সাংবাদিকদের ‘দুর্দশা’ আ.লীগের রাজনীতির ফসল

26

টানা ১১ বছর আওয়ামী লীগের ‘কর্তৃত্ববাদী’ রাজনীতির কারণে দেশের অন্যান্য খাতের মতো সংবাদমাধ্যমও সমস্যায় পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম অর্থ সংকটে ‘রুগ্ন শিল্পে’ রূপ নিচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে দুই সাংবাদিক বলার পর এরজন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করছেন এই বিএনপি নেতা।
গতকাল রবিবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই ফ্যাসিবাদী সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তারা সব ব্যবস্থা করছে। বিচার ব্যবস্থাকে পুরোপুরিভাবে দখল করে নিয়েছে, তারা প্রশাসনকে দখল করে নিয়েছে। এখন আপনারা গণমাধ্যমে যারা কাজ করছেন তার মালিকানা পুরোপুরিভাবে তারা (সরকার) নিয়ন্ত্রণ করছে। এমনকি আপনাদের যে সংগঠন সংবাদ কর্মীদের, সেখানেও বিভক্তি করে দিয়ে তারা সেখানেও পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে’।
সাংবাদিকরা চাকুরিচ্যুত হচ্ছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমি খুব ব্যক্তিগতভাবে ভালো করে জানি, আপনাদের বহু সংবাদ কর্মীর কাজ নেই, তারা বেকার হয়ে গেছেন। আমি বহু সংবাদ কর্মী সম্পর্কে জানি যে, তারা অত্যন্ত আর্থিক কষ্টে আছেন। এটাই হচ্ছে এখনকার এই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার, এই রাজনীতির পরিণতি’।
বিএনপির অনেকেও কাজের অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের বুহ ছেলে আছে যারা ছাত্র দল, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল বা বিএনপি করে, তারা নিজ নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় রিকসা চালাচ্ছে, হকারের কাজ করছে। অনেকে কাজ না পেয়ে আত্মহত্যা করছে। এটাই বাস্তবতা। আজকের এই সংকট আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করেছে। এটা নতুন নয়। ১৯৭২ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল তখন এই অবস্থা তৈরি করেছিল। ওই সময় ক্ষমতাসীন দল থেকে একটি বড় অংশ বেরিয়ে গিয়ে জাসদ তৈরি করেছিল, তারা সরকারের বিরোধিতা করেছিল। তখন জাসদের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল, যারা ওই সময়ে বাম রাজনীতি করেছে স্বাধীনতার সংগ্রামের অংশ নিয়েছিলেন তাদের অনেককেই হত্যা করা হয়েছিল। তখন যারা সত্য কথা বলতেন তাদেরকেও কারাগারে নেওয়া হত এবং বিভিন্নভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করা হত’।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এমনই সমস্যা হয়েছিল স্বাধীনতা পরে পরই যে, প্রায় সবাইকে কোলাবারেটর বানিয়ে দিচ্ছিল। তখন হলিডের প্রখ্যাত সম্পাদক এনায়েতুল্লাহ খান নিজের পত্রিকায় লিখেছিলেন যে, তাহলে কি সাড়ে ৬ কোটি মানুষই কোলাবারেটর? আমরা আওয়ামী লীগকে ভালোভাবে চিনি, আমরা সমস্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে চিনেছি, আমরা জীবন দিয়ে চিনেছি, আমরা জানি আওয়ামী লীগ কী?’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে’ ১৪ মাস ধরে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল। তবে শেষ অবধি নেত্রীকে মুক্ত করার আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বার বার কথা বলছি, আন্দোলন করছি, চেষ্টা করছি, আমরা কাজ করছি। সব সময় যে সব আন্দোলন সফল হবে- এটা নাও হতে পারে। ‘ফ্যাসিবাদী শক্তির সাথে গণতান্ত্রিক শক্তি যখন লড়াই করে তখন আপনাকে মনে করতে হবে সেই আন্দোলন সহজ ও সাধারণ সংগ্রাম নয়। খবর বিডিনিউজের
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) একাংশের বার্ষিক কাউন্সিলে বক্তব্যে সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন বিএনপির মহাসচিব।
অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মজিবুর রহমান বলেন, ‘আজকে মানুষের জান-মালের কোনো নিরাপত্তা নাই, হত্যা-গুম-খুন হচ্ছে। যারা গুম হয়ে যাচ্ছে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, গুম-খুনের দেশ বাংলদেশ’।
এর বিরুদ্ধে লেখার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের সময় এসেছে সত্য কথা বলার, হক কথা বলার। হক কথা বলার জন্য যে চেষ্টা করা দরকার সেটা আমাদের করতে হবে। সাংবাদিকদের কলম অত্যন্ত শক্তিশালী। আপনাদের অনেক লেখা পড়ে আমাদের চোখে পানি আসে, লেখাগুলো পড়ে আমরা শক্তি ফিরে পাই। আজকে সাংবাদিকদের সাহস করে এগোতে হবে, ঐক্যবদ্ধভাবে আপনাদের সত্য কথা তুলে ধরতে হবে’।
বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘এমন একটি সরকার ক্ষমতায় বসে আছে যে, দিনের ভোটে বিশ্বাস করে না, রাতের ভোটে বিশ্বাস করে। আজ মিডিয়ার স্বাধীনতা নেই, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নেই, রাজনীতিবিদদের স্বাধীনতা নেই। এই অবস্থার পরিবর্তনে অবশ্যই আমাদের শপথ নিতে হবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার। আমরা যদি গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে না পারি, মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে গণমাধ্যম কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না’।
শফিউল আলম দোলন, আহমেদ মতিউর রহমান ও জিএম আশেকুল্লাহর পরিচালনায় এই কাউন্সিলে বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এমএ আজিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামালউদ্দিন সবুজ, ইউনিয়ন নেতাদের মধ্যে ঢাকার কাদের গনি চৌধুরী, চট্টগ্রামের শাহ নেওয়াজ, কুমিল্লার রমিজ খান, কক্সবাজারের মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম, দিনাজপুরের জিএম মঈনুদ্দিন হিরু, কুষ্টিয়ার আবুল বাশার বাচ্চু, ময়মনসিংহের এম আইয়ুব আলী, খুলনার রাশেদুল ইসলাম, গাজীপুরের এইচএম দেলওয়ার, বগুড়ার মির্জা সেলিম রেজা, কাফী কামাল, তরিকুল ইসলাম তারেক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
দুপুরে মধ্যাহ্নভোজ পরবর্তী বিএফইউজের কর্ম অধিবেশনে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।