সন্দ্বীপ যেতে আর ‘কাদা মাড়াতে’ হবে না

101

আধুনিক মানের জেটি হচ্ছে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়ায়। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ বাস্তবায়নাধীন এ জেটি নির্মিত হলে দ্বীপবাসীর দুর্ভোগ লাগব হবে। কাদায় বা পানিতে না নেমেই সরাসরি যাতায়াতের সুযোগ পাবেন যাত্রীরা। ওয়েটিং রুম, ওয়াশরুম, রেস্টূরেন্টসহ আধুনিক সুবিধার সমম্বয় থাকছে জেটিটিতে। আগামী ফেব্রূয়ারিতে জেটিটি চালু করার চিন্তা করছে জেলা পরিষদ।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, গুপ্তছড়ায় আমরা একটি নতুন জেটি করছি। এখন ট্রলার, স্টিমার থেকে মানুষ নামতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায়, দুর্ঘটনা ঘটে, কাদায় নামতে হয়। এখন গ্যাংওয়ে থেকে নেমে লালবোট হয়ে স্টিমারে উঠতে হয়, এটি দুর্ভোগের। আমরা বিআইডব্লিওটিএর ল্যান্ডিং স্টেশনের পাশের খালে ভিতরে জেটি করছি। ভাটার মধ্যেও বোট, স্পিড ট্রাক, সি ট্রাক সবগুলো সেখানে ঢুকতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, সাগরে স্রোত থাকায় সেখানে টার্মিনাল করার কোনো সুযোগ নেই। ইংল্যান্ডে র‌্যাংগস নদীতে জেটি আমি দেখেছি। জোয়ারের সময় উঠে যাবে, ভাটায় নেমে যাবে। কিন্তু আমাদের এখানে সাগর হওয়ায় এমনটা করার সুযোগ নেই।
সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার ৭টি ফেরিঘাট থাকলেও সচল রয়েছে শুধুমাত্র কুমিরা-গুপ্তছড়া ফেরিঘাট। ইতোমধ্যে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগসহ স›দ্বীপে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও অবহেলিত ছিলো নৌপথ। ২০১২ সালে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’পাশে দুটি জেটি নির্মাণ করলেও গুপ্তছড়া অংশে কোনো কাজে আসছে না এটি। জোয়ারের সময় জেটিতে যাতায়াত করা গেলেও ভাটায় কাদা মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হয় যাত্রীদের। প্রায়ই কোমরপানিতে নেমে যেতে হতো যাত্রীদের। জীবনঝুঁকি ও দুর্ভোগে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন যাত্রীরা।
আবদুস সালাম বলেন, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জেটিটি করছি। সেখানে রাস্তা, ওয়াশরুম, রেস্টুরেন্ট, বসার ব্যবস্থা সবই থাকবে। ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও করোনার কারণে ওয়ার্ক সিডিউল পিছিয়েছে। ফেব্রূয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। খালের পলি সরানোর জন্য নিজস্ব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সন্দ্বীপে আধুনিক জেটি, রাস্তা ও খাল খননের জন্য ২০১৭ সালের জুলাই মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠায় জেলা পরিষদ। একই বছরের জুলাই মাসে প্রকল্প প্রস্তাবনাটির ড্রয়িং ডিজাইন করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে এলজিইডিতে পাঠানো হয়। এসময় প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয় ১৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। এলজিইডি থেকে ড্রয়িং ডিজাইন সম্পন্ন করে কিছু কারিগরি দিক বিবেচনার প্রস্তাব করা হয়। একই সাথে জেলা পরিষদ থেকেও প্রকল্পটির কিছু অংশের সংশোধনী আনা হয়। এতে করে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে ১৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির ইকবাল বলেন, সন্দ্বীপের মানুষের একটাই দাবি, তারা কাদায় পা না দিয়ে যেন নামতে পারেন। বর্তমানে গ্যাংওয়ে থেকে নেমে বোটে ওঠতে হয়। কাদায়, পানিতে নামতে হচ্ছে। আমাদের নতুন জেটি হবে আধুনিক মানের। জেটিতে সরাসরি বোট ভিড়তে পারবে। কাদায় পা না দিয়েই মানুষ নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবেন। জেটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, ফেব্রæয়ারি-মার্চের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
গুপ্তছড়া ঘাট থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার ভিতরে হচ্ছে নতুন জেটিটি। এজন্য দেড় কিলোমিটার খাল খনন করতে হচ্ছে। ল্যান্ডিং স্টেশনসহ জেটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তিনটি সিঁড়ি, শেড, ক্যাফেটোরিয়া, টিকেট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম, পার্কিং স্পেস নির্মাণ করা হবে। জেটি থেকে নেমে মূল রাস্তায় আসার জন্য প্রায় ৬০০ মিটার রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।
গুপ্তছড়া ফেরিঘাট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই হাজার যাত্রী পারাপার করে। বর্তমানে যাত্রীদের বোট থেকে সাগরের পাড়ে নামতে হচ্ছে। সেখান থেকে হেঁটে ঘাটে উঠতে হচ্ছে। সাগরের পাড়ে নামতে গিয়ে অনেক সময় বোট উল্টে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। বড় নৌযান থেকে নেমে কখনো কোমর, কখনো বুক সমান পানি ডিঙিয়ে জীবনবাজি রেখে সন্দ্বীপের যাত্রীদেরকে কূলে উঠতে হয়। আবার তীরে কোনো যাত্রীছাউনি না থাকায় যাত্রীদের ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। নতুন জেটি চালু হলে এ দুর্ভোগ লাঘব হবে। জেটিতে বোট ভিড়ার কারণে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবেন যাত্রীরা। এতে ঝুঁকিও কমে আসবে।