সমস্যা সমাধানের নির্দেশনা নেই চট্টগ্রামবাসী হতাশ

51

 

অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ‘বাজেটে মোট ব্যয়ের ৩ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকাই অনুন্নয়ন ব্যয়। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ দিতে ৫৩ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ দিতে ব্যয় হবে আরো ৪ হাজার কোটি টাকা। আর ৬০ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিতে। ব্যয়ের মধ্যে বড় প্রশ্ন রয়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের মান নিয়ে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) সহ নতুন বাজেটে মোট উন্নয়ন ব্যয় বা এডিপি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। হাজার কোটি টাকার ডেমু ট্রেন এখন ভাগাড়ে পড়ে আছে। বিআরটিএ এখন পরিকল্পনা করছে ৭০০ কোটি টাকার চালকের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য গাড়ি কেনার। এটিও হয়তো ভাগাড়ে পরিণত হবে। রাতের গায়েবি ভোটের এই অবৈধ সরকারের তথাকথিত স্মার্ট বাজেট ঋণের বিশাল ফাঁদে আটকে আছে।’
দেশের অর্থনীতিতে সিংহভাগ রাজস্ব যোগানদাতা চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন, চট্টগ্রামের শিল্পকারখানার উন্নয়ন, বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এবং বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চাকতাই-খাতুনগঞ্জকে জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচানোর জন্য, চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুল সরকারিকরণের বা অবকাঠামোগত উন্নয়নে কোনো পরিকল্পনা না থাকায় এবং চট্টগ্রামকে ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি ও হেলদি সিটিতে রূপান্তরে এবং চট্টগ্রামের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সমস্যার সমাধানে কোনো নির্দেশনা না থাকায় চট্টগ্রামবাসী হতাশ হয়েছে।
বিশাল বাজেটের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপির জালে আটকে আছে। যা অবলোপনসহ ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকাতে দাঁড়াবে। বাজেটের ঘাটতি থাকছে জিডিপির ৫ শতাংশ, এ হিসেবে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটানোর জন্য বিদেশি ঋণের উপর সরকারকে নির্ভর করতে হবে। এ ঋণের পরিমাণ হতে পারে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা, বাকি টাকা দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে। যার পরিমাণ হতে পারে প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা। আর ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২৭ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে, যা অনেক চড়া সুদের।
ডা. শাহাদাত বলেন, বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে বাজেটের পরিকল্পনা, বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া, খাতভিত্তিক বরাদ্দ ও সমস্যা নির্ধারণ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হচ্ছে, অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ অত্যধিক। প্রতিবছরই বাজেটে বিপুল পরিমাণ ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, ঘাটতি মেটাতে ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত ব্যয় কতটা গুণগত মানসম্পন্ন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বারবার সংশোধনের ফলে ঋণের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে অস্বাভাবিক খরচও চোখে পড়ার মতো। পদ্মাসেতু প্রকল্প ৮ হাজার কোটি টাকা থেকে এখন ৩৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৫৮ হাজার কোটি টাকা থেকে ১ লক্ষ ৫২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ২৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ৫৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চার লেন সড়ক তৈরিতে যেখানে ভারতে ১১ থেকে ১৩ লাখ ও চীনে ১৩ থেকে ১৬ লাখ মার্কিন ডলার খরচ হয়, সেখানে বাংলাদেশে ৫০ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি খরচ হয়।
বাজেটে মৌলিক সমস্যা সমাধানের কোনো নির্দেশনা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে মনোযোগ নেই। বর্তমানে ৪ কোটি ৮২ লাখ তরুণ-তরুণী বেকার, কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা ও প্রার্থীদের দক্ষতার অভাব নিয়েও বাজেটে কোনো দিক-নির্দেশনা নেই। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগও স্থবির, জিডিপিতে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২৩ শতাংশে ঘুরপাক খাচ্ছে। আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বাজেট সংশোধিত না হয়ে সাংবিধানিক উপায়ে সংসদের বাজেট সংশোধন হওয়াও জরুরি। বিজ্ঞপ্তি