সব প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে

70

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘চট্টগ্রামকে অবহেলিত রেখে বাংলাদেশের উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের জন্য ভাবার পাশাপাশি চট্টগ্রামের জন্যও চিন্তা করেন। চট্টগ্রামকে দেশের দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে যা যা করণীয় তা-ই করা হবে।’ গতকাল শনিবার সার্কিট হাউজে আয়োজিত ‘নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড’ বিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন ও শহরকে দৃষ্টিনন্দন হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।
তিনি বলেন, বর্ষায় কোথাও যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সিটি করপোরেশন বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করবে। এতে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে বলে আশা করছি।
ইতোমধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, সিডিএ’র চলমান প্রকল্পগুলোর গুণগত মান ও অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি। তারা দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছে।
স¤প্রতি চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন আরেকটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এ বিষয়ে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে আরও একটি প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে। এটি বাস্তবায়নে হলে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা দূর হবে।
এক প্রশ্নের জন্য জবাবে মন্ত্রী বলেন, সঙ্গত কারণে প্রকল্পগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ সিটি করপোরেশন করবে। এজন্য সংস্থাটির আর্থিক সক্ষমতা তৈরি করা হবে।
সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সভায় সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পর্যালোচনা করে তাদের মধ্যে সমন্বয় দেখেছি।
এদিকে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে আখতারুজ্জামান উড়ালসড়কে। উড়ালসড়কটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ সেটির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছে। স¤প্রতি পাঁচদিন উড়ালসড়ক ছিল বিদ্যুৎহীন।
এ ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, উড়ালসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে সমস্যা হলে সমাধান করা হবে। যেহেতু সব সংস্থা সম্মিলিতভাবে কাজ করছে, সুতরাং কোনো সমস্যা হবে না।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নে চট্টগ্রাম এখন মাইলফলক। সঠিকভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন হলে চট্টগ্রাম হবে সত্যিকার অর্থে আধুনিক নগরী। দেশের বৃহত্তম বন্দর চট্টগ্রামে। এ কারণে চট্টগ্রামকে বলা হয় বন্দরনগরী। বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিচালিত হয় এই বন্দর দিয়ে। এই বন্দরকে বাঁচাতে হলে চট্টগ্রামে উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে চট্টগ্রাম দ্রুত এগিয়ে যাবে। দেশেরও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। সমস্যা যেখানে সমাধানও সেখানে।
তাজুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু এই চট্টগ্রাম নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন। তারই কন্যা আজকের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও এই চট্টগ্রাম নিয়ে আশাবাদী। চট্টগ্রামকে তিনি আলাদা চোখে দেখেন। যতবার তিনি চট্টগ্রামে এসেছেন ততবার উন্নয়নের বার্তা নিয়ে এসেছেন। এ কারণে চট্টগ্রামের প্রতিটি প্রকল্প তিনি পাস করিয়ে দেন। চট্টগ্রামের একটি উন্নয়ন প্রকল্পও তিনি বাদ দেননি। গত একনেকের সভায়ও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিয়ে হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প তিনি অনুমোদন দিয়েছেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রীত্ব পাওয়ার পর প্রথমেই চট্টগ্রামে এসেছি। চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের সাথে কথা বলেছি। আজকেও (শনিবার) আসলাম সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রদক্ষেপ নিতে। সবার সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করেছি। ফাইনালি আরো একটি মতবিনিময় সভা করবো। খুঁজে নেবো সমাধানের পথ।
উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশজুড়ে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে। এই উন্নয়ন প্রধানমন্ত্রী সরাসরি তদারকি করেন। খোঁজ-খবর নেন। এই উন্নয়নে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব দিয়েছেন বসে থাকার জন্য নয়। দেশের আনাচে কানাচে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।
সভায় উপস্থিত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে কেউ কারো উপরে দোষ চাপিয়ে দিবেন না। রশি টানাটানি করে দেশের ক্ষতি করবেন না। কোনো কাজে সমস্যা হলে আমার দপ্তর আছে সেখানে যোগাযোগ করেবন।
বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব এসএম গোলাম ফারুক, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) নুরুল আলম নিজামী, জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন এবং সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, চট্টগ্রাম ওয়াসাসহ বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।