সহায়তা নিয়ে বিএনপির নেতারা জনগণের পাশে

28

নির্বাচনী কোনো প্রচারণা বা লোক দেখানো কাজে নয়, মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির নেতারা। করোনা প্রতিরোধের জন্য ঘরবন্দি হয়ে যাওয়া মানুষের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন তারা। আবার কেউ কেউ সচেতনতার জন্য কাজ করছেন। নিয়ম মেনে মহামারি কোভিড ১৯ রোগের বিস্তার রোধ করতে চান সবাই।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই নির্বাচনী প্রচারণায় মাস্ক বিতরণ শুরু করেন নগর বিএনপির সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। নির্বাচনী প্রচারণা থেকে তিনি সবাইকে স্বা¯্য’ সচেতনতার প্রতি বেশি জোর দিয়েছিলেন। প্রায় প্রতিটি সমাবেশে তিনি মাস্ক বিতরণ করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি ফেসিয়াল মাস্ক বিতরণ করেছেন ত্রিশ হাজারের বেশি। নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর তিনি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে যোগ দেন। সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জীবানুনাশক ছিটানোর কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অসহায়, দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের খাদ্য সহায়তা দেন। প্রতিদিন বিভিন্ন ওয়ার্ডে অসহায় পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, পিঁয়াজ, চিনি, তেল লবণ ও সাবানসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রাখেন। নগরবাসীর দুঃসময়ে পুরোদমে সরব রয়েছেন ডা. শাহাদাত হোসেন। প্রতিদিনই তিনি কোনো না কোনো এলাকায় তার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তার পক্ষে বিভিন্ন নেতাকর্মীরাও একই কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছেন।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, শুরু থেকেই আমি সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এ পর্যন্ত ত্রিশ হাজারের উপরে মাস্ক বিতরণ করেছি। এক লক্ষ মাস্ক বিতরণ করার টার্গেট আছে আমার। ঘরবন্দি হয়ে যাওয়া গরিব-অসহায়-দিনমজুর ও নিম্নআয়ের লোকজনের পাশে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে দাঁড়িয়েছি। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য হটলাইন নম্বর চালু করেছি। সব দিক দিয়ে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, সরকারি প্রনোদনা ও ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। সেটা কতটুকু মানুষের কাছে যাচ্ছে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ। সাধারণ মানুষের কাছে এ সহায়তা যাচ্ছে কিনা সেটা তদারকি প্রয়োজন। নিম্ন আয়ের লোকজন কিছু সহায়তা পেলেও যারা বেতন নিয়ে চলে তাদের অবস্থাও খারাপ। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের উচিত। এলাকার ধনাঢ্য ও বিত্তবানরা এসব মানুষের পাশে এগিয়ে আসতে পারেন। ডাক্তার হিসাবে আমি এখন থেকে সবাইকে টেলিমেডিসিন সেবায় এগিয়ে আসতে বলবো। আমি নিজেও প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে দুই ঘণ্টা ফেসবুকে লাইভ টেলিমেডিসিন সেবা দিব।
ঘরে ঘরে নিত্যপণ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় আসেন চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও নগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ান। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের জনসাধারণকে সচেতন করে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেন। গত ১ এপ্রিল বুধবার তার চট্টগ্রাম ৮ নির্বাচনী এলাকার এক হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দেন। বোয়ালখালী উপজেলা ও পৌরসভা এবং নগরীর ৫ টি ওয়ার্ডের হতদরিদ্র মানুষের জন্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে এসব খাদ্য সামগ্রী ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন। সবাইকে ঘরে থাকার আহবান জানিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে ছিল চাল, ডাল, আলু, পিঁয়াজ, তেল, লবণ ও সাবান। আবু সুফিয়ান নিজ হাতে কয়েকটি এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে এসব সামগ্রী পৌঁছে দেন। তার এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন বলে জানান তিনি।
আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা যে সাহায্য সহযোগিতা করছি, সেটা সাগরের মধ্যে ঢিল মারার মতো। মানুষের প্রচুর অভাব। ব্যক্তিগত সহযোগিতা সেই অভাব পূরণে সক্ষম নয়। তারপরও রাজনীতি করি, আমাদের উপর মানুষের চাহিদা আছে। সে হিসাবে আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সহযোগিতার। সরকারিভাবে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এই অভাব পূরণ সম্ভব নয়। সমাজের বিত্তবানদেরও এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসা উচিত। দল-মত নির্বিশেষে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা না থাকলে এই সংকট মোকাবেলা সম্ভব নয়।
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে এবং মসজিদে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান বিতরণ করেছেন।
নগর বিএনপি যখন করোনা প্রতিরোধে ঘরে থাকা মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসেন তখন ব্যতিক্রমী কার্যক্রমে হাত দেয় নগর যুবদল। নগরবাসীর মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে একযোগে ৪১ ওয়ার্ডের অলিগলিতে জীবাণুনাশক স্প্রে করে যুবদল। যুবদলের প্রশিক্ষিত এক দল তরুণের মাধ্যমে সফলভাবে পুরো নগরের মধ্যে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। জীবাণুনাশক স্প্রে করার পর যুবদলও খেটে খাওয়া, অভাবী ও কর্মহীন মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে শুরু করে। ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের সাধারণ মানুষের পাশে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাহেদ বলেন, যুবদলের পক্ষ থেকে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে জীবাণুনাশক ছিটানোর কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী ও অন্যান্য সহায়তা কার্যক্রমও পরিচালনা করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, যারা অভাবে আছেন তাদের পাশে দাঁড়াতে। যে যার অবস্থান থেকে প্রত্যেকের উচিত এই দুর্যোগে এগিয়ে আসা।
ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা এখন প্রতি ওয়ার্ডে ক্লোরিন সলিউশন ছিটানোর কার্যক্রমে রয়েছে। তাছাড়া বিএনপি নেতাদের বিভিন্ন ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করে যাচ্ছে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সাধারণ ছুটির এ সময়ে ত্রাণ সহায়তা দিতে গিয়ে অনেক জায়গায় ভিড় পড়ে যাচ্ছে। তাই বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘরে ঘরে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রতি জোর দেয়া হচ্ছে।