সরকারি হাসপাতালের ওষুধ খোলাবাজারে পাচার রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ চাই

86

‘সরকারি হাসপাতালে রোগীর জন্য বিনামূল্যে সরবরাহকৃত ওষুধ খোলাবাজারে’-এ জাতীয় খবর প্রায় সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়। কিন্তু এর প্রতিরোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান হয় না। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর কর্তৃপক্ষ কয়েকদিন অভিযানে নামলেও কার্যত তা লোকদেখানো। পরে ওষুধ পাচার আর থেমে থাকে না।
দেখা যায়, সিগেরেটের গায়ে লেখা ‘ধূমপান বিষপান’-এর মত বিনামূল্যের সরকারি ওষুধের মোড়কেও লেখা থাকে ‘সরকারি সম্পত্তি ক্রয়বিক্রয় আইনত দÐনীয় অপরাধ’। তারপরেও সরকারি হাসপাতালের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে বিভিন্ন ফার্মেসি বা খোলাবাজারে প্রতিনিয়ত পাচার হচ্ছে সরকারি ওষুধ। ইতোমধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেল সহযোগিতায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিভিন্ন ফার্মেসিতে অনেকবার অভিযান চালিয়েছে। জড়িত থাকার দায়ে অনেক ফার্মেসি মালিককে জেল জরিমানাও করা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। রবিবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পূর্ব গেটের ৩৫টি ফার্মেসিতে রাতের আঁধারে পাচার হয় রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ওষুধ। হাসপাতালের কতিপয় অসাধু চিকিৎসক, পুলিশ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহযোগিতায় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গোপনে ওষুধ পাচার কাজে জড়িত। ওষুধগুলো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের কাছে ন্যায্যমূল্যের চেয়েও দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয় বলে জানা গেছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, হাসপাতালের পূর্বগেটসহ আশপাশের ফার্মেসিগুলোতে গোপন নজরদারির ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালালে প্রায় ফার্মেসিতে পাওয়া যাবে সরকারি ওষুধ। সেই সাথে উঠে আসবে এসব কাজে জড়িতদের নাম। এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে এসব ফার্মেসিতে নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেন ভুক্তভোগীরা।
প্রতিবেদকের সাথে আমরাও সহমত পোষণ করে বলতে চাই, দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নতি হয়েছে। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গত ১০ বছরে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট ৭ গুণ বেড়েছে। নামমাত্র খরচে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় সরকারি হাসপাতালে। সিসিইউ, আইসিইউ, অপারেশন ও ডায়ালাইসিস সেবার ক্ষেত্রে নামমাত্র মূল্য নেওয়া হয়। সব সরকারি হাসপাতালে সমাজের অসহায়, গরিব, নি¤œ ও নি¤œ মধ্যবর্তী পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের জন্য সরকার ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী বিনামূল্যে সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু সেইসব ওষুধ খোলা বাজারে পাচার হয়ে যাওয়ায় হত দরিদ্র রোগীরা ওষুধ পাচ্ছেন না। ফলে ক্ষেত্রবিশেষে তাদেরকে সাধারণ একটি জ্বরের ওষুধও ফার্মেসি থেকে কিনতে হয়। ওষুধ যেহেতু হাসপাতালের স্টোর রুম থেকেই পাচার হয়, তাই সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত স্টোরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর নজর রাখা। একই সাথে হাসপাতালের চিকিৎসক, ওয়ার্ড বয় এবং নার্সদের জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের একমাত্র সরকারি ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) প্রায় ১৪০ আইটেমের ওষুধ তৈরি করে। প্রতিবছর দেশের সরকারি হাসপাতালসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে চাহিদার অন্তত ৭৫ শতাংশ ওষুধ সরবরাহ করে ইডিসিএল। দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করার উদ্দেশ্যে সরকার ওষুধ কারখানাটিতে বিনিয়োগ করছে। অথচ সেইসব ওষুধ কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর কারণে গরিব রোগীরা পাচ্ছে না। কিন্তু হাসপাতালের দায়িত্বরত অতিমুনাফা লোভী এক শ্রেণির চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সিন্ডিকেটের কারণে স্বাস্থ্যখাতে সরকারের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ বরাবরের মত অস্বীকার করে আসলেও আমরা মনে করি, এটি হাসপাতালের সুনামই নষ্ট করছেনা শুধু স্বাস্থ্যখাতে সরকারের সুনাম নষ্ট করছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। স্বাস্থ্যখাতে সরকারের যে সফলতা তা অব্যাহত রাখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকল প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।