সাইফুর রহমানের প্রথম প্রকাশনা জীবনঘনিষ্ঠ গল্পের বুণন ‘গুনিন’

73

বিস্তৃত ভাবনাকে যতটুকু সম্ভব ছোট পরিসরে আবদ্ধ করে তাতে আবেগ, ভালোবাসা, রহস্য, হাসি-কান্না ফুটিয়ে তোলা গেলেই তাকে ছোট গল্পের আওতায় ফেলা যায়। এতে অল্প কথায় গল্প সারতে হয়। কিন্তু তুলে আনতে হয় মহাজীবনকে। মো. সাইফুর রহমান তার প্রথম গল্পের বই ‘গুনিন’ এ এই কাজটি করেছেন অসাধারণভাবে।
মোট ২৩টি গল্পে সজ্জিত সংকলনটিতে রয়েছে রহস্য, থ্রিলার, রোমান্স, ট্র্যাজিক ও মনস্তাত্তি¡ক ধাঁচের গল্প। বইটির প্রতিটি গল্পই জীবনঘনিষ্ঠ। প্রতিটি চরিত্র যেন আমাদের চারপাশের চরিত্রের প্রতিচ্ছবি কিংবা আমরা নিজেরাই।
বইটির প্রথম গল্পের নাম প্রিয়জন। গল্পের নায়ক আহসান সাহেব। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বসবাস। এক দুর্ঘটনায় এলোমেলো হয়ে গেছে জীবন। মনে হবে- চোখ বন্ধ করে বলা যাবে গল্পের শেষ পরিণতি কী। কিন্তু অনুমান হোঁচট খায় কয়েক ধাপে। গল্পটির পরতে পরতে উত্তেজনা। টোটালি আনপ্রেডিক্টেবল।
গুনিন যেহেতু সংকলনের নাম, তাই গল্পটি নিয়ে দুই-এক লাইন লেখা সমীচীন। বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন লোককে গুনিন বলা হয়। এই গল্পে গুনিন হচ্ছেন শরাফত আলী। এই গুনিনকে কেন্দ্র করে ১৯৩১ সালের দিকের বাঙালির যাপিত জীবন যেন অসাধারণভাবে শিল্পীর তুলিতে ফুটে উঠেছে।
প্রিয়জন, খুঁজি তোমায়, অপেক্ষা, মায়া গল্পগুলো যতবার পড়ি ততবার আবেগ-আপ্লুত হই। গল্পের চরিত্রগুলো আবেগ, অনুভূতি ও হ্রদয় ছুঁয়ে যায়। সারোগেসির মতো নতুন একটি বিষয় খুঁজি তোমায় গল্পের মাধ্যমে চমৎকারভাবে তুলে এনেছেন লেখক। খোকা গল্পে হাস্যরসের মাধ্যমে শহুরে মধ্যবিত্তের বাস্তবচিত্র এঁকেছেন।
বইটির উল্লেখযোগ্য আরো কিছু গল্প- ধোঁকা, খোকা, বাবা, নাফিজার খোঁজে, নীলার নীলপদ্ম, সারপ্রাইজ ও হƒদিতা। ঝরঝরে লেখা। অসাধারণ উপমার প্রয়োগ। সত্যি, গল্পগুলো পড়ে লেখকের লেখার মায়ায় পড়ে যাবে যে কেউ। প্রত্যেকটি গল্পের টানটান উত্তেজনা চুম্বকের মতো গল্পের গভীরে টেনে নিয়ে যায়। কী অনন্য শব্দ চয়ন প্রায় প্রতিটি গল্প বুননের দিক দিয়ে প্রবল শক্তিশালী।
লেখক অসাধারণ দক্ষতায় মানবমন আর সমাজের ব্যাধিগুলোকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন। বিভিন্ন গল্পে উঠে এসেছে বর্তমান সময়ের পারিবারিক অবক্ষয় এর চিত্রও।
এই বইয়ে লেখকের যেসব অনন্য বৈশিষ্ট্য চোখে পড়েছে তা হলো-এখানে গতানুগতিক অন্য গল্পের মতো মানবীয় প্রেমটা প্রকট হয়ে উঠেনি। কল্পনাশক্তির অসাধারণ প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। লেখক পাঠককে গল্পের একটি প্লট হতে অন্য প্লটে নিয়েছেন আলতো করে। যেন পাঠকের ঘোর কেটে না যায়। প্র্রায় প্রত্যেকটি গল্পে পাঠকদের রহস্যের মধ্যে রেখেছেন লেখক। গল্পের শেষ লাইনটি না পড়া পর্যন্ত মূল ঘটনায় পৌঁছতে পারছেন না পাঠক। অর্থাৎ গল্পগুলো যেভাবে টানটান উত্তেজনা নিয়ে পাঠককে শেষের দিকে নিয়ে যায়, গল্পের শেষেও উত্তেজনার রেশটা রয়ে যায়। এই মুন্সিয়ানা খুব কম লেখকের মধ্যেই দেখা যায়।
তবে লেখায় কিছু সীমাবদ্ধতাও পরিলক্ষিত হয়েছে। গল্পগুলোতে যতি চিহ্নের ব্যবহার যথাযথ মনে হয়নি। এছাড়াও কয়েকটি গল্পের পরিধি একটু বড় হলে পাঠকের আসত্তি পূর্ণ হতো।
সবশেষে বলা যায়, অভিষেক বইটি দিয়েই লেখক বাংলা সাহিত্যে তার শক্তিশালী আগমনী বার্তা দিয়েছেন। ‘গুনিন’ বইটি লেখকের দীর্ঘ সাহিত্য ইনিংস এ মাইলফলক হয়ে থাকবে।
বইটি পাওয়া যাবে: অমর একুশে গ্রন্থমেলার আফসার ব্রাদার্স এর স্টলে। স্টল নং: ২৮৯-২৯২। এছাড়াও পাওয়া যাবে চট্টগ্রামের বাতিঘরে।