‘সশস্ত্রবাহিনী নরেন্দ্র মোদীর সেনা’ তোপের মুখে যোগী

38

ভারতের সশস্ত্রবাহিনীকে ‘নরেন্দ্র মোদীর সেনা’ বলে বিরোধীদল ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পড়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। লোকসভা ভোট শুরুর দিন কয়েক আগে তার এমন মন্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশনও। বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাকে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে হবে বলে কমিশনের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু। কট্টরপন্থি এ বিজেপি নেতার মন্তব্যটি নির্বাচনী বিধি লংঘনের দায়ে অভিযুক্ত হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। রোববার দলের এক প্রার্থীর পক্ষে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সমাবেশে যোগী সশস্ত্রবাহিনীকে ‘নরেন্দ্র মোদীর সেনাবাহিনী’ হিসেবে উল্লেখ করেন, জানিয়েছে এনডিটিভি। বিরোধীদল কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে গিয়ে তিনি একথা বলেন। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী মোহাম্মদ কাসাবকে রমজানের সময় পুলিশি হেফাজতের মধ্যেই বিরিয়ানি দেওয়া হয়েছিল। কংগ্রেস আমলে এটি ঘটায় ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা এখন প্রায় সব নির্বাচনী সমাবেশেই ‘কংগ্রেস সন্ত্রাসীদের বিরিয়ানি খাওয়ায়’ বলে কটাক্ষ করছেন। রোববারের সমাবেশে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও একই ভাষা ব্যবহার করে কংগ্রেসের কঠোর সমালোচনা করেন। “মোদীর সেনাবাহিনী তাদের (সন্ত্রাসী) কেবল গুলি আর গোলা দেবে,” যোগ করেন তিনি।
তার এ মন্তব্য কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলোর কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে। এর মাধ্যমে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ‘সশস্ত্র বাহিনীকে অপমান করেছেন’ দাবি করে অনেকেই তাকে ক্ষমা চাইতেও বলেছেন। যার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে এ কথা বলেছিলেন, সেই বিজেপি প্রার্থী ভিকে সিংয়ের কাছ থেকেও যোগীর মন্তব্যের সমালোচনা এসেছে। “যদি কেউ ভারতের সেনাবাহিনীকে মোদীর সেনাবাহিনী বলে থাকেন, তাহলে তিনি কেবল ভুলই নন, একজন বিশ্বাসঘাতকও বটে,” বিবিসিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান ও মন্ত্রী জেনারেল ভিকে সিং। যোগী এমন কথা ‘স্বজ্ঞানে’ বলেননি বলেও ধারণা তার। “এটা মুখ থেকে হঠাৎ বেরিয়ে গেছে। আমরা মনে হয় না, তিনি তখন কি বলছেন, তা বুঝতে পেরেছিলেন,” বলেন সিং।

ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি জাতীয় নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। বিরোধীদল কংগ্রেস ‘সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে দুর্বল’ বলে আক্রমণ শানাচ্ছে তারা।
ভোটের প্রচারে সেনাবাহিনীর প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে আগে থেকেই সতর্ক করেছিল ভারতের নির্বাচন কমিশন। “রাজনৈতিক প্রচারণায় রাজনৈতিক দল ও এর নেতাদের সশস্ত্রবাহিনী সম্বন্ধে কিছু বলার ব্যাপারে কড়া সাবধানতা চর্চা করতে হবে,” বলেছিল তারা। ‘নরেন্দ্র মোদীর সেনা’ মন্তব্যের ব্যাপারে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে আপাতত কেবল ‘কারণ দর্শানো নোটিস’ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। যদিও জবাবে সন্তুষ্ট না হলে তার বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা স্পষ্ট নয়।
কেবল রাজনৈতিক অঙ্গনই নয়, যোগীর এ মন্তব্যের সমালোচনা এসেছে সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও। “সেনাবাহিনী সরকারকে সেবা দেয়, কোনো রাজনৈতিক দলকে নয়,” বলেছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী। সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার আগের দিনই যোগীর আরেক কীর্তি জন্ম দিয়েছে তীব্র সমালোচনার। গোমাংস খেয়েছে সন্দেহে উত্তর প্রদেশের যে গ্রামে এক মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, নির্বাচনী প্রচারে সে গ্রামে গিয়ে শিগগিরই সব কসাইখানা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এ বিজেপি নেতা।
মুসলমান ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে অভিযুক্তদের একজনকে ওই সমাবেশের দর্শকসারির একেবারে সামনের দিকে বসতে দেখা গেছে বলেও জানিয়েছে এনডিটিভি। সমাবেশে সরাসরি ওই ঘটনার উল্লেখ না করলেও আকার-ইঙ্গিতে যোগী ‘হিন্দুপ্রীতির’ কথা ঠিকই বলেছেন। আগের রাজ্য সরকার ‘হিন্দুদের আকাক্সক্ষার লাগাম টেনে রেখেছিল’ বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
হিন্দুরা গরুকে পবিত্র প্রাণী হিসেবে গণ্য করে। এ কারণে উত্তর প্রদেশসহ ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে এ প্রাণীটিকে হত্যায় নিষেধাজ্ঞা আছে