সবজির দামে আগুন

57

‘আগে হাতের মুঠোয় টাকা আনলে থলে ভরে বাজার নিতে পারতাম আর এখন থলে ভরে টাকা আনলে এক মুঠোও তরকারি নিতে পারি না। সবকিছুর দাম এখন আকাশচুম্বী আর কাঁচা মরিচে তো হাত দেয়াও যাচ্ছে না।’ বলেই সবজির অতিরিক্ত দামের বিবরণ দিলেন মেহেদীবাগ এলাকার গৃহিণী সাবিহা আক্তার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রামের সব কাঁচাবাজারগুলোতে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার প্রভাবে সবজির দাম বেড়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সবচেয়ে বেশি দাম কাঁচা মরিচের। এদিকে মাংসের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও মাছের দাম আগের তুলনায় অনেকাংশে কমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কাজীর দেউড়ী, চকবাজার, ষোলশহর কর্ণফুলী মার্কেট, অক্সিজেন মোড়, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
গত সপ্তাহে এসব বাজারে বেশিরভাগ সবজির কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হলেও এখন ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজিই নেই। সবজির এ দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দোকানিরা বলছেন, কয়েকদিন ধরেই টানা বৃষ্টিপাত আর সৃষ্ট বন্যার কারণে দামের এমন দশা। বন্যায় অনেক চাষীর ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। আবার অনেকে পানিবন্দীর কারণে সবজি তুলতে পারছেন না।
সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঝিঙা, ধুন্দল, চিচিংগা, কাকরল, ঢেঁড়স, লাউ, করলাসহ প্রায় সব সবজির দাম বেড়ে দেড় থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। গত সপ্তাহে শসা, কাকরোল, বাঁধাকপি, ঢেঁড়শ ও লাউ ছিলো মাত্র ৩০ থেকে ৪০ টাকা আর আজকে তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
কচুর লতি, ধুন্দল, বরবটি, ঝিঙা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। আর গত সপ্তাহে ছিলো মাত্র ৫০ টাকারও কম। আজকে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায় আর গত সপ্তাহে ছিলো মাত্র ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। গত সপ্তাহে যে মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছিলো আজ তা বেড়ে হয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। তাই সাধারণদের ২৫০ গ্রামের বেশি মরিচ কিনতে দেখা যায়নি। যে আলু ১২ টাকায় বিক্রি হয়েছিলো আজ সে আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। যেখানে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছিলো ৯৫ টাকায় আজকে তা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।
নগরীর বিভিন্ন বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় মাছের দাম কমতে দেখা গেছে, প্রতি কেজি লইট্টা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিলো ২৫০ টাকায় আর এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।
পোয়া ২০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ টাকা, ইলিশ ১৬০০ টাকা, রূপচাঁন্দা ৬০০ টাকা, দেশী রুই ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে প্রত্যেক মাছ কেজিতে ১০০ টাকা বেশি ছিলো।
মাংসের বাজারে দামের তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি, গরুর রানের মাংস (হাড়ছাড়া) বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা। আর হাড়সহ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়।
ক্ষোভ নিয়ে হালিশহরের গৃহিণী মেহনুর জান্নাত পূর্বদেশকে বলেন, বাধ্য হয়ে সবজি কিনতে এসেছি। যদি পারতাম তাহলে সবজি না খেয়ে থাকতাম। সবজির বাজারে যে এত দাম যা আগে কখনো বাড়েনি, আমরা কিভাবে বাজার করবো? বিক্রেতারা অতিরিক্ত দাম দিয়ে কিনায় আমরাও কিনছি।
সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের কৃষক মো. ফারুকের কাকরোলের ক্ষেত ছিল। কিন্তু বন্যার কারণে ছয়দিন ধরে পানিবন্দী থাকে ক্ষেতটি। যার কারণে অনেক ফসল ক্ষেতের মধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে।
একই গ্রামের চাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এক লাখ টাকার সবজিসহ ক্ষেত ছয়দিন ধরে পানির নিচে ছিলো। এতে আমার প্রচুর ক্ষতি হয়, এখন আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
আরেক চাষী মো. পেটান পূর্বদেশকে বলেন, ক’দিন আগেও নিজের ক্ষেতের সবজি দিয়ে চাহিদা মেটাতাম আর এখন বাজার থেকে উল্টো বেশি দামে কিনে খেতে হচ্ছে।
সাতকানিয়া শিশুতল এলাকার আড়তদার আবুল হোসেন মিয়া বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ ভালোই ছিল। দামও নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু বৃষ্টি এবং বন্যার কারণে অনেক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে বাজারে সবজির আমদানি নেই বললেই চলে। আগে ৪০০ থেকে ৫০০ ভ্যান বোঝাই সবজি আসত। এখন সেখানে ২০ থেকে ২৫ ভ্যান সবজি আসে। আর যে সবজিগুলো আসে তা চট্টগ্রাম শহরের পাইকাররা নিয়ে যান। সরবরাহ কম হওয়ার কারণে দাম একটু বেশি।
নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, ‘গ্রাম পর্যায় থেকে অতিরিক্ত দামে কিনছি বিধায় আমদেরও একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বর্ষা আর জলাবদ্ধতার কারণে পরিবহন ভাড়াও ডাবল গুণতে হচ্ছে আমাদের। সেটিও আমরা হিসেবে আনছি। তাই প্রতি কেজি সবজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বৃদ্ধি হয়েছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে আবারও দাম কমার সম্ভাবনা আছে।’
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজার পরিদর্শক বিল্লাল হোসেন বলেন, চট্টগ্রামসহ তার আশপাশের এলাকায় টানা বর্ষণের ফলে ক্ষেতে পানি জমে চাষীদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর এতে করে চট্টগ্রাম নগরে সবজির সরবরাহ কম হওয়ার কারণে একটু দাম বেশি নিচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক গিয়াস উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, পুরো চট্টগ্রাম জেলার ১০৭ হেক্টর জমি পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো হাতে আসেনি, দু’একদিনের মধ্যে পেয়ে যাবো।