সদস্যদের চাঁদায় চলে হিযবুত তাহরীর

151

চরম অর্থ সংকটে জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর। আপাতত নেতা-কর্মীদের চাঁদার টাকায় কার্যক্রম চলছে। দেশীয় অর্থ যোগানদাতারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বিদেশ থেকে মাঝে মধ্যে আসলেও তাও সীমিত। তবে তারা কিছু কিছু ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া হিযবুত তাহরীরের আঞ্চলিক কমান্ডার ও অন্যদের পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
জানা যায়, গত ১৫ নভেম্বর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর ১৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদের মধ্যে নামকরা একটি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষক আবুল মোহাম্মদ এরশাদুল আলম হিযবুত তাহরীর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমান্ডার। এছাড়া আব্দুল্লাহ আল মাহফুজও শীর্ষ পর্যায়ের নেতা।
শীর্ষ নেতা এরশাদুল আলম ও মাহফুজকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে নানা তথ্য দেন তারা।
সিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ মো. আবদুর রউফ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। তারা অর্থ সংকট মেটাতে ব্যবসা বাণিজ্য করার কথাও জানিয়েছে। তবে আয়ের মূল উৎস সদস্যদের চাঁদা বলে তারা স্বীকার করেছেন। প্রতি সদস্য এক থেকে দেড় হাজার টাকা করে চাঁদা দেয় বলে জানিয়েছেন শীর্ষ দুই জঙ্গি নেতা।
গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করেছেন, নগরজুড়ে হিযবুতের বেশ কিছু ইউনিট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে সদস্য সংখ্যাও ২০-২৫ জন বা তারও বেশি। প্রতি ইউনিটে একজন ইউনিট প্রধান বা দলনেতা থাকেন। দলনেতা প্রতি সদস্য থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করেন। কোনো কোনো সময় আকস্মিক চাঁদাও আদায় করেন তারা। চাঁদা আদায়ের পর খরচের জন্য কিছু রেখে বাকি টাকা শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে শুধু সদস্য নয়, তাদের শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকেও চাঁদা নেন তারা।
এডিসি আবদুর রউফ জানান, চাঁদার টাকার উপর ভরসা করে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলে। এর বাইরে কেউ কেউ ব্যবসাও করে। বিশেষ করে ইন্টারনেট, ফটোকপি দোকানের ব্যবসা করে থাকে তারা।
এধরনের একটি ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের খোঁজও পেয়েছে পুলিশ। চান্দগাঁও থানার কানেক্টিং রোড সংলগ্ন একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় এ প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা আবদুর রউফ বলেন, ব্রড ব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার জন্য একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলে তারা। সেখান থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করত। নগরীতে আরো কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের। সেগুলোর খোঁজও নেয়া হচ্ছে।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানান, দেশীয় অর্থযোগানদাতারা তাদের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সরকারের কঠোর নজরদারির কারণে কেউ তাদের অর্থ দিতে চায় না। সবাই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেছে। তাই দেশে কোনো ডোনার আপাতত তাদের নেই। তবে বিদেশ থেকে মাঝে মধ্যে টাকা আসে বলে তারা পুলিশকে জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আবদুর রউফ জানান, তাদের আয়ের উৎস সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোন কোন খাত থেকে টাকা আসে তা বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জানা যায়, প্রথমে তিন দিনের রিমিান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মাহফুজকে। মঙ্গলবার আদালতে তোলার পর মহানগর হাকিম সরোয়ার জাহান আবারো আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, হিযবুত তাহরীরের শীর্ষ দু’নেতার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাতে নতুন তথ্য মিলবে বলে আমরা করি।
আন্তর্জাতিক ইসলামী সংগঠন হিসেবে পরিচিত হিযবুত তাহরীরের প্রতিষ্ঠা ১৯৫৩ সালে জেরুজালেমে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতার নাম তকিউদ্দিন আল নাভানী। এই সংগঠনটি ইসলামী খিলাফত কায়েমে বিশ্বাসী।
বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রম শুরু হয় ২০০০ সালের দিকে। ২০০৯ সালের অক্টোবরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে নিষিদ্ধ হলেও ১০ বছর ধরে দলীয় কার্যক্রম গোপনে হলেও চালিয়ে যাচ্ছে তারা।