সন্দ্বীপে প্রথম সূর্যমুখি চাষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে রিকল ২০২১ প্রজেক্ট এসডিআই। কয়েক বছর ধরে পরিবেশ বান্ধব এবং লবণ ও দুর্যোগ সহনশীল কিছু ফসল নির্বাচন করে সেগুলো চাষাবাদে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে ইতিমধ্যে কয়েকটি কৃষি পণ্যের প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।
এর মধ্যে জার্মান ঘাস চাষ, ভুট্টা চাষ ও টার্কি প্রদর্শনী করে অগ্রগামী কৃষক ও নতুন উদ্যোক্তাদের এতে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় এবার প্রথম বারের মতো ছয়জন কৃষককে সূর্যমুখি চাষ প্রদর্শনীর জন্য অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। আর কৃষকরা তা আবাদ করে সফলতার মুখ দেখছে। সূর্যমুখির বাম্পার ফলন এবং এর ফুলের হাসি দেখে কৃষকদের মুখেও হাসি ফুটেছে। উৎসুক জনতার কাছে প্রদর্শনী প্লটগুলো রুপান্তর হয়েছে বিনোদন স্পটে। পথিক থমকে দাঁড়াচ্ছেন নয়নাভীরাম দৃশ্য দেখে।
রিকল প্রজেক্টের প্রকল্প সমন্বয়কারী অতুল কৃষ্ণ মজুমদার বলেন, সূর্যমুখির ফলন ভালো এবং অন্য ফসলের চেয়ে চাষ সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চাষিদের মাঝে আগ্রহ বাড়বে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুর রউফ জানান, ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সূর্যমুখি আবাদ ও তোলার মৌসুম। সন্দ্বীপে এই প্রথম রিকল প্রজেক্ট এর চাষাবাদ শুরু করেছে বলে তারা প্রশংসার দাবি রাখে। তবে স›দ্বীপে তৈলের ঘানি না থাকায় এর বাজার তৈরি করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এরজন্য নোয়াখালীর ব্যবসায়ীদের সাথে লিংকেজ স্থাপন করে দিতে পারলে এটি একটি ভালো ও লাভ জনক কৃষি খাতে রুপান্তরিত হবে। আর দেশি প্রজাতির সূর্যমুখি থেকে হেক্টর প্রতি ৪০০ কেজি ও হাইব্রিড প্রজাতিতে হেক্টর প্রতি ৫০০ কেজি কোলেস্টরেলমুক্ত তেল উৎপাদন সম্ভব, যা অন্য তেলজাতীয় ফসলের চেয়ে বহুগুন পুষ্টিমান সমৃদ্ধ।
রিকল প্রজেক্টের কর্মকর্তা বাদল রায় স্বাধীন বলেন, আমরা এটি বাজারজাত করতে নোয়াখালীর ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করেছি। উৎপাদন বেশী হলে তারা স›দ্বীপে এসে ক্রয় করার কথা বলেছেন।
তিনি জানান, দ্বীপে এর ব্যাবহার না থাকলেও বাইরের বাজারে প্রতিকেজি সূর্যমুখি তেল ২৮০ টাকা দামে বিক্রি করা যায়। আর সরাসরি ঘানি থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত লিটার বিক্রি হয়। সূর্যমুখির তেল ছাড়াও খৈল দিয়ে মাছের খাবার তৈরি এবং গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সয়াবিন তেলের চাইতে সূর্যমুখি তেলে দশগুণ বেশী পুষ্টিমান সমৃদ্ধ। সূর্যমুখির তেল অন্যান্য সাধারণ তেলের চাইতে একটু আলাদা। প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখি বীজের তেলে শরীরের দুর্বলতা কাটায়। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে এমন একটি উপাদান। এর বীজ শরীরের হাড় সুস্থ রাখে ও মজবুত করে এবং শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে। এর তেল দেহের ক্ষতিকারক কলেস্টরল দূর করে হৃৎপিন্ড ভালো রাখে। ভিটামিন ‘ই’ থাকায় শরীরের নানা রকম ব্যথাও দূর করে।
সরেজমিন স›দ্বীপের আজিমপুর, মুছাপুর ও কালাপানিয়া ইউনিয়নের প্রদর্শনী প্লটগুলোতে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেতে সূর্যমুখির সমারোহ। হিমেল হাওয়ায় মাঠে মাঠে সবুজের বিছানায় দোল খাচ্ছে হলুদ সূর্যমুখি। প্রতিটি ফুলের সাথে জড়িয়ে আছে কৃষকের হাসি। কেননা আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সূর্যমুখির বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই বাজারজাত করতে পারলে কৃষকদের লাভবান হওয়ার আশা করছেন তারা।
আজিমপুরের কৃষক মাঈন উদ্দীন বলেন, আমার জমিনে ফুল ফোটার পর থেকে প্রতিদিন শতাধিক নারী-পুরুষ দেখতে আসেন, ছবি তোলেন এবং আমাকে এই কাজটি করার জন্য প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, অন্য সফলের তুলনায় সূর্যমুখির উৎপাদন অনেক সহজ, পোকা-মাকড়ের কোন আক্রমণ নেই।
সূর্যমুখি চাষ স›দ্বীপের কৃষি বিভাগের জন্য নতুন সম্ভাবনা উল্লেখ করে আজিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ বলেন, মাঈন উদ্দীন রাস্তা সংলগ্ন জমিতে এ ফসলের চাষ করে আজিমপুরের প্রাকৃতিক শোভাবর্ধন করেছে। সকল পথিক আসা যাওয়ার সময় মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকান। হাঁট-বাজারসহ সর্বত্র এ নিয়ে চলছে আলোচনা-গল্প।
জানা গেছে, আজিমপুর ইউনিয়নের মো. মাঈন উদ্দীন(১) ৩০ শতাংশ, মাঈন উদ্দীন (২) ২০ শতাংশ, মুছাপুর ৭ নং ওয়ার্ডের মুরাদ ফকির বাড়ির আবুল কাসেম ২৮ শতাংশ, আব্দুর রহমান ৪০ শতাংশ, দিদারুল আলম ২৫ শতাংশ ও কালাপানিয়ার জসিম ৩০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন।
তারা জানান, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রিকল প্রজেক্ট এসডিআই থেকে বিনামূল্যে বীজ, চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং নগদ অর্থ পেয়ে সূর্যমুখি চাষ করে সফলতা পাওয়া গেছে।