সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৪-১৮৮৯)

21

সাংবাদিক, লেখক, পন্ডিত। পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার কাঁঠালপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। একজন স্বশিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে তিনি ইংরেজি সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও আইনে বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার তাঁকে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ করে। পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন পূর্ববর্তী স্বদেশী ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটদের একজন। তাঁর অনুজ সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। কিন্তু উপনিবেশিক শাসনের আমলাতান্ত্রিক বৈষম্য সঞ্জীবচন্দ্রের স্বভাববিরুদ্ধ হওয়ায় নিয়োগ প্রাপ্তির এক বছরের মধ্যেই তিনি চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন।
চাকরি ছাড়ার পর সঞ্জীবচন্দ্র সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। প্রথমে তিনি বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা ভ্রমর (১৮৭৪) সম্পাদনা করেন। অতঃপর তিনি বঙ্গদর্শন-এর সম্পাদক (১৮৭৭-৮২) হিসেবে যোগ দেন। প্রথম পর্বের বাঙালি ঐতিহাসিক গবেষকদের মধ্যে সঞ্জীবচন্দ্রকে একজন বলে মনে করা হয়। তাঁর ঐতিহাসিক গবেষণাকর্ম জাল প্রতাপচাঁদ (১৮৮৩)-এর বিষয় ও গদ্যরীতি তাঁকে সমসাময়িক সাহিত্যিকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় করে তোলে। সঞ্জীবচন্দ্রের সর্বোত্তম সাহিত্যকর্ম হলো পালামৌ (১৮৮০-৮২)। এটি একটি ভ্রমণকাহিনী। এতে তিনি ছোটনাগপুরের প্রাকৃতিক পরিবেশ, আরণ্যক মানুষ ও পশুপাখির প্রাণবন্ত বর্ণনা দিয়েছেন। বাংলা ভাষায় সাহিত্য পদবাচ্য ভ্রমণকাহিনী হিসেবে পালামৌই প্রথম। কথিত হয় যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এটি পাঠ করে ভ্রমণে উৎসাহিত হয়েছিলেন।
সঞ্জীবচন্দ্র Bengal Ryots: Their Rights and Liabilities (1864) গ্রন্থে উপনিবেশিক শাসনের অধীনে বাংলার কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির ধ্বংসাত্মক ধারাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কীভাবে কৃষক-অধিকার পর্যুদস্ত করেছিল তা তিনি এ গ্রন্থে তুলে ধরেন। ইবহমধষ জুড়ঃং-এর দৃষ্টান্তেই রেন্ট কমিশন (১৮৮২)-এর রিপোর্ট বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন (১৮৮৫) হিসেবে কার্যকর হয়। সঞ্জীবচন্দ্রের প্রতিভার বিকাশ ঘটেছিল বিলম্বে, তাই তাঁর রচনার পরিমাণ স্বল্প। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনা হলো: যাত্রা সমালোচনা (১৮৭৫), কণ্ঠমালা (১৮৭৭), রামেশ্বরের অদৃষ্ট (১৮৭৭), মাধবীলতা (১৮৮৫), দামিনী, সৎকার, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি। সূত্র: বাংলাপিডিয়া