে এলো সুস্থ জীবনে?
আমেরিকার ডা. ডিন অর্নিশের রিভার্সাল হার্ট ডিজিজ চিকিৎসাপদ্ধতিকে আরো বিকশিত করে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং প্রাচীন ভারতীয় প্রাকৃতিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের সংমিশ্রণে ডাঃ ছাজেড়, ‘সুস্থতার শিল্পিত বিজ্ঞান-সাওল’ পদ্ধতির প্রচলন না করলে, আমি তার সন্ধান না পেলে, বাণিজ্যনির্ভর কাটা-ছেঁড়া বা অপারেশন পদ্ধতিতে গেলে আজকের মতন সুস্থ যে থাকতাম না, সেটা অত্যন্ত জোর দিয়ে বলতে পারি। আমি আমার বাবা, ভাই, চাচা ও শ্বশুরসহ অসংখ্য মানুষকে দেখেছি যারা রিং পরে বা অপারেশন করে বার বার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কিংবা মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি আমার নিজের জীবনে সাওল পদ্ধতি প্রয়োগ করে নিজে সুস্থ থেকে ভালো থেকেই ডাঃ ছাজেড়ের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে পারি লাইফস্টাইল চেঞ্জ করলে, যেসব কারণে হার্টের রোগ হয়েছে সেগুলো সরালে কোনো লোকই হার্ট অ্যাটাকে মারা যাবেন না।’
সাওলের ১০ বছরের পথচলা কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। প্রতি পদে পদে পথের কাঁটা সরিয়ে আমাদের এগিয়ে আসতে হয়েছে। হৃদরোগ চিকিৎসার প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি- রিং পরা এবং বাইপাস অপারেশন করা, তার বিপরীতে ‘বিনা অপারেশনে হৃদরোগ থেকে মুক্তি’ এই কথার ঘোষণা দেশব্যাপী এক দারুণ কৌত‚হল সৃষ্টি করেছিল। ২০০৯-এর জানুয়ারী মাসের ৯, ১০ ও ১১ তারিখে শিল্পকলা একাডেমীতে প্রথম সাওল হার্ট ক্যাম্প আয়োজনে আশাতিত সাড়া পড়েছিল মানুষের মধ্যে। পাঁচ শতাধিক মানুষ ফি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছিল। অংশগ্রহণকারীরাও আশাতীত সন্তুষ্ট হয়েছিল ডাঃ ছাজেড়ের তিন দিনের কর্মশালায় হৃদরোগ, হৃদরোগের কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে পুংখানুপুংখ জানতে পেরে এবং হৃদরোগের অন্যতম কারণ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের উপায় জেনে। পাশাপাশি ইয়োগা, মেডিটেশন আর বিনাতেলে রান্না শেখার অভিনব কলা বিমুগ্ধ করেছিল সবাইকে। মতামত জরিপপত্রে অংশগ্রহণকারীরা ডাঃ ছাজেড়-কে বাংলাদেশের হৃদরোগীদের সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রেরিত ত্রাতা হিসেবেও উল্লেখ করেছিলেন। প্রচন্ড দাবি উঠেছিল, নিয়মিত ডাঃ ছাজেড়কে বাংলাদেশে আনার, প্রতিমাসে হার্ট ক্যাম্প আয়োজনের এবং বাংলাদেশে সাওল হার্ট সেন্টারের শাখা প্রতিষ্ঠার।
যার উদার অকৃপণ আন্তরিক সহযোগিতা এবং উৎসাহের কারণেই ‘সাওল’ নামটি বাংলাদেশের মানুষ জানতে পেরেছেন এবং সাওল চিকিৎসাপদ্ধতির চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন, তিনি হলেন বাংলাদেশের নতুন ধারার সংবাদপত্রের জনক আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, আমাদের সময় এইসব যুগান্তকারী পত্রিকার উদ্যোক্তা এবং প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রিয় নাঈমুল ইসলাম খান। বিনা অপারেশনে হৃদরোগ মুক্তি, ডাঃ বিমল ছাজেড় এবং সাওল পদ্ধতি সম্পর্কে আমি যখন বন্ধু-বান্ধব, স্বজন বা অন্যদের বলছিলাম, সবাই আমাকে পাগল বলেছিল। অপারেশন ছাড়া কোনোদিন হার্টের রোগ দূর করা যায়? এটা কখনো কেউ কোথাও শুনেছে? বন্ধুরা কেউ কেউ বললো, ছাত্রজীবনে এক হৃদয় নিয়ে পাগলামী করেছিস আবার এ বয়সে এসে আরেক হৃদয় নিয়ে পাগলামী শুরু করেছিস। এসব ছাড়্। একমাত্র নাঈমুল ইসলামই আমাকে উৎসাহিত করেছিল। হ্যাঁ, মোহন ভাই, এ তো নতুন খবর! আপনি আমার পত্রিকায় এ বিষয়ে একটা কলাম লেখা শুরু করেন।’ শুধু তাই নয়, নিজে একটা ভ‚মিকা লিখে আমার ছবিসহ সেই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয়, সর্বাধিক বিক্রিত ‘দৈনিক আমাদের সময়’র প্রথম পাতায় ছেপে দেয় আমার ফোন নম্বরসহ। সেই থেকে আজকের সাওল। লম্বা কাহিনী। ‘আমার হৃদয় তবে আমার ঘাতক’ বইয়ে লিখেছি। আসলে নাঈমের ভ‚মিকা ছাড়া আমার পক্ষে সাওল-যাত্রা সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশে সাওলের ইতিহাসের সঙ্গে নাঈমুল ইসলাম খানের নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। প্রতি শনিবার সাপ্তাহিক সাওল হার্ট সেমিনারসহ সাওলের যতো সেমিনার, ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়, আমাকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে নাঈম-কাহিনী বর্ণনা করতে হয়। সাওলের ১০ বছর পূর্তিতে আমি তাই গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে বাংলাদেশের এই সৃজনশীল সংবাদপত্রের পথিকৃৎকে স্মরণ করছি।
বাংলাদেশ সাওলের ১০ বছর পূর্তিতে এই মূহূর্তে অনেকের কথাই মনে পড়ছে, যারা বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্নভাবে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত না করলে প্রবল প্রতিবন্ধকতার সামনে এই নতুন চিকিৎসা ধারণাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসা সম্ভব হতো না। এদের অনেকের সাওলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিতিই আমাদের শক্তি, সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছেন। এই লেখায় এতো নাম উল্লেখ সম্ভব নয়। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞতাভরে তাদেরও স্মরণ করছি।
গত ১০ বছর সাওল হার্ট সেন্টার ৩০ হাজারেরও বেশি রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ রেখেছে। যাদের অধিকাংশকেই রিং পরানো কিংবা অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছিলেন অন্য চিকিৎসকেরা। এমনকি তারা যে কোনো সময় মারা যেতে পারেন বলেও জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। ইনশাল্লাহ্ আমরা তাঁদের বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছি বিনা রিং কিংবা বিনা অপারেশনে। সাওল-কে নিয়ে প্রচলিত পদ্ধতির ডাক্তারদের একটা ভুল ধারণা আছে, কারণ তারা এ বিষয়ে জানেনই না বা জানার আগ্রহ নেই। ‘বিনা অপারেশন’ কথাটা শুনে তারা মনে করেন, সাওল কোনো টোট্কা-ফোট্কা, ঝাঁড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজ, পানিপড়া কিংবা অন্যকোনো চিকিৎসাপদ্ধতি। অথচ সাওল পিউর সায়েন্স। এলোপ্যাথি চিকিৎসা। এলোপ্যাথির পরীক্ষা-নিরীক্ষা ঔষুধ সব আমরা প্রয়োগ করি, শুধু বুকটা কাটতে দেই না। বরং রিং বা বুক কাটার অস্থায়ী চিকিৎসার বদলে লাইফস্টাইল পরিবর্তনের স্থায়ী চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগ করি। তদুপরি রিং বা অপারেশনের পুরনো পদ্ধতির চেয়ে সর্বাধুনিক ডিজিটাল ইসিপি (ঊীঃবৎহধষ ঈড়ঁহঃবৎ চঁষংধঃরড়হ-ঊঈচ) মেশিনে আমরা বুক না কেটে বাইপাস করে দেই। কাটা-ছেঁড়া বা রক্তারক্তি ধারার চিকিৎসকেরা এ বিষয়ে বা বিজ্ঞানের লেটেস্ট ডেভেলভমেন্ট সমন্ধে খবরই রাখেন না কিংবা জেনেও না জানার ভান করেন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে। রোগী বা মানবতার স্বার্থে মেনে নেন না বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বশেষ এবং সুউন্নত মানব-বান্ধব চিকিৎসাপদ্ধতিকে।
সাওলের বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসাসেবায় রোগীরা সুস্থ হয়ে নিজেদের স্বজন বা আত্মীয়কে নিয়ে আসছেন বা পাঠাচ্ছেন সাওলে। আমরা নতুন রোগীদের জিঙ্গাসা করি, আপনি কীভাবে সাওলের কথা জানলেন? আমরাতো সেভাবে প্রচার প্রোপাগান্ডা চালাতে পারি না। তারা বলেন, তাদের আত্মীয় বা বন্ধু এখানে ট্রিটমেন্ট নিয়ে ভালো হয়ে তাকে এখানে পাঠিয়েছেন। ভেবে দেখুন, হার্টের মতন ভয়াবহ রোগে কেউ নিজে ভালো না হলে বা এই চিকিৎসাপদ্ধতির ওপর নিজের আস্থা তৈরি না হলে কি করে আপন আত্মীয় বা নিকটতম বন্ধুকে সাওলে পাঠাতে পারেন? আমরা দাবি করে বলতে পারি, আমাদের সাকসেস রেট ৯৮%। যে ২% রোগীর উন্নতি হয় না সেটা চিকিৎসাপদ্ধতির কারণে নয়, নিজেরা চিকিৎসাপদ্ধতি ফলো করেন না বা বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে। তাছাড়া চিকিৎসাক্ষেত্রে সবসময় সব রোগীর ক্ষেত্রে শতভাগ সফলতা নাও আসতে পারে।
সাওল ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও সাওলের লক্ষ্য কেবলি মুনাফা অর্জন নয়। সাওলের মূল লক্ষ্য মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া। সে কারণে সাওল এদেশে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়। সে লক্ষ্যেই সাওল প্রতি শনিবার বিকেল ৪টায় সাপ্তাহিক সাওল হার্ট সেমিনার, রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় সাওল ইয়োগা-মেডিটেশন ও মানসিকচাপ মুক্তির সেমিনার এবং সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ডায়েট ও বিনা তেলে রান্না সেমিনারের আয়োজন করে। সারাদেশে আঞ্চলিক, বিশেষ এবং জাতীয় সেমিনার ও ক্যাম্প আয়োজন করে থাকে। বিভিন্ন এলাকায় ও প্রতিষ্ঠানে এ পর্যন্ত ২৬টি বিশেষ সেমিনার, জাতীয় পর্যায়ে ১৭টি, ১২৯টি সাপ্তাহিক ফ্রি হার্ট সেমিনার, ২৫টি ফ্রি ইয়োগা-মেডিটেশন ও মানসিকচাপ মুক্তির সেমিনার এবং ২০টি ফ্রি ডায়েট ও বিনা তেলে রান্না সেমিনারের আয়োজন করেছে সাওল হার্ট সেন্টার। সাওল চিকিৎসার অন্যতম বিষয় বিনা তেলে রান্না খাবার খাওয়া। সাওল হার্ট সেন্টারে বিনা তেলের ক্যাফে আছে। রোগীদের এবং স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের বিনা তেলে খাবার সরবরাহের জন্য এবং হোম ডেলিভারী সার্ভিস এবং বিয়ে বাড়ি, জন্মদিনসহ সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিনা তেলে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরীর জন্য ‘অয়েল ফ্রি কিচেন’ প্রতিষ্ঠা হয়েছে সম্প্রতি। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে জেলা, উপজেলা, পাড়া, মহল্লায় এই সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে দেশকে হৃদরোগ মুক্ত করতে। হৃদরোগ একটি অসংক্রামক এবং প্রতিরোধযোগ্য অসুখ। জীবনশৈলী পরিবর্তনের মাধ্যমে পোলিও এবং মহামারির মতন দেশ থেকে একদিন হৃদরোগকেও বিদায় করা সম্ভব- সাওল সেটা দৃঢ়ভাবে মনে করে। আমাদের তাই যখন যে ডাকে আমরা ছুটে যাই জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজে। আমরা দেশবাসিকে আহব্বান জানাই আসুন, আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই আন্দোলনটাকে এগিয়ে নেই, ছড়িয়ে দেই সবখানে। আমরা ভ‚পেন হাজারিকার গানটি একসঙ্গে গেয়ে উঠি মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য… । কার্ল মার্কসের মহান উক্তি ডড়ৎশং ভড়ৎ সধহ (মানুষের জন্য কাজ) জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করি।
প্রতিষ্ঠান হিসেবে সাওল একটি পরিবারের মতন। এখানে রোগী, রোগীর অ্যাটেনডেন্ট, ডাক্তার, নার্স, ডায়েটিশিয়ান, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবার মাঝে একটা পারিবারিক সৌহার্দ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করি আমরা। সবাই যেন ফিল করে যে, আমি আমার নিজের পরিবারে থেকে আমার আপনজনের সেবা-যত্ন পাচ্ছি। আর সাওল-সেবকরাও যেন ভাবে যে, আমার পরম আত্মীয়কে আমি সেবা করছি। আমরা একটি ছোট্ট প্রতিষ্ঠান হয়েও যেন বাংলাদেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হতে পারি।
আমরা আমাদের কর্মীদের প্রত্যেকের জন্মদিন পালন করি। চিকিৎসাসেবা নেয়া লোকদের নিয়ে পিকনিক, ভ্রমণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এসবের আয়োজন করি। রোগীদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন-যাপনের খোঁজ-খবর রাখার চেষ্টা করি। ‘সাওল সময়’ নামে একটি স্বাস্থ্য সাময়িকী প্রকাশ করি।
সাওলের চিকিৎসাসেবা নেয়া, পরামর্শ পাওয়া, সাওল জীবনে আস্থাশীল, সাওলের সঙ্গে যুক্ত, অযুক্ত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, দেশ প্রেমিক সকল নাগরিকের প্রতি উদাত্ত আহব্বান জানাই আপনারা সাওলকে জানুন, বঝুন এবং আসুন, আমরা সবাই মিলে মহাঘাতক হৃদরোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে দেশব্যাপী একটি বাস্তব কার্যকর ফলপ্রসু স্বাস্থ্য আন্দোলন গড়ে তুলি।
হৃদরোগ চিকিৎসায় অপ্রয়োজনীয় রিং পড়ানো কিংবা বাইপাস অপারেশনের অস্থায়ী, অমানবিক, অতি-বাণিজ্য চিকিৎসাপদ্ধতির ঘেরাটোপ থেকে বিপন্ন মানুষকে বিনা রিং, বিনা অপারেশনে, বিনা কষ্টে, হৃদরোগ মুক্তির জীবন বদলের খোলা প্রান্তরে হু হু মুক্ত বাতাসে হেঁটে-চলে, দৌঁড়ে, বুকভরে নিঃশ্বাস নিয়ে সুখাদ্য খেয়ে সুস্থ, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার উপায় খুঁজে দেই।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, সাওল হার্ট সেন্টার, বাংলাদেশ