সদস্য সংগ্রহের নতুন কৌশল জঙ্গিদের

51

নারী সদস্য সংগ্রহে নতুন কৌশল অবলম্বন করছে জঙ্গিরা। প্রথমে টার্গেট নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। পরিচয়, সম্পর্ক স্থাপন ও বিয়ে পুরো প্রক্রিয়ায় প্রেমিক হিসেবে একজন সুদর্শন পুরুষকে সামনে নিয়ে আসা হলেও পেছন একাধিক নারী জড়িত থাকে, যারা ধর্মভীরু নারীদের টার্গেট করে মোটিভেটেড করে ।
গতকাল মঙ্গলাবর র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লে. কর্নেল মো. এমরানুল হাসান এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, কারণ জঙ্গিরা নারী সদস্য বৃদ্ধি করতে চাচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ধর্মভীরু নারীদের টার্গেট করতো তারা। এরপর বিয়ের ফাঁদে ফেলে জঙ্গিবাদে জড়াতো সেই নারীকে। সম্প্রতি নাঈমা ও ফারুক নামের দুজনকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, দুই মাস আগে চট্টগ্রামের তরুণী সাফিয়া আক্তার তানজীর সঙ্গে ফেসবুকের একটি গ্রæপে কয়েকজন মেয়ের পরিচয় হয়, যাদের একজন নাঈমা। এই নাঈমার মাধ্যমে তানজীর পরিচয় হয় বরিশালের একটি স্কুলের শিক্ষকের সঙ্গে। তার নাম সহিফুল ওরফে সাইফ। এই সাইফের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিভিন্নভাবে তানজীকে উৎসাহিত করে নাঈমা। তানজীও সেই ফাঁদে পা দেয়। একপর্যায়ে ২৬ জুন সাইফকে বিয়ে করার জন্য নাঈমার সঙ্গে বাড়ি ছাড়ে তানজী। বাড়ি ছেড়ে বরিশালে পৌঁছানোর পর তানজীকে নাম পরিচয় গোপন করে নাঈমার বোন হিসেবে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেয় সাইফ। তানজীর বাবা-মায়ের নামের জায়গায় বসানো হয় নাঈমার বাবা-মায়ের নাম। এরইমধ্যে তানজীর সঙ্গে সাইফের বিয়েও হয়। এই সময়ের মধ্যে তানজীকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্নভাবে প্ররোচনা চালায় সাইফ ও নাঈমা।
এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে সাফিয়া আক্তার তানজী (২২) নামে এই তরুণী নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনায় ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-২-এর একটি টিম ৮ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বরিশালের একটি মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে তানজীকে উদ্ধার করে এবং গ্রেপ্তার করা হয় জান্নাতুল নাঈমাকে। তবে পালিয়ে যায় সাইফ। পরবর্তীতে নাঈমার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে মো. আফজাল হোসেনকে (২৩) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাঈমা ও আফজাল জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। তারা সদস্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিল। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
র‌্যাব-২-এর কোম্পানি কমান্ডার (ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-৩) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, নাঈমা ও আফজাল ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন নারীকে আনসার আল ইসলামের সদস্য করেছে। তাদের শনাক্ত করা ও পলাতক সাইফকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নাঈমাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, জান্নাতুল নাঈমা চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। ২০১৬ সাল থেকে সে নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আসছে। ফেসবুকের একটি গ্রæপে বিভিন্ন নারী সদস্যদের মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে সে আনসার আল ইসলাম জঙ্গি সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হয়। সে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মহিলা সদস্য বৃদ্ধিতে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
গ্রেপ্তার মো. আফজাল হোসেন সম্পর্কে র‌্যাব জানায়, সে দীর্ঘদিন ধরে আনসার আল ইসলাম-এর সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে রাজধানী ঢাকার নিকটস্থ একটি এলাকার স্থানীয় সংগঠক। জিজ্ঞাসাবাদে সে সংগঠনের নির্দেশনা অনুসারে মহিলা সদস্যদের দলে অন্তর্ভুক্তিসহ নারী সদস্যদের দ্বারা নাশকতা পরিকল্পনার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।