সন্দ্বীপে ‘পূরবী সেভিংস’ এর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ

57

রশীদবিহীন জোরপূর্বক টাকা আদায়সহ ঋণ আদায়ে গ্রাহকদের ওপর চাপ, হামলা ও মামলার অভিযোগ উঠেছে স›দ্বীপের পূরবী সেভিংস মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সভাপতি সেলিমের বিরুদ্ধে। মাসিক ঋণের টাকা পরিশোধের নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হতে না হতে বাড়িতে গিয়ে ঋণ গ্রহণকারী পরিবারের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এমনকি মারধর করে রশিদবিহীন মোটা অংকের বিলম্ব ফি আদায় করারও অভিযোগ উঠেছে ওই সভাপতির বিরুদ্ধে। সন্দ্বীপ সারিকাইত ইউনিয়নের শিবের হাটে অবস্থিত পূরবী মাল্টিপারপাসটি ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে। প্রথম অবস্থায় গ্রাহকদের আশার বাণী শোনালেও দিন বাড়তে বাড়তে তাদের রূপ বদলায়। নানা টালবাহানায় খেটে খাওয়া মানুষদের কাছ থেকে টাকা আত্মসাতে মগ্ন থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ঋণগ্রহীতা মো. ইউনুছ আলী থেকে ৩০ হাজার টাকা লোনের বিপরীতে ৬৯ হাজার টাকা নেওয়ার পরও তার বকেয়া ৭ হাজার টাকার জন্যে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী।
ইউনুছ আলী বলেন, আমি খেটে খাওয়া প্রতিবন্ধী মানুষ। বিপদে পড়ে পূরবী থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিই। আমি সুদসহ
মোট ৬৯ হাজার টাকা পরিশোধ করার পরও আমার কাছ থেকে তারা ৭ হাজার টাকা পেত। আমি পূরবীকে বলি এ টাকা আমি পরিশোধ করব, একটু সময় দিন। কিন্তু আমাকে সময় না দিয়ে মারধর করে। পরে তারা ৭ হাজার টাকার জন্যে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আমাকে গ্রেপ্তার করিয়ে ৪ দিন জেল খাটায়। আমি ১০ হাজার টাকা মধ্যস্থতার মাধ্যমে জামিনে মুক্তি পাই।
অপরদিকে মাঈন উদ্দীন নামে অপর এক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, আমি পুরবী থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিই। ৬৩ হাজার টাকা পরিশোধ করি। সুদসহ বাকী ২৫ হাজার টাকা ৩ কিস্তিতে পরিশোধ করি। জমা দেয়ার সময় ভাউচার চাইলে তারা আমাকে বলে ভাউচার বই শেষ হয়ে গেছে। জমা দিয়ে যান আমরা লিখে রেখে দিব। আমি তাদের কথা বিশ্বাস না করে টাকা জমা দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করি। আমাকে তারা মামলার হুমকি প্রদান করে। বাধ্য হয়ে ভয়ে টাকা জমা দিই। কিন্তু পরে পূরবী এ জমা অস্বীকার করে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
অন্য আরেক ভুক্তভোগী গ্রাহক সুদর্শন চক্রবর্তী জানান, আমি পুরবীর সভাপতি সেলিমের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সোনালী সঞ্চয় থেকে ১ লক্ষ টাকা ঋণ নিই। আমি সব টাকা পরিশোধ করি। কিন্তু ২৫০০ টাকা আমার বকেয়া ছিল। এ টাকার জন্যে সে আমাকে মারধর করে এবং সরকার দলীয় লোকের হুমকি দেই।
এ বিষয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা সমবায় অফিসার মিন্টূ বড়ুয়া’র সাথে কথা হলে তিনি জানান, পূরবী সেভিংস মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড ডবলমুড়িং থেকে নিয়ন্ত্রিত। তাদের বিরুদ্ধে সন্দ্বীপে অনেক মৌখিক অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীরা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করলে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নিব।
এদিকে নানা অনিয়ম, অন্যায় ও মারধরের প্রসঙ্গে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা তার সাথে কথা বলতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়ে তাদের হেনস্তা করেন এবং বলেন আমি বক্তব্য দিব না। আপনারা সমবায় অফিস থেকে লিখিত নোটিশ আনেন। আর আমার ছেলে ও সাংবাদিকতা করে, কি সাংবাদিকতা শেখাবেন আমাকে? কিছু করতে পারবেন না আমার।
এ বিষয়ে সন্দ্বীপ থানাকে বিষয়টি অবহিত করলে সন্দ্বীপ থানার ওসি বশির আহম্মেদ খান পূরবীর সভাপতি’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
খেটে খাওয়া মানুষগুলোর দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে ঋণপ্রদান করে তা আদায় করতে গিয়ে করোনাকালীন এ দুঃসময়ে তাদের উপর এমন অমানবিক এহেন নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এখানকার সুশীল সমাজ।