সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ

85

দেশে আজ থেকে আগামী ৬৫ দিনের জন্য সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সাগরে মাছের সংখ্যাবৃদ্ধির স্বার্থে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য মন্ত্রণালয়। আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।
এদিকে সমুদ্র-অঞ্চলের জেলেরা বলছেন যে, দীর্ঘ দুই মাস যদি তাদের একমাত্র জীবিকা মাছ ধরা চালিয়ে না যেতে পারেন তাহলে তাদের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নৌকা মালিক সমিতির কেউ কেউ মানববন্ধনের ডাক দেওয়ার কথা বলছেন। খবর বিবিসি বাংলার
বাংলাদেশের কুতুবদিয়া দ্বীপে বসবাসরত তৃষ্ণা জলো দাস বংশ পরম্পরায় মাছ ধরা এবং বিক্রি সংশ্লিষ্ট কাজ করে থাকেন। ছোট নৌকায় প্রতিদিন মাছ ধরেন সংসার চালানোর জন্য। কিন্তু ৬৫ দিনের এই নিষেধাজ্ঞায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।
কৃষ্ণা জলো দাস বলছিলেন, ইলিশের ডিম পাড়ার মৌসুমেও ২২ দিন বন্ধ থাকে। সেই সময়েও আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তারপরও আমরা কোন আবেদন জানায় না। এবার এই ৬৫ দিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা কীভাবে যে চলবো? আমাদের বাচ্চাদের লেখাপড়া, ঋণ, দৈনিক বাজার খরচ এসব চালানোতো আমাদের দ্বারা সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশে ইলিশের মৌসুমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। ২০১৫ সাল থেকে বঙ্গোপসাগরে শুধু ট্রলারের ওপর এই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু এবার সকল প্রকার নৌযান অর্থাৎ, ছোট ফিশিং বোট, ইঞ্জিন চালিত নৌকা এর আওতায় পড়েছে। আর এর ব্যাপ্তিও বাড়ানো হয়েছে। যার মধ্যে দ্বীপ অঞ্চলও রয়েছে।
মহেশখালীর একজন জেলে জয়নাল আবেদিন জানান, দ্বীপ অঞ্চলে তাদের আর কোন কর্মসংস্থান নেই তাই এই দীর্ঘ সময় তাদের জন্য দুর্ভিক্ষের মত অবস্থা তৈরি করবে।
সরকার বলছে সাগরে মাছের সংখ্যাবৃদ্ধির স্বার্থেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে যারা ছোট নৌকা চালিয়ে মাছ ধরেন সেসব জেলেরা এটা একেবারেই মানতে পারছেন না। সেন্টমার্টিন এবং টেকনাফের যেসব জেলেরা আছেন তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। এর প্রতিবাদে তারা মানববন্ধন করবেন বলে জানান।
টেকনাফের একজন জেলে আব্দুল গফুর বলছিলেন এই ঘোষণার আগেই তারা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে স্মারকলিপি দিয়েছেন যাতে ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ না করা হয়। আমরা প্রথমে ইউএনও, বিজিবির, কোস্টগার্ড, মৎস্য কর্মকর্তা, থানা ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। এখন আমরা ডিসি এবং প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি দেব।
পরশু আমরা মাইকিং করেছি, সেন্টমার্টিন এবং টেকনাফের সব জেলে আমরা একত্রিত হয়ে মানববন্ধন করবো। এভাবে আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাবো বলে জানান আব্দুল গফুর।
এ প্রসঙ্গে সরকারে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলি খসরু জানান মাছের যোগানের ভারসাম্য রক্ষার্থে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এ সময়টা হলো মাছের প্রজননের সময়। বিভিন্ন দেশে এই সময়টাতে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। আর আমাদের এখানে যেসব ইলিশ মাছ ডিম ছাড়তে আসে, সেগুলো এবং জাটকা মাছগুলো সাগরে নেমে যায়। তাই সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখছি আমরা।
সরকারের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করছেন তাদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানান মৎস ও প্রাণীসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। এটা হলো যারা জেলেদের উপর অর্থ লগ্নি করেন তাদের একটা মাথা ব্যথা। তাদের উপর নজর রাখা হচ্ছে এবং আমরা সমুদ্রে নৌযানগুলো নামতে দেব না। এটার জন্য নেভাল এবং কোস্টগার্ড সমুদ্রে টহল দিচ্ছে।
এদিকে এই যে ৬৫ দিন ধরে যে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে এই সময়টাতে, সরকারের এই বছরে কোন প্রনোদনা দেয়ার পরিকল্পনা নেই। পরিবর্তীতে প্রনোদনা এবং বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।