সম্মানির ৫৫ লাখ টাকা দুস্থদের দিলেন মেয়র

143

২০১৫ সালের জুলাই মাসে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। শুরু থেকে সরকারের প্রদেয় সম্মানির কোনো টাকা নিজে গ্রহণ করেননি। এ যাবত ৫৫ লক্ষ টাকা বিতরণ করে চলেছেন অস্বচ্ছলদের মাঝে। শুধু তাই নয়, সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি, ফুয়েল, স্ট্যান্ডিং কমিটির সভার সম্মানী কোনোটি মেয়র নেন না। তার সবটুকু ব্যয় হয় অটিজম স্কুল, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীসহ অসুস্থ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য।
কারো বাহবা পাওয়ার জন্য নয়, বরঞ্চ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দেওয়া রাজনৈতিক মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখিয়ে জনসেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন মেয়র নাছির। তিনি আরও জানান, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গড়েছেন। সে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁরই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁরা এত ত্যাগের বদৌলতে কোনো বিনিময় নেননি। আমরা তাদের কর্মী হয়ে কিভাবে বিনিময় নেব। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারেই আমি আজ জনগণের সেবায় নিয়োজিত। এখানে কোনো বিনিময় হতে পারে না। নিয়মতান্ত্রিক যা সম্মানী আমাকে দেওয়া হয়, তার পুরোটাই অস্বচ্ছলদের মাঝে বিতরণের ব্যবস্থা করেছি। এতেই আমার প্রশান্তি।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রতি মাসে সম্মানী পান ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। তার পুরোটাই অটিজম শিশুদের স্কুল, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীসহ অসুস্থ রোগীদের মাঝে বিতরণ করেন। মেয়র হিসেবে চসিকের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৩শ ২২ জন ব্যক্তির মাঝে তাঁর সম্মানী প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা বিতরণ করা হয়। এই টাকার একটি পয়সাও তিনি কখনো ছুঁয়েও দেখেননি না। সিটি মেয়রে এ সম্মানীর টাকা বিতরণে দেখভাল করেন চসিকের অতিরিক্ত প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী । তিনি সিটি মেয়রের এই সম্মানীর টাকা প্রতিমাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী ও অসুস্থব্যক্তির মাঝে বিতরণ করে থাকেন। এ তালিকায় আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৩ জন। যার একজনের দুইটি হাত নেই। মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আছেন ৩ জন। উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির আছেন ১ জন। অন্যরা জটিল রোগে আক্রান্ত। কারও অপারেশন হবে, কারও ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই। শুধু যে মাসিক সম্মানী বিলিয়ে দেন তা নয়, অনেক সময় অসহায় মানুষের দুঃখ, কষ্টের কথা শুনে নিজের পকেটের টাকাও দিয়ে দেন। তিনি নিরবে-নিভৃতে অস্বচ্ছল মানুষদের সাহায্য করে যাচ্ছেন। কেউ যাতে খালি হাতে না ফেরে, এটাই তাঁর স্বভাবজাত উক্তি। এছাড়া সিটি মেয়র নিজের সম্মানীর টাকা অস্বচ্ছল মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কর্পোরেশনের গাড়ি, তেল, চালকও নেন না। নিজের গাড়িতে করে চলাফেরা করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি মেয়র পূর্বদেশকে বলেন, আমি রাজনীতি করছি নগরবাসীর কল্যাণের জন্য। কিছু পাওয়ার জন্য মেয়র হইনি, দেওয়ার জন্য এসেছি। আর মেয়র পদবীটা হচ্ছে সম্মানের। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন, রাজনীতি হচ্ছে ত্যাগ স্বীকারের জন্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাকে অনেক দিয়েছেন। নগরের অসহায়, দুস্থ কিছু মানুষ, কিছু ছাত্র, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের কল্যাণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে আমার সম্মানীর টাকা ব্যয় হচ্ছে এটা আমার জন্য সুখকর ও আনন্দের। আমি সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভেতর থেকেই আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যেতে চাই।