সম্যসায় জর্জরিত রাঙ্গুনিয়ার পদুয়ার খলিলুর রহমান স্কুল

65

গ্রামীণ মেঠোপথে সবুজ প্রকৃতির মাঝে প্রতিষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ার ১২৯নং খলিলুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের সুখবিলাস গ্রামে প্রায় ৩৬ শতক জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টি। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও বিদ্যালয়টি জাতিয়করণ হয় ২০১৩ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্রমেই আশেপাশে প্রায় দশ গ্রামের শিক্ষার্থীদের অন্যতম ভরশাস্থল হয়ে উঠে প্রতিষ্ঠানটি। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পরীক্ষায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাদের সাফল্য দিয়ে ইতোমধ্যেই সর্বমহলে সুনাম ছড়িয়েছে। গ্রামীন পরিবেশে উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ, আধুনিক পদ্ধতিতে পাঠদান, সহশিক্ষা কার্যক্রম, বিদ্যালয়ের নিজস্ব খেলার মাঠ, আধুনিক সৌচাগার সহ সবমিলিয়ে এতদ অঞ্চলের মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বাতিঘর হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। তবে এটি পাশ্ববর্তী বাঙ্গালহালিয়া খালের পাড়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বর্তমানে নদী ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদী ভাঙন রোধ ও বিদ্যালয়ে আসাযাওয়ার জন্য ব্রীজ স্থাপন, বাড়তি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন ভবন স্থাপনসহ বিভিন্ন সংকট সমাধান করা গেলে সার্বিক দিক দিয়ে অনুকরণীয় প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে স্কুলটি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের সুখবিলাস গ্রামে গোডাউন-পদুয়া সড়কের সাথে সংযুক্ত সুখবিলাস সড়ক পথে আধাকিলোমিটার এগুলোই এ প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠাকালে এটি জরাজীর্ণ অবকাঠামো নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও স্থানীয়দের সহায়তার ও সরকারি করণের অন্তর্ভূক্তির কারণে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে পাকা স্থাপনা। যেখানে নিয়মিত পাঠ নিচ্ছেন তিনশতাধিক শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের ৫ জন সরকারি শিক্ষক নিয়তিম পাঠদান করছেন এ প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠানটির পেছনে রয়েছে বাঙ্গালখালিয়া খাল। যেটি পেরিয়ে আশেপাশের কয়েকগ্রামের শিক্ষার্থী আসে এই প্রতিষ্ঠানে। এছাড়াও সীমানা প্রাচীর না থাকায় এখনো অরক্ষিত প্রতিষ্ঠানটি। আধুনিক পাঠদানে বিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এ কারণে রয়েছে বিদ্যালয়টিতে ভবণ সংকট। এসব সমস্যার সমাধান করা গেলে সবুজ প্রকৃতির মাঝে প্রতিষ্ঠিত কোলাহলমুক্ত বিদ্যালয়টি হয়ে উঠবে আধুনিক শিক্ষার অনুকরণীয় বাতিঘর। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্চয়ন বড়ুয়া বলেন, বিদ্যালয়টি এতদিন অঞ্চলের মানুষের প্রাথমিক শিক্ষার একমাত্র ভরশাস্থল। এ প্রতিষ্ঠানে আধুনিক পাঠদান রীতি ও উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশের কারণে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ভাল ফলাফল অর্জন করে চলেছে। গত প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলেও ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। একজন পরীক্ষার্থী অসুস্থতার কারণে পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ায় শতভাগ ফলাফল বঞ্চিত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিদ্যালয়ে ভবণ সংকট, নদী ভাঙন সমস্যা, খালের পূর্বপাশের শিক্ষার্থীদের জন্য ফুটওভার ব্রিজ স্থাপন সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলফী হাসনাত ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান বলেন, আমরা প্রথম শ্রেণি থেকেই বাঙ্গালখালীয়া খালের পূর্ব পাশ থেকে খাল দিয়ে অনেক কষ্টে হেটে পার হয়ে স্কুলে আসি। বর্ষা মৌসুমে ও খালে পানি বেড়ে গেলে স্কুলে আসতে পানি না। তাই আমাদের জন্য একটি ব্রিজ স্থাপন করলে আমরা নিরাপদে স্কুলে আসা যাওয়া করতে পারবো। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ সভাপতি মো. ইলিয়াছ তালুকদার বলেন, বিদ্যালয়টি শিক্ষার উপযুক্ত স্থান গ্রামীণ পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত। কোলাহল মুক্ত এ প্রতিষ্ঠান ছাড়াও পাশ্ববর্তী সুখবিলাস আজীজিয়া এবতেদায়ী মাদ্রাসাতেও প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আরবী শিক্ষা নিয়ে থাকে। এই প্রতিষ্ঠান দুটির শিক্ষার্থীরা আধুনিক ও কোলাহল মুক্ত পরিবেশে পাঠ নেওয়ার সুযোগ পায়।
তবে বর্তমান প্রতিষ্ঠানটি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়াও অবকাঠামোগত সমস্যা খালের অপর পাড়ের শিক্ষার্থীদের আসা যাওয়ার জন্য খালের উপর ফুট ওভার ব্রিজ স্থাপনসহ অরক্ষিত বিদ্যালয়ের জন্য সীমানা প্রাচীর স্থাপন এখন সময়ের দাবি। এ সমস্যাগুলো সমাধান করা এখন এলাকাবাসী সহ সংশ্লিষ্টদের প্রানের দাবি। পদুয়া ক্লাষ্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রবীর চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যালয়টি সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ ও শিক্ষার মানের দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। আশা করি এসব সমস্যা অতিস্বত্বর সমাধান হবে।