সভাপতিসহ গ্রেপ্তার ৫ অস্ত্র-গুলি ইয়াবা উদ্ধার

21

ধানমন্ডির কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালিয়ে ক্লাবের সভাপতি কৃষকলীগ নেতা সফিকুল আলম ফিরোজসহ পাঁচজনকে অস্ত্র-গুলি ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ওই ক্লাবেও যে ক্যাসিনো চালানো হতো, অভিযানে তার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক আশিক বিল্লাহ।
কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের পর র‌্যাব সদস্যরা অভিযান শুরু করেন ধানমন্ডি ক্লাবে। পরে এলিফ্যান্ট রোডের অ্যাজাক্স ক্লাবেও অভিযান চালানো হবে বলে আশিক বিল্লাহ জানিয়েছেন। এছাড়া কারওয়ানবাজারের মৎস্যজীবী ক্লাবও র‌্যাব সদস্যরা ঘিরে রেখেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল শুক্রবার বিকালে নিকেতনে ঠিকাদার জি কে শামীমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে র‌্যাবের অভিযান শেষ হওয়ার আগেই কলাবাগান মাঠের পাশে র‌্যাবের আরেকটি দলের অবস্থান নেওয়ার খবর আসে। একই সময়ে ধানমন্ডি ও অ্যাজাক্স ক্লাবের বাইরেও র‌্যাব সদস্যদের তৎপর হতে দেখা যায়।
কলাবাগান ক্লাব থেকে সভাপতি সফিকুল আলম ফিরোজকে আটক করে র‌্যাব-২ সদর দপ্তরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে র‌্যাবের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ওই ক্লাবে অভিযান শুরু হয়।
অভিযান শুরুর আগে র‌্যাব-২ অধিনায়ক আশিক বিল্লাহ বলেছিলেন, ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাব ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের মত কলাবাগানেও ক্যাসিনো থাকার এবং অবৈধ কর্মকান্ড চালানোর তথ্য রয়েছে তাদের হাতে। রাত সাড়ে ৮ টার দিকে অভিযান শেষ করে
বেরিয়ে এসে তিনি বলেন, কলাবাগান ক্লাবেও একসময় ক্যাসিনো চলতো, এটা তারা দেখেই বুঝতে পেরেছেন। হয়তো কোনো একভাবে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তারা ক্যাসিনোটা এখান থেকে সরিয়ে ফেলেছে। ক্যাসিনোর অন্যান্য সরঞ্জাম আমরা পেয়েছি। এখানে আমরা বিদেশি কয়েন, প্লেইং কার্ড, ক্যাসিনোতে যেরকম স্কোর বোর্ড থাকে, সেরকম স্কোরবোর্ড আমরা এখান থেকে উদ্ধার করেছি।
আশিক বিল্লাহ বলেন, লাইসেন্সবিহীন একটি বিদেশি অস্ত্র, তিন রাউন্ড গুলি এবং ‘হলুদ রঙের নতুন ধরনের’ ইয়াবা তারা সফিকুলের অফিস থেকে উদ্ধার করেছেন।
কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বায়রার সিনিয়র সহ-সভাপতি সফিকুল আলম ফিরোজ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) আসনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। সফিকুলের পাশাপাশি তার সহযোগী লিটন মিয়া, আনোয়ার, হাফিজুর রহমান ও হারুণকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়ে র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে’। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
কলাবাগানে অভিযান শুরুর আগে শুক্রবার সকাল থেকে নিকেতনে ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের অফিসে অভিযান চালায় র‌্যাব। তিনি নিজেকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিতেন। ওই অফিস থেকে নগদ প্রায় দুই কোটি টাকা, পৌনে দুইশ কোটি টাকার এফডিআর, আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীকে।
এর আগে গত বুধবার বিকালে গুলশান ২ নম্বরের ৫৯ নম্বর সড়কে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া বাসা এবং ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে একযোগে অভিযান চালায় র‌্যাব। শাজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনিতে বেড়ে ওঠা খালেদ ফকিরাপুলের ওই ক্লাবের সভাপতি।
কয়েক ঘণ্টার অভিযানে ওই ক্লাবে ক্যাসিনো বসিয়ে জুয়ার আড্ডা চালানোর বিপুল আয়োজন পাওয়া যায়। সেখান থেকে ২৪ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়। আর গুলশানের বাসা থেকে খালেদকে গ্রেপ্তারের পর তার বাসায় ৫৮৫টি ইয়াবা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা এবং অবৈধ অস্ত্র পাওয়ার কথা জানায় র‌্যাব।
ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের পাশাপাশি ওই এলাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র এবং বনানীর আহমেদ টাওয়ারে গড়ে তোলা একটি ক্যাসিনোতেও র‌্যাবের অভিযান চলে।
দেশের বিভিন্ন ক্লাবে অবৈধভাবে জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছে। তবে বাংলাদেশেও যে ¯øট মেশিন, রুলেট টেবিলের মত সরঞ্জাম নিয়ে পুরোদত্তর ক্যাসিনো চলে, সে খবর সাধারণ মানুষের কাছে নতুন।
ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৬০টি জায়গায় ক্যাসিনো বানিয়ে জুয়ার আসর চালানো হয় এবং এর পেছনে রাজনৈতিক নেতাদের মদদ রয়েছে বলে এরপর খবর আসে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। র‌্যাবের নির্বাহী হাকিম সারোয়ার আলম সেদিনই বলেছিলেন, ক্যাসিনা বা জুয়ার আখড়া বন্ধে এই ধরনের অভিযান চলবে।