সফলতা

166

আবির ও নয়ন একই স্কুলে লেখাপড়া করে ক্লাস ফাইভে। দুজনই বেশ মেধাবী ছাত্র,এবং নম্র ভদ্র। দুজন রোজ সকালে মায়ের হাতের রান্না খেয়ে স্কুলে আসে। আবার স্কুল ছুটি শেষে এক সঙ্গে বাড়ি ফিরে যায়। কিন্তু দুজন দুই পরিবারের ছেলে। আবির সাধারণ বড় লোক ঘরের ছেলে হলে ও নয়ন একেবারেই গরিব ঘরের ছেলে। তাদের চলাফেরা দেখে গ্রামের কিছু কিছু মানুষ বলে ওরা নাকি একই পরিবারের সন্তান। বলবেই বা না কেন? আবির ও নয়নের দুই পরিবার এতোই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক যা মুখে বলা দায়। বেশ কয়েকদিন হলো নয়ন স্কুলে আসছে না। তাই নিয়ে আবির খুব চিন্তিত। ওকে যে সঙ্গে করে ধরে নিয়ে স্কুলে আসবে সে শক্তি টুকুন ও নয়নের শরীরে নেই। আবির ভাবছে কি করা যায়। এসব ভাবনা নিয়ে আবিরের ক্লাসে মন বসছে না। বিষয়টা গণিতের বিশ্বজিৎ স্যার লক্ষ করেছেন। আবিরের ভীষণ মন খারাপ তাই বিশ্বজিৎ স্যার ছুটি শেষে আবিরকে তার রুমে দেখা করতে বলেছে। স্কুল ছুটি শেষে আবির বিশ্বজিৎ স্যারের রুমে গেলেন। এবং স্যার জানতে চাইলেন আবির তোমার কি হয়েছে। আবির সব ঘটনা খুলে বললেন। বিশ্বজিৎ স্যার আবিরের কথা শুনে বললেন শোনো আবির এটা কোনো বিষয় নয়। গণিতের মতো এই বিষয়টিও আমি সমাধান করে দেবো। তুমি চিন্তা করোনা। কিন্তু কিভাবে? আবির স্যারকে জিজ্ঞেস করল।
স্যার একটু ভেবে বললেন। তুমি নিশ্চয় তোমাদের বইয়ে একটা গল্প পড়েছ। দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করব নয়নের অসুখ নিরাময়ের। কথা গুলো শুনে আবির একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো। যেন সে একটা ভরসা খুঁজে পেলো। পরদিন সকালে আবির মায়ের হাতের রান্না খেয়ে একাই স্কুলে চলে গেলো। যাওয়ার আগে একবার নয়নের সাথে দেখা করলো। আর নয়নকে বললো ভাবিস না বন্ধু তোর চিকিৎসার ব্যবস্থা করব খুব তাড়াতাড়ি। যেন আমরা আবার আগের মতো এক সঙ্গে স্কুলে যেতে পারি। স্কুলে গিয়েই আবির অবাক হলো বিশ্বজিৎ স্যার একটি টিম করেছে নয়নের চিকিৎসার জন্য টাকা আদায় কমিটি। স্কুলের সকল ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে টাকা তোলা হবে। আবির ও বিশ্বজিৎ স্যারের গড়া কমিটি মিলে সারা স্কুল ঘুরে টাকা তুলেছে সকল ছাত্রছাত্রীর কাছ হতে। টাকা তোলা শেষ করে সবাই বিশ্বজিৎ স্যারের রুম গেলো। এবং সমস্ত টাকা গোনা হলো। এবার বিশ্বজিৎ স্যার সবাইকে নিয়ে হেড স্যারের রুমে গেলেন। সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন এবং হেড স্যার তাদের সাহায্যের জন্য আরো কিছু নগদ টাকা দিলে।
সমস্ত টাকা এক জায়গা করে আবির বিশ্বজিৎ স্যার ও তার গড়া কমিটি মিলে নয়নদের বাড়ির গেলো। এবং নয়নের বাবার হাতে সমস্ত টালা তুলে দিলেন নয়নের চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসার শেষে নয়ন বাড়ি ফিরে এসেছে। এখন সে আবার আবিরের সাথে রোজ সকালে স্কুলে যায় মায়ের হাতের রান্না খেয়ে। আবির ও বিশ্বজিৎ স্যারের এই কাজ দেখে গ্রামের সবাই অবাক। সবাই মনে মনে ভাবতে থাকে এখন থেকে তারা আবিরের মতো করবে। একটা সমস্যাই পড়লে সবাই এক সঙ্গে সমাধান করার চেষ্টা করবে। এতে করে একদিন না একদিন তারা সফলতা পাবেই।